পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে ভরাডুবির পরে এখন থেকেই লোকসভা ভোটের প্রস্তুতি শুরু করে দিল বিজেপি। সামনেই উত্তরপ্রদেশ-সহ একাধিক রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে। বাংলাতেও পুরসভা ও পঞ্চায়েত ভোট রয়েছে। কিন্তু সে সবের আগে এখন থেকেই ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের দিকে নজর বিজেপি-র। এর জন্য বিজেপি-র সর্বস্তরের নেতা কর্মীদের জন্য প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। প্রশিক্ষণ নিতে হবে রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ থেকে শুরু করে একেবারে মণ্ডল (শহর) স্তরের নেতাদের।
গেরুয়া শিবির সূত্রে জানা গিয়েছে, সাত সপ্তাহ ধরে এই প্রশিক্ষণ চলবে। এ জন্য কেন্দ্রীয় ভাবে সাতটি বিষয়ও ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। যাকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাত মন্ত্র বলেই মনে করছেন রাজ্য বিজেপি-র নেতারা।
বিধানসভা নির্বাচনে ২০০ পার করার স্বপ্ন দেখলেও ৭৭-এ আটকে যায় বিজেপি। গত লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় বিজেপি ১৮ আসনে জয় পাওয়ায় সেই ফলের নিরিখে দল এগিয়ে ছিল ১২১ বিধানসভা এলাকায়। আর এখন বিধানসভা ভোটের ফল অনুযায়ী বিজেপি-র দখলে থাকতে পারে মাত্র ৯টি আসন। যা দলের পক্ষে অত্যন্ত হতাশাজনক।
হিসেব বলছে, রাজ্যের দুই মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়, দেবশ্রী চৌধুরী এবং রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের আসনেই পিছিয়ে বিজেপি। এই পরিস্থিতিতে এখন থেকেই লোকসভা নির্বাচনের জন্য তৈরি হচ্ছে বাংলা বিজেপি।
এই তৈরি হওয়ার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে একেবারে পিরামিড পদ্ধতিতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হয়েছে। সপ্তাহে একদিন করে এক জন কেন্দ্রীয় নেতা রাজ্য নেতৃত্বকে প্রশিক্ষণ দেবেন। পর পর সাত সপ্তাহ প্রতি রবিবার হবে সেই ভার্য়ুচাল প্রশিক্ষণ বৈঠক। দেড় ঘণ্টার ক্লাসে অংশ নেবেন রাজ্যের সব পদাধিকারী, সব সাংসদ এবং জেলা সভাপতিরা। যে বিষয়ে প্রশিক্ষণ হবে সেটা পরের বুধবারেই রাজ্যের কোনও এক নেতা জেলা পদাধিকারী, বিধায়ক এবং মণ্ডল সভাপতিদের শেখাবেন। সেই একই বিষয়ে জেলার নেতারা পরের শনিবার মণ্ডল পদাধিকারীদের প্রশিক্ষণ দেবেন।
সাত সপ্তাহে সাত বিষয়ে প্রশিক্ষণ শেষ হবে আগামী অগস্টে। ইতিমধ্যেই একটি বিষয় নিয়ে সব স্তরে পৌঁছেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। কেন্দ্রীয় ভাবে ঠিক করা বিষয়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে মোদী সরকারের কৃষি নীতিকে। বিষয়ের নাম দেওয়া হয়েছে, কৃষি ক্ষেত্রে সংশোধন ও সাফল্য। তবে প্রথম সপ্তাহের বিষয়, সাত বছরের মোদী সরকারের সাফল্য। তারও আবার দু’টি ভাগ রয়েছে— মৌলিক সাফল্য ও বৈচারিক সাফল্য। এ ছাড়াও প্রশিক্ষণের বিষয়ের মধ্যে রয়েছে, জাতীয় সুরক্ষা, বিদেশ নীতি, আত্মনির্ভর ভারতের সঙ্কল্প, কেন্দ্রীয় গরিব কল্যাণ প্রকল্প। সপ্তম বিষয়টি হল দলের প্রতিষ্ঠাতা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের জীবন ও ভাবনা।
গেরুয়া শিবির সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু বাংলাতেই নয়, গোটা দেশেই মোদী সরকারের সাফল্য তুলে ধরেই আগামী লোকসভা নির্বাচনের লড়াইয়ের প্রস্তুতি শুরু হচ্ছে। সেই লক্ষ্যেই প্রথমে সর্বস্তরের দলীয় নেতাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ায় উদ্যোগী হয়েছে বিজেপি। দলের মধ্যে সাত সপ্তাহের কোর্স শেষ হলে তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে যাবে দল।