(বাঁ দিকে) সুকান্ত মজুমদার এবং মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজের’ নামে যে নবান্ন অভিযানের ডাক দেওয়া হয়েছে, তাতে ‘প্রচ্ছন্ন ভাবে’ সব প্রস্তুতি রাখছে বিজেপি। দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার রবিবার ফের বুঝিয়ে দিয়েছেন, আন্দোলনকারীদের যা-যা সহযোগিতা লাগবে, তা বিজেপি দেবে। কিন্তু দল সরাসরি এই কর্মসূচিতে যোগ দেবে না। যদিও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ফের ইঙ্গিত, রাজনৈতিক রং সরিয়ে রেখে তিনি কাল, মঙ্গলবার অভিযানে যেতে পারেন। সেই সঙ্গে পতাকা ছাড়া এই অভিযানে বামেদের ছাত্র-যুবরা শামিল হবে না জানানোর পরে সিপিএমকেও আক্রমণ করেছেন শুভেন্দু। পাল্টা আবার বিজেপি, আরএসএস-এর রাজনৈতিক অভিসন্ধি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সিপিএমের যুবনেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত এ দিন ফের দলের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়ে বলেন, “বিজেপি সংগঠন হিসেবে ওই কর্মসূচিতে যোগ দেবে না। কিন্তু আমাদের পিছন থেকে সমর্থন রয়েছে। আমরা প্রয়োজনে অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে অপেক্ষা করব।” শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে স্মরণ করে তাঁর সংযোজন: “তিনি (শ্যামাপ্রসাদ) বলেছিলেন, অন্যায় হলে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ করতে হবে। প্রয়োজনে নাও প্রতিশোধ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, আপনাকে হুঁশিয়ারি দিচ্ছি যদি ওই দিন ছাত্রদের উপরে কোনও বর্বরতা, পুলিশি অত্যাচার হয়, তা হলে ওই পথে আমরা সরকারকে বুঝে নেব!” বিজেপি সূত্রে দাবি, এই কর্মসূচিতে ‘নজর’ রাখা হচ্ছে, ‘প্রচ্ছন্ন ভাবে’ সব প্রস্তুতি এবং পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে।
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু আগেই নবান্ন অভিযানে ‘ব্যক্তিগত’ ভাবে থাকার কথা জানিয়েছিলেন। কর্মসূচি নিয়ে দল অবস্থান স্পষ্ট করেছে জানিয়েও তিনি এ দিন বলেছেন, “চিকিৎসক বোনের সরকারি ধর্ষণের প্রতিবাদে যে কোনও কর্মসূচিতে যেতে বিজেপি তাদের কর্মী-সমর্থকদের বাধা দেবে না। অরাজনৈতিক মিছিলে কে থাকবেন, কে যাবেন, সেটা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। এই নিয়ে কাউকে জবাবদিহি করব না। কারও পরামর্শ শুনব না!” সেই সঙ্গে বামেদের তোপ দেগে তিনি বলেছেন, “সিপিএম চায়, এই সরকারটা থাক। কিন্তু বিজেপি চায় ধর্ষকদের কঠোরতম শাস্তি। দাবি এক, দফা এক মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ!” প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী ওই নবান্ন অভিযানে ‘দরকারে যাব’ বলে মন্তব্য করলেও দলের অন্য অনেক নেতাই অবশ্য বকলমে বিজেপির ডাকে শামিল হওয়ার কোনও কারণ দেখছেন না।
শুভেন্দুদের ‘উদ্যোগে’র প্রেক্ষিতে পাল্টা সরব হয়েছেন সিপিএমের যুবনেত্রী মীনাক্ষী। বিজেপি-আরএসএসের অভিসন্ধি নিয়ে প্রশ্ন তুলে ডিওয়াইএফআই-এর রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষীর বক্তব্য, “বিরোধী দলনেতা কর্মসূচিকে সমর্থন জানিয়েছেন। কর্মসূচির উদ্যোক্তারা আমার নাম ব্যবহার করে প্রচার করেছেন। এটা চরম অনৈতিক কাজ। ধিক্কার জানাচ্ছি। এটা বিরাট লড়াইকে ভাঙার জন্য বিভ্রান্তি তৈরির অপচেষ্টা।” এই নবান্ন অভিযানের সঙ্গে দলের ছাত্র, যুব, মহিলা সংগঠনের কোনও যোগাযোগ নেই বলেও স্পষ্ট করে দিয়েছেন মীনাক্ষী। সেই সঙ্গে তাঁর আর্জি, “আরএসএস, ভিএইচপি, ছাত্র সমাজের ফাঁদে পা দেবেন না।” আর জি কর-কাণ্ডের বিচার চেয়ে নবান্ন অভিযানের দিনেই, ডিওয়াইএফআই, এসএফআই, মহিলা সমিতির ডাকে রাজ্য জুড়ে জেলায় জেলায় প্রতিবাদ কর্মসূচির কথাও জানিয়েছেন মীনাক্ষী। যাদবপুরে এ দিনই ওই তিন সংগঠনের ধর্না-প্রতিবাদে গিয়েছিলেন তিনি এবং ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সভাপতি ধ্রুবজ্যোতি সাহা।