রবিবার দুপুরে দুবরাজপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র।
কেন করব বিজেপি, দলের সদস্যদের তা বোঝাতে প্রয়োজন দক্ষ কর্মকর্তা। যারা বিজেপি-র আদর্শগত দিক সুচারু ভাবে তুলে ধরবেন সদস্যদের সামনে। সেই লক্ষ্যেই রবিবার জেলার সাংগঠনিক কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালা করল বিজেপি।
বীরভূমের রাজনীতিতে হঠাৎ করেই যেন ব্যাকফুটে চলে গিয়েছে বিজেপি। দলকে লড়াইয়ের ময়দানে ফেরাতেই বিজেপি-র এই উদ্যোগ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। আর তার জন্যই রবিবার দুবরাজপুরে মাড়োওয়াড়ি ধর্মশালায় নেতাদের জন্য ওই কর্মশালার আয়োজন করেছিল রাজ্য নেতৃত্ব। বিজেপি-র ইতিহাস কী, কার্য পদ্ধতি কী, বিচারধারা বা দর্শন কী, দলের কাছে কোনগুলি চ্যালেঞ্জ, রাজ্যের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, কেন্দ্র সরকারের উল্লেখযোগ্য সাফল্য— এ দিনের আলোচনায় এই সব কিছুই উঠে এসেছে।
কর্মশালায় জেলার ১৯টি ব্লকের ১৯টি মণ্ডল এবং ছ’টি শহরের মোট ২৫টি ব্লক বা মণ্ডলের প্রতিটির সভাপতি, দু’জন করে সাধারণ সম্পাদক এবং এক জন প্রশিক্ষণ প্রমুখ যোগ দিয়েছিলেন। শিবিরে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিজেপি-র নেতারাও। বক্তা হিসাবে ছিলেন দলের রাজ্য সহ-সভাপতি সুভাষ সরকার, জেলা অবজার্ভার রামকৃষ্ণ পাল। তবে, দলের জেলা আহ্বায়ক অর্জুন সাহা বা প্রাক্তন জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডল, কাউকেই এ দিন উপস্থিতি থাকতে দেখা যায়নি। সুভাষবাবু বলেন, ‘‘২০১৪-’১৫ সালে রাজ্যে বিজেপি-র ৪৩ লক্ষ নতুন সদস্য হয়েছে। বীরভূমে এক লক্ষ ২০ হাজার। প্রাথমিক ভাবে অন্তত ১৫ লক্ষ বিজেপি কর্মীকে দলীয় আদর্শে শিক্ষিত করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। প্রদেশে এমন কর্মশালা হয়েছে। এ বার জেলায় জেলায় তা অনুষ্ঠিত হবে। বীরভূমের দুবরাজপুর দিয়েই তা শুরু হল। প্রশিক্ষিতেরা ব্লক ও অঞ্চল স্তরের সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেবেন।’’
ঘটনা হল, গত লোকসভা ভোটেও যে বিপুল জনসমর্থন বিজেপি-র সঙ্গে ছিল, রাজ্য জুড়েই তাতে অনেকখানি ভাটা পড়েছে। বামের জায়গায় কোথাও যেন প্রাধান বিরোধী শক্তি হিসাবে উঠে আসছিল বিজেপি। কিন্তু, সাম্প্রতিক অতীতে রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যে ইঙ্গিত দিচ্ছে, তাতে বিজেপি-র পালে হাওয়া অনেকটাই কমতে দেখা গিয়েছে। অন্য দিকে, বামেরা বিভিন্ন আন্দোলন-কর্মসূচির মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান মজবুত করছে। একই হাল বীরভূমেও।
যে বীরভূমকে নিজেদের সংগঠন ক্রমশ মজবুত করার লক্ষ্যে বিজেপি হাঁটছিল, গত পুরসভা ভোটের পরে তা অনেকটাই মুখ থুবড়ে পড়েছে। নির্বাচনের সময়ই দলীয় সংগঠনে ধস নামে। প্রাক্তন জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডলের পদত্যাগ, গোষ্ঠী কোন্দল থেকে বিজেপি ছেড়ে ফের তৃণমূলে যাওয়ার হিড়িক অব্যাহত। দিনদিন দুর্বল হচ্ছে সংগঠনের ভিত। এমনকী, বিজেপি-র জেলা নেতৃত্বও সেই সত্যতা অনেকটাই মানছে। এমন পরিস্থিতিতে এমন এই প্রশিক্ষণ তাদের হৃতশক্তি পুনরুদ্ধারে কতটা সক্ষম হবে? সুভাষবাবুর বক্তব্য, ‘‘বাংলার মানুষ লড়াই দেখতে ভালবাসেন। আমাদের বর্তমান অবস্থান সেই জায়গায় নেই বলে এমন একটা ধারণা হচ্ছে। রাস্তায় নেমে কিছু ইটপাটকেল ছুড়ে সিপিএম তাদের উপস্থিতি জানান দিয়েছেন মাত্র। এর বেশি কিছু নয়। কর্মীরা সঠিক ভাবে প্রশিক্ষিত হওয়ার পরেই রাজ্যের জনবিরোধী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়বেন।’’
ওই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিচুতলার কর্মী-সমর্থকদের কাছে দলের আদর্শ তুলে ধরে প্রচার করে সংগঠন মজবুত করাই তাদের মূল লক্ষ্য। নেতাদের প্রশ্ন করলে দলের নিচুতলার কর্মীরা যাতে দল সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন, ব্লকস্তরের পদাধিকারিকদের মধ্যে থেকে তেমন নেতাকেই মণ্ডল স্তরের প্রশিক্ষণ প্রমুখ নির্বাচিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলার মুখ্য প্রশিক্ষণ প্রমুখ তথা জেলা সাধারণ সম্পাদক রামকৃষ্ণ রায়। প্রশিক্ষণ শিবিরে যোগ দেওয়া রাজনগরের পল্টু ধীবর, দুবরাজপুরে জয়ন্ত আচার্য, সিউড়ির দীপক দাস, বোলপুর দিলীপ ঘোষ বা রামপুরহাটের শুভশিস চৌধুরীরা বলছেন, ‘‘প্রশিক্ষণ শিবির থেকে অনেক কিছু শিখলাম। দলের সদস্য ও নিচুতলার কর্মীদের বোঝাতে প্রভূত কাজে আসবে।’’