Blood Donation Camp

ঘাটতি মোকাবিলায় রক্তদান শিবির সন্ধ্যাতেও

দিব্যি চলছিল। কিন্তু আচমকা সরকারি নির্দেশ হাতে পেয়ে মাথায় যেন বাজ ভেঙে পড়েছে। এ বার থেকে সূর্যাস্তের পরেও রক্তদান শিবির থেকে রক্ত সংগ্রহে যেতে হবে— নির্দেশ স্বাস্থ্য ভবনের।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৭ ০৩:২৭
Share:

দিব্যি চলছিল। কিন্তু আচমকা সরকারি নির্দেশ হাতে পেয়ে মাথায় যেন বাজ ভেঙে পড়েছে। এ বার থেকে সূর্যাস্তের পরেও রক্তদান শিবির থেকে রক্ত সংগ্রহে যেতে হবে— নির্দেশ স্বাস্থ্য ভবনের।

Advertisement

বিকেলের পরে রক্তদান শিবির করা যাবে না, রাজ্যে এমন একটা অলিখিত ব্যবস্থা চালু আছে বহু বছর ধরে। কেন করা যাবে না? ব্লাডব্যাঙ্কগুলির বক্তব্য, বিকেলের পরে রক্তদান করলে শরীরে নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে। যদিও রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত লোকজনের দাবি, এই বক্তব্যের কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। প্রশাসনের একটি বড় অংশও এমনটাই মনে করে।

স্বাস্থ্য ভবনের কর্তাদের একাংশের মতে, দিনের মতো রাতেও রক্তদান শিবিরে যেতে হলে যে-পরিকাঠামো থাকা দরকার, তা নেই। তা ছাড়া ১০-৫টার বাঁধা নিয়মের পরে কেউই বাড়তি কাজ করতে রাজি নয়। সেই জন্যই বিকেলের পরে রক্তদান শিবির বা রক্ত সংগ্রহ করা চলবে না, এমন একটা তত্ত্ব ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

কিন্তু সরকার এখন রাতেও রক্তদান শিবির করতে চাইছে কেন?

আরও পড়ুন: হেফাজতে নিয়েই কি নারদ তদন্ত

রাজ্য রক্তসঞ্চালন পর্ষদের সচিব তথা রাজ্য এড্‌স নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থার নতুন প্রকল্প অধিকর্তা সৌমিত্র মোহন বলেন, ‘‘বিকেলের পরে রক্তদান শিবির না-করার কোনও কারণ নেই। সরকারি সময় বলে কিছু হয় না। গরমে দিনের বেলা প্রচণ্ড তাপে অনেকেই শিবির করতে চায় না। তাই সন্ধ্যায় শিবির করতে হবে।’’

প্রশাসনের একটি অংশ অবশ্য বলছে, বামফ্রন্টের আমলে শাসক দলের ছাত্র-যুব সংগঠন পাড়ায় পাড়ায় নিয়মিত রক্তদান শিবির করত। এখন শিবিরের সংখ্যা অনেক কমেছে। তাই বিশেষত গরমকালে রক্তের টান পড়ছে ব্লাডব্যাঙ্কগুলিতে। সেই ঘাটতি মেটাতেই সন্ধ্যার পরে শিবির করতে বলা হচ্ছে।

কিন্তু স্বাস্থ্য ভবন এমন নির্দেশ জারি করার পরেই ক্ষোভ ছড়িয়েছে ব্লাডব্যাঙ্কগুলিতে। যেমন, নীলরতন মেডিক্যাল কলেজের ব্লাডব্যাঙ্কের এক কর্তা বলেছেন, ‘‘সন্ধ্যা কেন, রাত ২টোতেও শিবির করতে পারি। কিন্তু তার জন্য দফতরকে যথেষ্ট টেকনিশিয়ান, ডাক্তার, নার্স আর গাড়ি দিতে হবে।’’ অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, ব্লাডব্যাঙ্কের কর্মীরা কি দুই শিফটে কাজ করবেন?

সৌমিত্রমোহনের জারি করা নির্দেশে বলা হয়েছে, কোনও কারণে সন্ধ্যার শিবিরে যেতে না-পারলে বিকল্প ব্যবস্থা করে দিতে হবে সংশ্লিষ্ট ব্লাডব্যাঙ্কের কর্তৃপক্ষকেই। অর্থাৎ অন্য কোনও ব্লাডব্যাঙ্ককে ওই শিবিরে যেতে রাজি
করাতে হবে।

কিন্তু এমন কড়া নির্দেশের পরেও রাতের শিবির এড়ানোর নানা পন্থা রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। জাতীয় এড্‌স নিয়ন্ত্রণ সংস্থার অন্তর্গত রক্ত সঞ্চালন সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য অপূর্ব ঘোষের কটাক্ষ, ‘‘অধিকাংশ সরকারি ব্লাডব্যাঙ্ক দিনের বেলাতেই ৪০ কিলোমিটারের বেশি দূরে শিবির করতে যায় না। এরা করবে রাতের শিবির!’’ আর রক্ত আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত দীপঙ্কর মিত্র বলছেন, ‘‘সরকারি ব্লাডব্যাঙ্ক সন্ধ্যার শিবির হয়তো সরাসরি প্রত্যাখ্যান
করবে না। কিন্তু নানা অজুহাতে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement