রামজীবনপুরে পুরবোর্ড গঠন নিয়ে টালবাহানা অব্যাহত।
গত শুক্রবারই কলকাতায় সাংবাদিক বৈঠক করে রামজীবনপুরে পুরবোর্ড গড়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। সোমবারও তিনি দাবি করেন, তৃণমূল চক্রান্ত করে ওই এলাকায় দলের নেতা তথা জয়ী কাউন্সিলর গোবিন্দ মুখোপাধ্যায়কে ফাঁসাতে চাইছে। কিন্তু রামজীবনপুরে তাঁদের পুরবোর্ড গড়া এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। তবে শাসক দলও রামজীবনপুরে হাল ছাড়তে রাজি নয়।
১১টি আসনবিশিষ্ট রামজীবনপুর পুরসভায় তৃণমূল পেয়েছে ৫টি আসন। বিজেপি ২টি ও মহাজোটের প্রার্থীরা চারটি আসনে জয়ী হয়েছে। সেক্ষেত্রে তৃণমূল মহাজোটের এক জনের সমর্থন পেলেই বোর্ড গড়তে পারবে। অন্য দিকে, মহাজোটের জয়ী প্রার্থীদের সমর্থন নিয়ে পুরবোর্ড গঠন নিয়ে আশাবাদী গেরুয়া শিবিরও। জোট প্রার্থীদেরও দাবি, বিজেপির পুরপ্রধান হলে তাঁদের আপত্তি নেই। তবে বোর্ড হবে মহাজোটের।
তবে কলকাতায় বিজেপির পুরবোর্ড গঠনের ঘোষণায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে মহাজোটের জয়ী প্রার্থীদের মধ্যে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জোটের এক কাউন্সিলরের সাফ কথা, “কোনও দলের নয়, বোর্ড হবে মহাজোটের। বিজেপির কেউ চেয়ারম্যান হলেও আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু রামজীবনপুরে বিজেপির বোর্ড হবে কী করে।” এ বিষয়ে সিপিএমের চন্দ্রকোনা-১ জোনাল কমিটির সম্পাদক বিদ্যুৎ রায়েরও প্রশ্ন, “আমরা প্রথম থেকেই জোটের হয়ে প্রচার করেছিলাম। এখন বিজেপি কীভাবে পুরবোর্ড গঠনের দাবি করছে।”
যদিও বিজেপির পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায় বলেন, “বিজেপির চেয়ারম্যান হবে-এটা নিশ্চিত। কেননা, চার জন নির্দল কাউন্সিলর লিখিতভাবে তা জানিয়েও দিয়েছেন।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘চেয়ারম্যান পুরবোর্ড পরিচালনা করে। তাই এটা বলা হয়েছিল। তবে বিজেপি-সহ মহাজোটের প্রার্থীদের সমর্থনেই পুরবোর্ড গঠন হবে।”
বিজেপি সূত্রে খবর, প্রথম থেকেই মহাজোটের বোর্ড গঠনের কথাই বলা হয়। কিন্তু তৃণমূল মহাজোটের জয়ী কাউন্সিলরদের ভাঙানোর চেষ্টা করলে পরিস্থিতি বদলে যায়। রাতারাতি বিরোধী দলের কাউন্সিলরদের প্রথমে মেদিনীপুর ও পরে কলকাতায় নিয়ে যান বিজেপি নেতৃত্ব। দলের এক সদস্য তথা মহাজোটের কাউন্সিলর জয়দেব ধাড়াকেও বিজেপির দলীয় অফিসে নিয়ে যাওয়া নিয়ে ক্ষুব্ধ সিপিএম নেতৃত্বও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নির্দল কাউন্সিলরের কথায়, ‘‘এতসব ঝামেলা হবে, আগে বুঝতে পারিনি। এতদিন বাড়ির বাইরে থাকা নিয়ে সংসারেও অশান্তি শুরু হয়েছে।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘আবার যদি কলকাতায় যেতে বলে তাহলেও যেতে হবে। না গেলে বিরোধিতা করছি বলে প্রচার হবে।’’
পুরবোর্ড গঠন নিয়ে ক্ষোভ প্রসঙ্গে বিজেপি কাউন্সিলর গোবিন্দ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সব ঠিকই রয়েছে। এ রকম একটু গোঁসা তো হতেই পারে। তাতে বোর্ড গঠনে কোনও প্রভাব পড়বে না।’’ তাঁর দাবি, তৃণমূল ও প্রশাসন যতই চেষ্টা চালাক, তাঁরাই বোর্ড গঠন করবেন। সোমবার সন্ধ্যায় গোবিন্দবাবু-সহ বিরোধী দলের ছয় কাউন্সিলর কলকাতা থেকে রামজীবনপুরে ফিরে আসেন। এ দিনই নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কাউন্সিলর বলেন, “এক আত্মীয়ের মাধ্যমে তৃণমূল তাদের দলে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব পাঠিয়েছে। তবে বাড়িতে কেউ আসেনি।’’ বিজেপির রামজীবনপুর শহর মণ্ডল কমিটির সম্পাদক জয়ন্ত সিংহেরও দাবি, তৃণমূল এত ভাবে চেষ্টা করছে, তাই তাঁদেরও লড়াই করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘আমরাও প্রতি কাউন্সিলরের বাড়ির পাশে পাহারা রেখেছি। কেউ গেলেই আমরাও সঙ্গে সঙ্গে পৌঁছে যাচ্ছি। তৃণমূল চাপ দিলেও আমরা ভেঙে পড়িনি।”
যদিও বিজেপির কর্মীদের বারবার বাড়ি আসা নিয়ে ক্ষোভ চেপে রাখছেন না মহাজোটের জয়ী কাউন্সিলররা। এক নির্দল কাউন্সিলরের বক্তব্য, “তৃণমূল তো আমাদের বাড়িতে সরাসরি আসেনি। উল্টে জোটের লোকজন ও বিজপির কর্মীরাই বাড়িতে যাতায়াত করছে।’’ ক্ষোভের সঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘‘আমাদের কী কোনও ব্যক্তিগত জীবন নেই। কোনও আত্মীয় এলেও বাড়িতে ঢুকতে দেওয়ার আগে নানা প্রশ্ন করা হচ্ছে। এতে সংসারে অসান্তি বাড়ছে।’’
পুরবোর্ড গঠন নিয়ে কী বলছেন তৃণমূল নেতৃত্ব?
রামজীবনপুরে তৃণমূলের বিদায়ী চেয়ারম্যান শিবরাম দাস দাবি করেন, পুরভোটের ফল ঘোষণার পর থেকেই জোটের দুই কাউন্সিলর তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। বিজেপি এখন সব বুঝে গিয়ে কাউন্সিলর ভাঙানোর অভিযোগ তুলছে। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘যদি কেউ দলে আসতে চায় বা বোর্ড গঠনে তৃণমূলকে সমর্থন করে-তা হলে দলের ও সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলরের দোষ কোথায়?’’ একইসঙ্গে শিবরামবাবুর কৌশলী বক্তব্য, ‘‘আমরা মানুষের রায় মেনে নিয়েছি। এ বার যদি কেউ আমাদের সাহায্য করেন তাঁকে তো দলে নেবই।”