দিলীপ ঘোষ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুভেন্দু অধিকারী
শনিবার সকালে ভবানীপুরে উপনির্বাচনের দিন ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। আর শনিবার রাত থেকেই সেই ভোটের পথে কাঁটা বিছানোর উদ্যোগ শুরু করে দিল বিজেপি। রাজ্যের বাকি চারটি উপনির্বাচন ছেড়ে কেন শুধু ভবানীপুরেই ভোট হচ্ছে, এই প্রশ্ন তুলে আইনি লড়াইয়ে যাওয়ার তোড়জোড় চালাচ্ছে গেরুয়া শিবির। রাজ্য বিজেপি সূত্রে খবর, শনিবার রাতেই জরুরি বৈঠক ডেকে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সেখানে ঠিক হয়েছে, দু-এক দিনের মধ্যেই ভবানীপুরের উপনির্বাচন বাতিলের দাবি নিয়ে আদালতে যেতে পারে দল। তার জন্য বড় মাপের কোনও আইনজীবীর সাহায্য নেওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে। বিজেপি চাইছে, এই মামলা যাতে আদালতের নির্দেশে সাংবিধানিক বেঞ্চে নিয়ে যাওয়া যায়। রাজ্য বিজেপি-র এক নেতার কথায়, “যে কোনও ভাবে কমিশনের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করব।”
বিজেপি যে এমন কোনও পথ নিতে পারে, শনিবার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কথাতেই তার খানিক আভাস ছিল। এর পরে রাতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে শুভেন্দু-সহ রাজ্য নেতাদের ভার্চুয়াল মাধ্যমে আলোচনা হয় বলে জানা গিয়েছে। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, দলের আইনজীবী-সাংসদ মহেশ জেঠমালানিকে সামনে রেখে এই লড়াইয়ে নামতে পারে দল। প্রসঙ্গত গুজরাত দাঙ্গার একাধিক মামলায় সুপ্রিম কোর্টে নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহের আইনজীবী ছিলেন মহেশ। পরে তিনি রাজ্যসভায় মনোনীত সাংসদ হন। এক রাজ্য নেতার কথায়, “সব কিছু ঠিক থাকলে মহেশজিই আমাদের হয়ে মামলাটি লড়বেন। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।” রাজ্য বিজেপি সূত্রে খবর, মহেশের সঙ্গে এক প্রস্থ কথাও হয়েছে ইতিমধ্যে। কথা হয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গেও।
বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এই প্রসঙ্গে বলেন, “দলের নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত যে কমিটি রয়েছে তাঁরাই বিষয়টি দেখছেন। কী করা হবে আর করা হবে না সেটা আইন সংক্রান্ত বিষয়ে যাঁরা দায়িত্বে রয়েছেন তাঁরাই ঠিক করবেন।”
শনিবার কমিশনের ভোট ঘোষণার পরে পরেই দিলীপ তার বিরোধিতা করেছিলেন। কমিশন ‘প্রভাবিত’ হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। আর বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “এই মুহূর্তে গোটা দেশে ৩১টি বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন বাকি রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে মুখ্যমন্ত্রী নিয়ম করে প্রত্যেকটি সভায় নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে বক্তব্য রেখেছেন। নির্বাচন কমিশনের কর্তারাই একমাত্র বলতে পারবেন কেন বাকি কেন্দ্রগুলিতে উপনির্বাচন না করে কেবলমাত্র পশ্চিমবঙ্গের ভবানীপুর কেন্দ্রে তারা উপনির্বাচন করছেন।’’
কমিশন ঘোষণা করেছে ৩০ সেপ্টেম্বর ভবানীপুর আসনে উপনির্বাচন হবে। কমিশন বলেছে, রাজ্যের ‘বিশেষ অনুরোধে’ এই সিদ্ধান্ত। বিধানসভা নির্বাচনে এই আসনে জয়ী মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় গত ২১ মে ইস্তফা দেওয়ার পরেই ভবানীপুরে উপনির্বাচনের দাবি তুলতে শুরু করে তৃণমূল। এ নিয়ে খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সরব হন। দিল্লিতে কমিশন দফতরে দু’বার গিয়েছে তৃণমূল প্রতিনিধি দল। অন্য দিকে, রাজ্যের করোনা পরিস্থিতির কারণে উপনির্বাচন এখনই দরকার নেই বলে দাবি তুলেছিল বিজেপি। একই সঙ্গে তাদের বক্তব্য ছিল, এখন উপনির্বাচন না হলেও রাজ্যে কোনও সাংবিধানিক সঙ্কটের সম্ভাবনা নেই। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে এমন আটটি কারণ দেখিয়ে, কেন বাংলায় এখনই উপনির্বাচনের দরকার নেই তার ব্যাখ্যা দেয় রাজ্য বিজেপি।
গেরুয়া শিবির সূত্রে জানা যাচ্ছে, কমিশনকে লেখা রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীর চিঠিকেই আইনি লড়াইয়ে বড় অস্ত্র বানাতে চাইছে তারা। কমিশন শনিবার যে বিবৃতি প্রকাশ করে তাতে লেখা হয়েছে, ‘সংবিধানের ১৬৪(৪) অনুচ্ছেদ উল্লেখ করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব লেখেন, যদি কোনও মন্ত্রী টানা ছ’মাস বিধানসভার সদস্য না থাকেন এবং অবিলম্বে নির্বাচন না হয়, তা হলে ছ’মাসের শেষে তিনি আর মন্ত্রী থাকতে পারেন না, সাংবিধানিক সঙ্কট ও শীর্ষ প্রশাসনিক পদে শূন্যতার সৃষ্টি হয়। কমিশনকে মুখ্যসচিব এ-ও জানিয়েছেন যে, প্রশাসনিক জরুরি প্রয়োজন ও জনস্বার্থের কথা ভেবে এবং রাজ্যে (শীর্ষ পদে) যাতে শূন্যতা তৈরি না হয়, তার জন্য ভবানীপুর কেন্দ্রে, যেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লড়তে চাইছেন, সেখানে নির্বাচন করানো হোক।... সাংবিধানিক জরুরি প্রয়োজন ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিশেষ অনুরোধের ভিত্তিতে ভবানীপুরে নির্বাচন করানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
রাজ্য বিজেপি-র প্রশ্ন, একজন সরকারি আমলা কী করে ভবানীপুরে কে প্রার্থী হবেন তা বলে দিতে পারেন। আর সেই কথা শুনে নির্বাচন কমিশন কেন এমন ‘বেনজির’ সিদ্ধান্ত নেবে?