এই পোস্ট ঘিরে বিতর্কে রূপা। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
কালীপুজোর রাতে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের আকস্মিক প্রয়াণে চমকে উঠেছে বাংলার রাজনীতি। চিরকাল অ-বামপন্থী রাজনীতি করলেও তাঁর চলে যাওয়ার দিনে রাজনৈতিক ভাগাভাগি নেই। তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে বিজেপি-র দিলীপ ঘোষ, সিপিএম-এর বিমান বসু থেকে পিডিএস-এর সমীর পুততুণ্ড বা কংগ্রেসের অধীর চৌধুরী— সুব্রতর প্রয়াণে সকলেই শোকে মুহ্যমান। সেই আবহে যদিও ব্যতিক্রমী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। অভিনেত্রী তথা বিজেপি সাংসদ রূপার কটাক্ষ মিশ্রিত নেটমাধ্যম পোস্ট ইতিমধ্যে তোলপাড় ফেলে দিয়েছে রাজনীতির আঙিনায়। বিজেপি নেত্রীর ‘রুচি’, পোস্টে ‘ভাষা’র ব্যবহার এবং ‘সময়’ জ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে সব মহলে।
প্রায় ১৫ ঘণ্টা আগে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্টটি করেছেন অধুনা বিজেপি নেত্রী। এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত রূপার পোস্টে ১৭৫টির বেশি মন্তব্য পড়েছে। কিছু মন্তব্যে রূপার প্রতি সমর্থন থাকলেও, বেশির ভাগই রূপার প্রতি সমালোচনামূলক। তাতে বেশ কয়েকটিতে পাল্টা মন্তব্যও করেছেন রূপা।
মন্তব্যে কোথাও রূপা লিখেছেন, ‘তিস্তাকে নিয়েছ বস্। কিছু তো ফেরত নেবে মা কালী।’ এখানে কি সদ্য প্রয়াত বিজেপি নেত্রী তথা কাউন্সিলর তিস্তা বিশ্বাসের কথা বলছেন রূপা? স্পষ্ট করেননি বিজেপি নেত্রী। আবার কোথাও রূপা লিখেছেন, ‘পুজো ঝকমক করা আর টাকা তোলা ছাড়া যাঁর কোনও অবদান ছিল না, তার জন্য আমার কোনও সম্মান (রেসপেক্ট) নেই।’ সুব্রত মুখোপাধ্যায় বাংলার অনেক ক্ষতি করেছেন বলেও এক জায়গায় দাবি করেছেন বিজেপি নেত্রী রূপা। মন্তব্য বাক্সে রূপা একটি বিস্ফোরক দাবিও করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘২০২১ ভোটের আগে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ‘ডিল’ পছন্দ হয়নি তাঁর।’ আবার এক জায়গায় তাঁর সঙ্গে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সম্পর্ক নিয়েও খোলসা করেছেন বিজেপি সাংসদ।
রূপার মন্তব্য বাক্সের অংশ বিশেষ। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
এমন দাবির পর একাধিক প্রশ্ন ধেয়ে এসেছে তাঁর দিকে। রূপার পোস্টেই এক নেটাগরিক মন্তব্য করেছেন, ‘বিরোধী রাজনীতি করেছি বলে কোনও দিন সম্পর্ক খারাপ হয়নি। মজা করে দেখা হলেই একগাল হেসে বলতেন কী রে হার্মাদ! মিস করব।’ আবার এক নেটিজেন রূপার পাশে দাঁড়িয়ে লিখেছেন, ‘সত্যিটা সামনে আসা উচিত।’
শুধু তৃণমূল বা কংগ্রেসই নয়, সিপিএম থেকে বিজেপির প্রাক্তন, বর্তমান রাজ্য সভাপতি, মুখপাত্র, নেতা, সকলেই যখন সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বর্ণময় রাজনৈতিক জীবনের স্মৃতিচারণে মগ্ন, তখন কেন এমন ভাবে বিতর্কে জড়ালেন বিজেপি নেত্রী? তাঁর সমালোচকরা বলছেন, প্রচার পাওয়ার কী উদগ্র বাসনা! আর রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, রাজ্যের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে রূপার ব্যক্তিগত ক্ষোভ বা আপত্তি থাকতেই পারে। কিন্তু তা সুব্রতর জীবদ্দশায় কখনও প্রকাশ্যে জানিয়েছিলেন কি রূপা? তা হলে তাঁর প্রয়াণের দিনে এমন পোস্ট কেন?