(বাঁ দিকে) দেব। শুভেন্দু অধিকারী (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
২০২৬ সালে ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যানের কাজ না হলে আর ভোটের প্রচারে দেখা যাবে না তাঁকে। রবিবার বন্যাবিধ্বস্ত ঘাটালে গিয়ে ঘোষণা করলেন তিন বারের তৃণমূল সাংসদ দীপক অধিকারী (দেব)। তিনি জানিয়ে দেন ইতিমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। তবে তিন মাসের মধ্যে সেই কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার নয়। কিন্তু যে প্রতিশ্রুতি তিনি দিয়েছেন, যে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য আবার রাজনীতির ময়দানে এসেছেন, সেটা করবেনই। অভিনেতা-সাংসদের ওই ঘোষণার পর কটাক্ষ শানিয়েছের রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি দাবি করেছেন, সদিচ্ছা থাকলে ১১ বছরের মধ্যে ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান হত। কিন্তু সে কাজ হয়নি। তার পরেই দেবকে খোঁচা দিয়ে শুভেন্দু বলেছেন, ‘‘আজ রবিবার ছুটির দিন। শুটিং নেই। তাই ঘাটালে শুটিং করতে গিয়েছেন উনি।’’ তৃণমূল সাংসদকে ‘রাজধর্ম’ পালনের ‘পরামর্শ’ দেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক।
ফি বছর বন্যা হয় পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালে। কিন্তু মাস্টারপ্ল্যান এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। লোকসভায় দেব নিজে বিষয়টি বার বার তুলে ধরেছেন। কেন্দ্রের সঙ্গে সংঘাতের মধ্যে রাজ্য জানিয়েছে নিজেদের খরচেই মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়িত করা হবে। দেব-ও ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে তৃতীয় বার ঘাটাল থেকে প্রার্থী হওয়ার পর জানিয়েছিলেন, ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যানের জন্যই তাঁর আবার রাজনীতিতে আসা। না-হলে রাজনীতিকে বিদায় জানাতেন এ বারই। রবিবার মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে তৃণমূল সাংসদ বলেন, ‘‘মান সিংহ কমিটি যে মাস্টারপ্ল্যানের সুপারিশ করেছে, তা যদি বাস্তবায়িত হয়, তা হলে ঘাটালের অর্ধেক নদী হয়ে যাবে। অনেকগুলি জায়গাকে নদীতে পরিণত করতে হবে। সেটা তো সম্ভব নয়। তাই নতুন প্ল্যান অনুযায়ী চার কিলোমিটার জমিকে বাঁধে পরিণত করে দু’টি নদীকে মেলাতে হবে। সেই কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। জমি অধিগ্রহণ চলছে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘জুন থেকে ধরলে তিন মাসে ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান হয় না। রাজ্য সরকার আপ্রাণ চেষ্টা করছে কাজটা দ্রুত গতিতে শুরু করার। জমি অধিগ্রহণ এবং জমি পুনরুদ্ধারের কাজ চলছে। বেশ কিছু জমিতে দোকান তৈরি হয়ে গিয়েছে। রাস্তা দিয়ে বড় মেশিন ঢুকতে পারবে না। তাঁদের সঙ্গে কথা চলছে। প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে।’’
দেব এ-ও জানিয়েছেন, এ বার অতিবৃষ্টি এবং ডিভিসি থেকে জল ছাড়ার পর ঘাটালের যে অবস্থা হয়েছে, তাতে মাস্টারপ্ল্যান থাকলেও বন্যা এড়ানো যেত কি না, সে নিয়ে তাঁর সন্দেহ রয়েছে। তার পরেও তৃণমূল সাংসদ বলেছেন, ‘‘ভোটের আগে আমাদের সরকার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা পূরণ হবে। আমি দায়িত্ব নিচ্ছি। কারণ, আমার এখানে এসে দিদি কথা দিয়েছিলেন। এই একটা শর্তের জন্যই আমি রাজনীতিতে ফিরেছি। ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান রাজ্য সরকার করবে বলে দিদি এবং অভিষেক দু’জনেই কথা দিয়েছিলেন। তার জন্যই রাজনীতিতে এসেছি আমি। এখনও বিশ্বাস, আমাদের নেত্রী এটা শুরু করবেন।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘জুন থেকে ধরলে তিন মাসে ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান হবে না। রাজ্য সরকার আপ্রাণ চেষ্টা করছে কাজটা দ্রুত গতিতে শুরু করার। জমি অধিগ্রহণ এবং জমি পুনরুদ্ধারের কাজ চলছে। বেশ জমিতে দোকান তৈরি হয়ে গিয়েছে। রাস্তা দিয়ে বড় মেশিন ঢুকতে পারবে না। তাদের সঙ্গে কথা চলছে। প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। আমি রাজনীতিতে ফিরে এসেছি ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যানের জন্য। আমি কথা দিচ্ছি, যদি ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যানের কাজ ২০২৬ সালের আগে শুরু না-হয় আমি ভোটের প্রচারেই বার হব না।’’ এ কথা গত লোকসভা ভোটের প্রচারে বেরিয়েও বলেছিলেন দেব। বন্যাবিধ্বস্ত ঘাটাল থেকে তিনি আবার সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে দেব জানিয়েছেন সেচ দফতরের সঙ্গে যে কথা তাঁর হয়েছে, সেখান থেকে জেনেছেন, আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বর মাস থেকে জমি অধিগ্রহণ হবে। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাস থেকে মূল কাজ শুরু হয়ে যাবে।
ঘাটাল শহরেরই ১৩টি ওয়ার্ডের বেশ কিছু এলাকা জলের তলায়। এ ছাড়া দাসপুর-১, দাসপুর-২, চন্দ্রকোনা, ডেবরা, কেশপুর-সহ বহু এলাকা এখনও জলমগ্ন। দেবের মন্তব্য নিয়ে নন্দীগ্রাম থেকে শুভেন্দু বলেন, ‘‘উনি কত দিনের এমপি (সাংসদ)? এ নিয়ে তিন বার জিতেছেন। আমিও তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলে ছিলাম। ২০০৯ থেকে ’১১ সাল পর্যন্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তো কেন্দ্রের সরকারে ছিল। তখন কেন ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যানের কাজ হল না?’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ওঁকে (দেব) বলব, রাজধর্ম পালন করুন। প্রত্যেকটা গ্রামপঞ্চায়েতে যান। আপনার সাংসদ এলাকার ৭৫ ভাগই প্লাবিত। কেশপুর, ডেবরার বড় অংশ, সম্পূর্ণ ভাবে ঘাটাল জলমগ্ন।’’ পর ক্ষণেই খোঁচা দিয়ে বলেন, ‘‘আজ রবিবার, শুটিং ছিল না। তাই ঘাটালে শুটিং করতে গিয়েছিলেন।’’