কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী নিরঞ্জন জ্যোতি (ডান দিকে)-র সঙ্গে দেখা করলেন শুভেন্দু অধিকারী (বাঁ দিকে)। — নিজস্ব চিত্র।
আগেই জানিয়েছিলেন। সেই মতো তৃণমূল প্রতিনিধি দলের আগে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী নিরঞ্জন জ্যোতির সঙ্গে দেখা করলেন পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর হাতে চিঠি তুলে দিয়ে অনুরোধ করলেন, ভুয়ো জব কার্ডের মাধ্যমে এ রাজ্যে কেন্দ্রীয় সরকারি অর্থের যে ‘তছরুপ’ হয়েছে, তার তদন্ত করুক কেন্দ্রীয় সংস্থা সিবিআই। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর বেরিয়ে তিনি জানালেন, ‘তছরুপ’-এর বিষয়ে যাবতীয় তথ্য তিনি তুলে দিয়েছেন। দুধ থেকে জল আলাদা করার প্রক্রিয়া যাতে শীঘ্রই চালু হয়, সেই অনুরোধই করেছেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জ্যোতির সঙ্গে সাক্ষাতের পর শুভেন্দু বলেন, ‘‘আমি যা তথ্য নিয়ে এসেছি, সব জমা দিয়েছি। কী ভাবে ভুয়ো কার্ডের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকারি অর্থ তছরুপ হয়েছে, তার বিষয়ে যাবতীয় তথ্য তুলে দিয়ে জানিয়েছি, দ্রুত যেন দুধ থেকে জল আলাদা করার প্রক্রিয়া চালু করা হয়।’’ এই সাক্ষাতের বিষয় নিজের এক্স (পূর্বতন টুইটার) হ্যান্ডলেও জানিয়েছেন শুভেন্দু। তিনি লিখেছেন, ‘‘মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী নিরঞ্জন জ্যোতির সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারি অর্থ তছরুপ নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধানেরা কী ভাবে পশ্চিমবঙ্গে মহাত্মা গান্ধী ন্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়মেন্ট আইনের অধীনে কাজ দেওয়ার নামে হাজার হাজার কোটি টাকা তছরুপ করেছে, তা জেনেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। রাজ্য সরকারের কর্মীদের ভূমিকাও আতশকাচের নীচে।’’ শুভেন্দু এ-ও জানিয়েছেন, এই বিষয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।
‘কেন্দ্রীয় বঞ্চনা’র অভিযোগ তুলে দিল্লিতে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে তৃণমূল। মঙ্গলবার এই অভিযোগ দিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জ্যোতির সঙ্গে দেখা করার কথা তৃণমূলের প্রতিনিধি দলের। তার আগে মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন শুভেন্দু। এই নিয়ে তিনি আগে বলেছিলেন, ‘‘যাঁরা জেনুইন (প্রকৃত) জব কার্ড হোল্ডার, তাঁদের নিয়ে তো আমাদের কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু আমি দিল্লিতে গিয়ে সুনিশ্চিত করব, ভুয়ো জব কার্ডে যাঁরা টাকা তুলছেন, তাঁরা যেন আইনের আওতায় আসেন। ২০১৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত যে পঞ্চায়েত প্রধানেরা ভুয়ো জব কার্ড ইস্যু করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও যেন আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’’
ভুয়ো জব কার্ড নিয়ে অবশ্য পাল্টা বক্তব্য রেখেছে তৃণমূলও। ১০০ দিনের কাজের জব কার্ড বাতিল করা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে আক্রমণ করে তারা। পরিসংখ্যান তুলে ধরে দাবি করা হয় অবিজেপিশাসিত রাজ্যগুলির প্রতি বিমাতৃসুলভ আচরণ করছে বিজেপিশাসিত কেন্দ্রীয় সরকার। সোমবার সন্ধ্যায় এক্স (পূর্বতন টুইটার) হ্যান্ডলে তৃণমূলের পক্ষে লেখা হয়েছে, “২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে উত্তরপ্রদেশে ৪৪ লক্ষ ৭৫ হাজার ৬৩৪টি মনরেগা জব কার্ড বাতিল করা হয়েছে। যা কিনা সংখ্যায় পশ্চিমবঙ্গের দ্বিগুণ। কিন্তু বিজেপিশাসিত ওই রাজ্যের কেন্দ্রীয় বরাদ্দ বন্ধ করে দেওয়া হয়নি। বন্ধ করা হয়েছে শুধু অবিজেপিশাসিত পশ্চিমবঙ্গের।” ওই একই টুইটে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে উদ্দেশ্য করে লেখা হয়েছে, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, নিজেদের কেউ দোষ করলে সেটা ধর্তব্যের মধ্যে পড়ে না, তাই না!” সোমবার তৃণমূলের কর্মসূচি চলাকালীনই কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী গিরিরাজ সিংহ তাঁর লোকসভা কেন্দ্র বিহারের বেগুসরাই থেকে সাংবাদিক সম্মেলন করেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘বাংলায় ১০০ দিনের কাজে যে পরিমাণ অনিয়ম হয়েছে, তার জন্য সিবিআই তদন্ত হওয়া উচিত।’’এ বার গিরিরাজের দফতরের প্রতিমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে সিবিআই তদন্তের দাবি তুললেন শুভেন্দু।