বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। —ফাইল চিত্র।
রবিবার রাজভবনের সামনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধর্নামঞ্চে মতুয়াদের উপস্থিতি দেখা যায়। বেশ কয়েক জন মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি তাঁদের সম্প্রদায়ের পতাকা নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের বিক্ষোভ সমাবেশে। আর তার পরের দিনই সোমবার ঠাকুরনগরে যাচ্ছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। সুকান্তের পক্ষে দু’টি ঘটনার সঙ্গে মিল খোঁজা অবান্তর বলে দাবি করা হলেও দলেরই একাংশের দাবি, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন এখন কার্যকর না হওয়ায় মতুয়াদের মধ্যে বিজেপিকে নিয়ে ক্ষোভের বাতাবরণ রয়েছে। সেই ক্ষোভের আঁচ বুঝতেই সুকান্তের ঠাকুরনগর সফর। যদিও সুকান্ত বলছেন, ‘‘গাইঘাটায় আমাদের এক জন কর্মী খুন হয়েছেন। আমি তাঁর পরিবারের লোকেদের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি। ফেরার পথে ঠাকুরবাড়িতে প্রণাম জানাতে যাব। এর বেশি কিছু নয়।’’
সুকান্ত এমনটা বললেও বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, বিকেল ৫টা নাগাদ ঠাকুরনগরে পৌঁছানোর কথা সুকান্তের। এর পরে বৈঠকও করবেন সুকান্ত। থাকার কথা গাইঘাটার বিজেপি বিধায়ক তথা ঠাকুরবাড়ির সদস্য সুব্রত ঠাকুর। স্থানীয় বিজেপি নেতারাও উপস্থিত থাকবেন। তবে বনগাঁর সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর ওই বৈঠকে থাকবেন কি না তা জানা যায়নি। প্রসঙ্গত শান্তুনু একই সঙ্গে মতুয়া মহাসঙ্ঘের সভাপতি।
গত লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচনে দেখা গিয়েছে মতুয়া ভোটের বড় অংশই এসেছে বিজেপির ঝুলিতে। তবে পঞ্চায়েত নির্বাচনে অতটা সুবিধা করতে পারেনি বিজেপি। মতুয়া প্রভাবিত শান্তিপুর, রানাঘাট, কল্যাণী (গ্রামীণ)-এ দলের ফল আশানুরূপ হয়নি। আবার ওই এলাকায় দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও বিজেপির জন্য চিন্তার বিষয়। এই পরিস্থিতিতেও সুকান্তের সফর। সম্প্রতি তৃণমূলের পক্ষেও মতুয়া ভোট নিজেদের দিকে টানতে একাধিক উদ্যোগ দেখা গিয়েছে। ঠাকুরবাড়ির পুত্রবধূ তথা তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ মমতাবালা ঠাকুরের নেতৃত্বে গত ৩ অক্টোবর কলকাতায় একটি সমাবেশেরও আয়োজন করা হয়। যদিও সেই সমাবেশে মতুয়াদের জমায়েত তেমন উল্লেখযোগ্য ছিল না। তবে এটা ঠিক যে, আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির ‘গড়’ হিসাবে পরিচিত মতুয়াভূম নিয়ে চিন্তা রয়েছে গেরুয়া শিবিরে। বার বার কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে আশ্বাস দেওয়া হলেও এখনও সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন কার্যকর হয়নি। তেমন উদ্যোগও দেখা যায়নি। বিজেপির মতুয়া ভোট দখলের সেই মূল অস্ত্রই এখন অনেকটা ভোঁতা হয়ে গিয়েছে। সম্প্রতি রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব এ নিয়ে কেন্দ্রের কাছে দরবারও করেছেন। তাতে আশ্বাস মিললেও কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি। সব মিলিয়ে মতুয়া ভোট নিয়ে বেশ চিন্তা রয়েছে বিজেপির। সেই চিন্তা ঠিক কতটা, তা সরজমিনে যাচাই করতেই সুকান্তের সোমবারের ঠাকুরনগর সফর বলে দাবি করছেন দলের একাংশ।