Gujarat of Garbeta

মোদীর সঙ্গে নেই বঙ্গের ‘গুজরাত’

গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, ঢালাই রাস্তার পাশে বাঁশের ডগায় পতপত করে উড়ছে ঘাসফুলের পতাকা। সেখানে দাঁড়িয়ে কয়েক জন বললেন, ‘‘এখানে তৃণমূল ছাড়া আর কেউ নেই।’’

Advertisement

রূপশঙ্কর ভট্টাচার্য

চন্দ্রকোনা রোড শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০২৪ ০৮:১৫
Share:

চন্দ্রকোনা রোডের গুজরাত গ্রামে উড়ছে তৃণমূলের পতাকা। —নিজস্ব চিত্র।

এই গুজরাত মোদীর নয়। স্থানীয়েরা বলছেন— ‘এই গুজরাত কেবল দিদিরই’।

Advertisement

দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাজ্য গুজরাতের থেকে বহু যোজন দূরে পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা ৩ ব্লকের (চন্দ্রকোনা রোড) উড়িয়াস্যাই গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত গুজরাত গ্রাম। নামে মোদী-ভূম হলে কী হবে, বঙ্গের এই গ্রামে কিন্তু ‘দিদিপন্থী’।

গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, ঢালাই রাস্তার পাশে বাঁশের ডগায় পতপত করে উড়ছে ঘাসফুলের পতাকা। সেখানে দাঁড়িয়ে কয়েক জন বললেন, ‘‘এখানে তৃণমূল ছাড়া আর কেউ নেই।’’ গ্রামের কলতলায় জল নিতে আসা মহিলাদের মুখেও শোনা গেল, ‘‘দিদি কত কি দিচ্ছে! লক্ষ্মীর ভান্ডারেরও টাকা বাড়িয়েছে।’’

Advertisement

গুজরাত গ্রামে সাকুল্যে তিনশো পরিবারের বাস। তার মধ্যে সংখ্যালঘু পরিবার শ’খানেক। তবে গ্রামে সম্প্রীতির পরিবেশ রয়েছে বরাবর। ইদের সকালেই জব্বর আলি ভুঁইয়াকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন কার্তিক দিগার। তিনি তৃণমূলের প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য। এখনও দলের কর্মী। কার্তিক বলছিলেন, ‘‘উনিশের লোকসভা ভোটে (জায়গাটি ঝাড়গ্রাম কেন্দ্রের অন্তর্গত) বিজেপি জেতার পরে এই গ্রামে প্রচুর অশান্তি হয়। তার পরের ভোটগুলিতে সব তৃণমূল জিতেছে। আর অশান্তি হয়নি।’’

গ্রামের নাম গুজরাত কেন, তা স্পষ্ট নয়। প্রণব রায়ের ‘মেদিনীপুর জেলার প্রত্ন-সম্পদ’ বই থেকে জানা যায়, একাদশ-দ্বাদশ শতকে এই অঞ্চল ওড়িশার রাজার শাসনাধীন ছিল। সেই থেকে এলাকার নাম উড়িয়াস্যাই। চন্দ্রকোনা রোডের প্রবীণ ইতিহাসবিদ বিমল রায়ের মতে, ‘‘উড়িয়াস্যাইয়ের লোকজন ব্যবসা-বাণিজ্য করতেন। সেই সূত্রে গুজরাতের সঙ্গে যোগাযোগ ও তার রেশ রেখে গ্রামের নাম গুজরাত হতে পারে।’’

গুজরাত গ্রামের ভোটাররা ভোট দিতে যান মহাবনকাটি এমএসকে-তে। সেই বুথে মহাবনকাটি ও কেন্দরাইশোল গ্রামের মানুষও ভোট দেন। তিনটি গ্রাম মিলিয়ে ভোটার ১০৩৫ জন। এ বারের লোকসভা ভোটে সেখানে তৃণমূল পেয়েছে ৬৬৯টি ভোট, বিজেপি ২০০টি, সিপিএম মাত্র ৮০টি।

গুজরাত থেকে দু’কিলোমিটার গেলেই বীরসিংহপুর। এই গ্রামে বাড়ি সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুশান্ত ঘোষের। একসময় পুরো এলাকা ‘লাল’ ছিল। গ্রামের বর্তমান পঞ্চায়েত সদস্য তৃণমূলের অচিন্ত্য দোলই বললেন, ‘‘এই গুজরাতে মানুষে শান্তিতে রয়েছেন। ঢালাই রাস্তা, প্রতি ঘরে বিদ্যুৎ, পানীয় জলের ব্যবস্থা হয়েছে। একটা সজলধারা প্রকল্প হলে ভাল হয়। চেষ্টা করছি।’’

গ্রাম ঘুরে কোথাও চোখে পড়ল না গেরুয়া পতাকা বা বিজেপির দেওয়াল লিখন। গুজরাত অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সামনেই বাড়ি সুমিত্রা দিগার, শিবানি দিগারদের। ‘গোধরা’, ‘সাবরমতী’, ‘নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়াম’— জানেন না তাঁরা। তবে নরেন্দ্র মোদী যে গুজরাতের মানুষ, তা জানেন। রাখঢাক না করেই বললেন, ‘‘মোদী, বিজেপি দেশের সর্বনাশ করছে।’’

বিজেপির স্থানীয় মণ্ডল সভাপতি সুশান্ত কারকের দাবি, ‘‘গুজরাত গ্রামে আমাদের প্রচারই করতে দেওয়া হয়নি, পোলিং এজেন্ট বসাতেও বাধা দেওয়া হয়েছে। তবু শতাধিক ভোট পেয়েছি।’’ এলাকার তৃণমূল নেতা তথা উড়িয়াস্যাই পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সুজন ভুঁইয়া বলেন, ‘‘এই গুজরাতে বিজেপির অস্তিত্বই নেই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement