কৃষ্ণনগরে জয়প্রকাশ মজুমদার। নিজস্ব চিত্র
জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) নিয়ে প্রচারই যে তাঁরা করিমপুর উপ-নির্বাচনে হাতিয়ার করতে চলেছেন, সোমবার কৃষ্ণনগরে সাংবাদিক সম্মেলনে তা কার্যত স্পষ্ট করে দিলেন বিজেপি প্রার্থী জয়প্রকাশ মজুমদার।
জয়প্রকাশ দাবি করেন, এনআরসি নিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। অসমে এনআরসি-র ফলে যে সব জায়গায় বেশি প্রভাব পড়েছে, সর্বত্র বিজেপি জিতেছে। অসমে এনআরসি-র মূলে যে ১৯৮৫ সালের চুক্তি তা-ও মনে করিয়ে দিতে ভোলেননি এই প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা। পাশাপাশি, তৃণমূলকে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
তবে অসমে যে এনআরসি করে ‘অনুপ্রবেশকারী’ চিহ্নিত করতে গিয়ে ১২ লক্ষ হিন্দুর নামও তালিকায় ঢুকে গিয়েছে, তা বিলকুল মাথায় রয়েছে বিজেপি নেতাদের। জয়প্রকাশের ব্যাখ্যা, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল আনা হয়েছে সংসদে। আনআরসি কবে হবে, কী ভাবে হবে তা ঠিক হয়নি। অসমের সঙ্গে অন্য জায়গার এনআরসি মেলানো ঠিক হবে না। তিনি বলেন, ‘‘নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের পক্ষে তৃণমূল আছে কি না তা স্পষ্ট করুক। আমরা মানুষকে বলব, বিলে যে হিন্দুরা রক্ষাকবচ পাবে তা সমর্থন করেন কি না তৃণমূল নেতাদের সেই প্রশ্ন করুন।’’
বিজেপির চেনা সুরেই জয়প্রকাশ এ দিন দাবি করেন, যাঁরা ও পার থেকে এসেছেন সেই উদ্বাস্তু, শরণার্থী বা মতুয়াদের ভয় দেখিয়ে ভোটব্যাঙ্ক করে রাজনীতি করার চেষ্টা করছে তৃণমূল। সেই সঙ্গে এক সম্প্রদায়ের মানুষকে নিশানা করে বিভেদের তাসও খেলার চেষ্টা করেছেন। জয়প্রকাশের দাবি, ‘‘অনুপ্রবেশকারীদের দেশ আলাদা। আমাদের দেশে তাঁরা এসেছেন রুটি-রুজি ভাগ করে নেওয়ার জন্য। এ দেশের মুসলমান ও হিন্দু ভাইবোনদের রুটিরুজি ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য।’’
জয়প্রকাশের কটাক্ষ, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০০৫ সালে যাদের অনুপ্রবেশকারী বলেছিলেন, ক্ষমতায় এসে তাদের চিহ্নিত করা তো দূরের কথা, তাদেরই লালনপালন করেছেন। আমরা চাই, এদের চিহ্নিতকরণ এবং সসম্মানে নিজের দেশে পাঠিয়ে দেওয়া।’’ যদিও সত্যি যদি কোনও অনুপ্রবেশকারী থেকে থাকেন, তাঁর ছেড়ে আসা দেশ তাঁকে ফিরিয়ে নিতে রাজি হবে কি না, রাজি না হলে কী হবে, সেই সব জটিল প্রশ্নে জয়প্রকাশ আর যাননি।
গত বিধানসভা এবং লোকসভা নির্বাচনের ফলের নিরিখে করিমপুর কেন্দ্রে বিজেপি বড় ব্যবধানে পিছিয়ে আছে। সেই ব্যবধান ঘোচানো যে খুব সহজ নয়, তা ঘনিষ্ঠ মহলে বিজেপি নেতারাও মানছেন। আবার ২০১৬ থেকে গত তিন বছরে তৃণমূল আমলে এখানে যতটুকু যা কাজ হয়েছে, আগে তা-ও হয়নি। ফলে অনুন্নয়নের দাবিও বিশেষ কল্কে পাবে না। ফলে সরাসরি এনআরসি-র ধুয়ো তুলে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করা ছাড়া বিজেপির সামনে রাস্তা বিশেষ খোলা নেই বলে মনে করছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
এখনও পর্যন্ত যা দেখা যাচ্ছে তাতে অনেকেই মনে করছেন, নতুন প্রার্থী বিমলেন্দু সিংহ রায়কে সামনে রেখে আসলে লড়াইটা লড়ছেন করিমপুরের প্রাক্তন বিধায়ক তথা তৃণমূলের কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি মহুয়া মৈত্র। সেই প্রসঙ্গ উড়িয়ে দিয়ে জয়প্রকাশের দাবি, ‘‘আমরা দল দেখি। রাজনীতিতে ব্যক্তির বিশেষ ভূমিকা আছে বলে বিজেপি মনে করে না। তৃণমূলের তো দাদাভিত্তিক রাজনীতি, ওরা মনে করতে পারে!’’