বিধানসভার গেটের বাইরে ঘুগনি, চা, ঝালমুড়ির দোকান বিজেপি বিধায়কদের।
বিধানসভার গেটের বাইরে ঘুগনি, চা, ঝালমুড়ির দোকান দিলেন বিজেপি বিধায়করা। পথচলতি মানুষ জনকে ডেকে ডেকে খাওয়ালেন নিজেদের হাতের তৈরি ঘুগনি। সঙ্গে মুড়ি। তার পরেই বিজেপি বিধায়কদের কটাক্ষ, প্রতিশ্রুতি দেওয়া সত্ত্বেও রাজ্যে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারেননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দেওয়া পরামর্শেই তাই পথে ঘুগনি বিক্রি করছেন তাঁরা। তৃণমূল পাল্টা বলল, এ সব করে ওঁরা এই পেশার সঙ্গে যুক্ত মানুষদের অপমান করছেন।
সম্প্রতি খড়্গপুরের একটি কর্মসূচিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা পুজোর আগে রাজ্যবাসীকে বিকল্প কর্মসংস্থানের দিশা দেখিয়েছিলেন। পরামর্শ দিয়েছিলেন, চা, ঘুগনি বিক্রি করলে আয়ের খামতি হবে না। বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রীর সেই ‘পরামর্শ’ মেনেই বিধানসভার বাইরে ঘুগনি বিক্রি শুরু করেন বলে দাবি বিজেপি বিধায়কদের। চাকদহের বিজেপি বিধায়ক বঙ্কিম ঘোষ বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার থেকে মুখ্যমন্ত্রী পুজোর উদ্বোধন শুরু করে দিয়েছেন। তাই আমরা তাঁর নির্দেশ মেনে ঘুগনি-মুড়ি বিক্রি শুরু করলাম। কারণ, মুখ্যমন্ত্রী বিকল্প কর্মসংস্থানের বন্দোবস্ত করতে না পেরে অন্য পরামর্শ দিয়েছেন। আমরা তাঁর বলে দেওয়া পথই ধরলাম।’’
রাজ্যে কর্মসংস্থান তৈরি করতে তৃণমূল সরকার ব্যর্থ বলে বার বার অভিযোগ করেছে বিরোধী বিজেপি। বৃহস্পতিবার ফের সেই অভিযোগ করে আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল বলেন, ‘‘অনেক কষ্ট করে মা-বাবা আমাদের পড়াশোনা শেখান, যাতে আমরা বড় হয়ে তাঁদের মুখ উজ্জ্বল করতে পারি। প্রতিষ্ঠিত হতে পারি। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী যুব সমাজকে কর্মসংস্থানের দিশা দেখাতে পারেননি। তাই আমরা ঘুগনি-মুড়ির দোকান দিয়েছি।’’
বৃহস্পতিবার পদ্মশিবিরের প্রতীকী স্টল থেকে বিনামূল্যে ঘুগনি-মুড়ি দেওয়া হয় পথচারীদের। এই পদক্ষেপে নেতৃত্ব দেন বিজেপির পরিষদীয় দলের মুখ্য সচেতক মনোজ টিগ্গা। অংশ নেন বালুরঘাটের বিধায়ক অশোক লাহিড়ী, শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ-সহ অনেকে। কর্মসূচি পালনের পরে কুমারগ্রামের বিধায়ক মনোজ ওঁরাও কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘এই স্টল দিয়ে এখনই কোটি কোটি টাকা উপার্জন করলাম।’’
বিজেপিকে একহাত নিয়ে তৃণমূলের মুখপাত্র তথা বিধায়ক তাপস রায় বলেন, ‘‘ওঁরা নিজেদের ভাবনাচিন্তার কথাও বলতে পারেন। সারা দেশে, বিশেষত বিজেপি শাসিত রাজ্যে কত কর্মসংস্থান, কত শিল্পের ছড়াছড়ি! তবে পাশাপাশি আরও একটা কথা বলব, বিক্রেতা, তিনি যা-ই বিক্রি করুন না কেন, প্রতিটি পেশার একটা সম্মান রয়েছে। এগুলি করে ওঁরা এই ঝালমুড়ি, চা বিক্রির পেশার সঙ্গে যুক্ত বিক্রেতাদের অপমান করছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রীও চা বিক্রেতা ছিলেন।’’
প্রসঙ্গত, খড়্গপুরের কর্মসূচিতে মমতা পরামর্শ দিয়েছিলেন, ‘‘এক হাজার টাকা জোগাড় করে একটা কেটলি কিনুন আর মাটির ভাঁড় নিন। সঙ্গে কিছু বিস্কুট নিন। আস্তে আস্তে বাড়বে।’’ কী ভাবে বাড়বে ব্যবসা, সেই রাস্তাও বাতলে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘প্রথম সপ্তাহে বিস্কুট নিলেন। তার পরের সপ্তাহে মাকে বললেন, ‘একটু ঘুগনি তৈরি করে দাও।’ তার পরের সপ্তাহে একটু তেলেভাজা করলেন। একটা টুল আর একটা টেবিল নিয়ে বসলেন। এই তো পুজো আসছে সামনে। দেখবেন লোককে দিয়ে কুলোতে পারবেন না! আজকাল এত বিক্রি আছে!’’