মাহেশ্বরী সদনে বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টা থেকে শুরু হচ্ছে বিজেপির কর্মসমিতির বৈঠক। গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ।
জটিল হয়ে ওঠা পরিস্থিতি সামলে নিতে দ্রুত পদক্ষেপ করলেন দিলীপ ঘোষ। বিজেপির রাজ্য কর্মসমিতির সদস্য তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পরে অসন্তোষের ইঙ্গিত মিলেছিল শোভন চট্টোপাধ্যায়ের তরফ থেকে। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অসন্তোষ মিটিয়ে ফেলার বন্দোবস্ত করলেন রাজ্য সভাপতি দিলীপ। বৃহস্পতিবারের ভার্চুয়াল বৈঠকে যোগ দেওয়ার জন্য শোভনের পাশাপাশি আমন্ত্রণ জানানো হল বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। কিন্তু কর্মসমিতির সদস্যা না হয়েও বৈশাখী আমন্ত্রিত কেন? দিলীপ জানালেন, বৈশাখীকেও কর্মসমিতির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, আজই তা ঘোষণা হয়ে যাবে।
মঙ্গলবার অর্থাৎ ৮ সেপ্টেম্বর রাজ্য বিজেপির কর্মসমিতির তালিকা অনুমোদন করেছিলেন সভাপতি দিলীপ ঘোষ। আর সে দিন বিকেলে সাংবাদিক সম্মেলন করে সে কথা ঘোষণা করেছিলেন সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু। পদাধিকারী, স্থায়ী আমন্ত্রিত, বিশেষ আমন্ত্রিত মিলিয়ে সেই ২৩০ জনের তালিকায় নাম ছিল কলকাতার প্রাক্তন মেয়র তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়ের। দীর্ঘ দিন ধরে দলে থেকেও যাঁরা কোনও পদ বা দায়িত্ব পাচ্ছিলেন না, যেমন মুকুল রায়ের ছেলে তথা বীজপুরের বিধায়ক শুভরাংশু রায় বা যুবনেতা শঙ্কুদেব পন্ডা, তাঁদের নামও কর্মসমিতির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম সে তালিকায় দেখা যায়নি।
অতএব মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকেই অসন্তোষের আভাস মিলতে শুরু করে শোভন শিবির থেকে। বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে কোনও মন্তব্য সে দিন না করলেও শোভন ক্ষোভ গোপন করেননি। রাজ্য কমিটিতে অন্তর্ভুক্তির খবর তিনি সংবাদমাধ্যম থেকে জেনেছেন এবং এ বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কেউ কোনও আলোচনা করেননি— শোভন চট্টোপাধ্যায় এই কথাই সে দিন বলেছিলেন।
শোভনের আসল ক্ষোভ যে ছিল বৈশাখীর অন্তর্ভুক্তি না হওয়া নিয়ে, তা ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছিল। বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্তর্ভুক্তি না হলে তাঁর পক্ষে সক্রিয় হওয়া আদৌ সম্ভব নয়, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে সেই বার্তা বিজেপি নেতৃত্বের কাছে পৌঁছে দিয়ে শোভন ক্রমশ চাপ বাড়াচ্ছিলেন বলেও খবর। বিজেপি নেতৃত্ব কিন্তু এ বার আর টানাপড়েন বাড়ানোর পথে হাঁটলেন না। জটিলতা কাটানোর লক্ষ্যে পদক্ষেপ করলেন ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই। মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে শোভনের ক্ষোভের আঁচ মিলতে শুরু করেছিল। বুধবার রাতের মধ্যেই শোভনের পাশাপাশি বৈশাখীর কাছেও পৌঁছে গেল বিজেপির রাজ্য কর্মসমিতি বৈঠকে যোগ দেওয়ার ভার্চুয়াল লিঙ্ক।
মাহেশ্বরী সদনে বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টা থেকে শুরু হচ্ছে বিজেপির কর্মসমিতির বৈঠক। সবাইকে অবশ্য মাহেশ্বরী সদনে উপস্থিত হতে বলা হয়নি। করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে অধিকাংশকেই বলা হয়েছে ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে বাড়ি থেকেই বৈঠকে যোগ দিতে। দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নড্ডাও দিল্লি থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে বৈঠকে ভাষণ দিচ্ছেন। শোভনকেও ভার্চুয়াল বৈঠকের লিঙ্ক পাঠানো হয়েছে বিজেপির কল সেন্টার থেকে। পাঠানো হয়েছে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কেও।
আরও পড়ুন: ভোটের আগে বাংলায় দায়িত্ব ফের অধীরকেই দিল কংগ্রেস
শোভন না হয় কর্মসমিতির সদস্য, বৈশাখী তো নন। তা হলে কেন বৈশাখীকেও বৈঠকের লিঙ্ক পাঠানো হল? এ প্রশ্নের জবাবে বৃহস্পতিবার সকালে রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ আনন্দবাজার ডিজিটালকে বলেছেন, ‘‘বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কেও কর্মসমিতির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে’’ কিন্তু মঙ্গলবার প্রকাশিত তালিকায় তো বৈশাখীর নাম ছিল না। দিলীপ বলেন, ‘‘অধিকাংশ নাম ঘোষণা হয়েছিল। কয়েকটা হয়নি। সেগুলো আজই ঘোষণা হয়ে যাবে।’’
শোভন চট্টোপাধ্যায় এই ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে এ দিন কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় স্বীকার করেছেন যে, তাঁর কাছে বৈঠকে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ ও লিঙ্ক পৌঁছেছে। তিনি এবং শোভন কি তা হলে এ দিনের বৈঠকে যোগ দিচ্ছেন? বৈশাখী আনন্দবাজার ডিজিটালকে বলেন, ‘‘আমার কাছে তো শুধু একটা আমন্ত্রণ এবং একটা লিঙ্ক এসেছে কল সেন্টার থেকে। নেতৃত্বের সঙ্গে তো এ বিষয়ে আমার কোনও কথা এখনও হয়নি। তাই নেতৃত্বের স্পষ্ট নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত বৈঠকে যোগ দেওয়া উচিত হবে কি না, বুঝতে পারছি না।’’
২০২০ শেষ হওয়ার পথে। ২০২১ শুরু হলেই নির্বাচনের দামামা উত্তুঙ্গে বাজতে শুরু করবে। এই পর্যায়ে এসে নিজের ঘর যে আর একেবারেই অগোছালো রাখতে চাইছে না বিজেপি, এই তৎপরতাতে তা অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে গেল। শোভন চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে টানাপড়েন এক বছর ধরে চলছে বিজেপিতে। ফলে দলে যোগ দিয়েও শোভন সক্রিয় হননি। কিন্তু সে পরিস্থিতি বিজেপি আর জিইয়ে রাখতে চাইছে না। তাই রাজ্য কর্মসমিতিতে শোভনের অন্তর্ভুক্তি ঘোষণা হয়েছিল মঙ্গলবারই। এ বার বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কেও রাজ্য কর্মসমিতিতে শামিল করে নেওয়া হল। শোভন চট্টোপাধ্যায় এ বার সক্রিয় হবেন বলেই বিজেপি নেতৃত্ব আশা করছেন।
আরও পড়ুন: সমান মূল বেতন পাবেন আংশিক সময়ের শিক্ষকও