BJP

BJP: রায়ে খুশি বিজেপি, নবান্নের বিবেচনায় সুপ্রিম কোর্ট

সূত্রের খবর, কলকাতা হাইকোর্টের রায় জানার পরে বৃহস্পতিবার আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক, আইনজীবী সঞ্জয় বসুর সঙ্গে নবান্নে একপ্রস্ত বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০২১ ০৭:১৮
Share:

ফাইল চিত্র।

ভোট-পরবর্তী হিংসার ঘটনায় সিবিআই তদন্তের যে নির্দেশ হাইকোর্ট দিয়েছে, তাতে প্রত্যাশিত ভাবেই উল্লসিত বিজেপি। শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য নেতৃত্বের বড় অংশই অবশ্য মনে করছেন, যে কোনও বিষয়ে সিবিআই ঢুকে পড়লে রাজ্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ করা হয়। কারণ, আইনশৃঙ্খলা রাজ্যের এক্তিয়ারভুক্ত। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করা হবে কি না, সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে রায় খতিয়ে দেখা হচ্ছে সরকারি স্তরে।

Advertisement

সূত্রের খবর, কলকাতা হাইকোর্টের রায় জানার পরে বৃহস্পতিবার আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক, আইনজীবী সঞ্জয় বসুর সঙ্গে নবান্নে একপ্রস্ত বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে মুখ্যসচিব স্তরেও এই নিয়ে বৈঠক হয় বলে খবর। প্রশাসনের অন্দরের ব্যাখ্যা, ভোট-পরবর্তী হিংসার ঘটনার অনুসন্ধান করে হাইকোর্টে প্রায় তিন হাজার পাতার রিপোর্ট জমা দিয়েছিল জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। রাজ্য সরকারের কাছে যে নথি আসে, তাতে অবশ্য ধর্ষণের অভিযোগের তথ্য দেওয়া হয়নি বলে প্রশাসনের অন্দরের অভিযোগ। তবু প্রতিটি অভিযোগ জেলা স্তরে পুলিশকে দিয়ে খতিয়ে দেখে সরকার। শেষে তথ্য-সহ প্রায় ১০ হাজার পাতার রিপোর্ট হাইকোর্টে জমা দেয় রাজ্য।

আধিকারিকদের অনেকেরই বক্তব্য, ১২টি ধর্ষণের ঘটনার অভিযোগ করা হলেও অভিযুক্তেরা কেউ পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেননি। ফলে, সেই সব অভিযোগের ‘সত্যতা’ নিয়ে সরকারের অন্দরে প্রশ্ন আছে। আবার যে ২৩টি খুনের ঘটনার প্রসঙ্গ আসছে, তার মধ্যে ১৫ জনই তৃণমূলের কর্মী বা সমর্থক। বেশির ভাগই ভোটের আগেকার অথবা ভোটের সময়ের ঘটনা। কিছু ঘটনা ভোটের পরে ঘটলেও তা ৫ মে অর্থাৎ মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতার শপথগ্রহণের আগেকার। এখানেই সরকারের বক্তব্য, যে সময়ে এই সব ঘটনা ঘটেছে, তখন প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ নির্বাচন কমিশনের হাতে ছিল। নতুন সরকার প্রশাসনের রাশ গ্রহণ করার পরে আর কোনও ঘটনা ঘটেনি। সুপ্রিম কোর্টে গেলে কী ধরনের প্রশ্ন উঠতে পারে, তা বুঝে নিয়েই এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে রাজ্য প্রশাসন।

Advertisement

তৃতীয় বারের জন্য তৃণমূলের সরকার আসার সময় থেকেই হিংসার অভিযোগ নিয়ে রাজ্য থেকে জাতীয়, সর্ব স্তরে সরব ছিল বিজেপি। তারা হাইকোর্টের এ দিনের রায়কে ‘ঐতিহাসিক’ বলেই দাবি করছে। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের প্রতিক্রিয়া, ‘‘হাইকোর্ট ঐতিহাসিক রায় দিয়েছে। বিধানসভা ভোটের পরে যে ভয়ঙ্কর অত্যাচার হয়েছে, তাকে আমরা তালিবানি অত্যাচারের সঙ্গে তুলনা করতে পারি। এই ধরনের অত্যাচারের বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর করতে গেলে পুলিশ হয় বলেছে, এমন কোনও ঘটনাই ঘটেনি অথবা অসহায় ভাবে জানিয়েছে, তারা এফআইআর নিতে পারবে না।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘আমরা হতাশ হয়ে নানা কমিশন এবং হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলাম। আমরা ১০-১২ হাজার ঘটনা লিখে আমরা আদালতকে দিয়েছিলাম। মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, এ রকম কোনও ঘটনাই ঘটেনি। আদালতের রায়ে প্রমাণিত হল, এ রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা এবং গণতন্ত্র কী ভাবে বিপন্ন হয়ে পড়েছে।’’

বস্তুত, হাইকোর্টের এই রায়কে তৃণমূল এবং রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করার নয়া হাতিয়ার হিসাবেই দেখছে বিজেপি। রায় ঘোষণার পরেই বিষয়টিকে জাতীয় স্তরে চর্চার বিষয় করে তুলতে সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন বিজেপি বিধায়ক, সাংসদেরা। দিল্লিতে অনুরাগ ঠাকুর, কৈলাস বিজয়বর্গীয়, গৌরব ভাটিয়াদেরও দাবি, রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রচারের অধিকার সকলের আছে, হিংসা ছড়ানোর নয়।

তৃণমূলের বর্ষীয়ান নেতা সৌগত রায়ের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘আইনশৃঙ্খলা রাজ্যের এক্তিয়ারভুক্ত। তার প্রত্যেকটি বিষয়ে সিবিআই ঢুকে পড়লে তা রাজ্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ করা হয়। রাজ্য সরকার নিশ্চয়ই সব কিছু বিচার করে প্রয়োজনে সুপ্রিম কোর্টে যাবে।’’

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এ দিন বলেছেন, ‘‘রাজ্যের কয়েক হাজার মানুষ অসমের ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। ২৫ হাজার লোকের ঘরবাড়ি-দোকান ভাঙচুর হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সংবিধানের সব চেয়ে বড় স্তম্ভ হিসাবে বিচারব্যবস্থা যে ভাবে এগিয়ে এসেছে, তাকে আমি ভারতে নাগরিক হিসাবে স্বাগত জানাই।’’ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের বক্তব্য, ‘‘স্বরাষ্ট্র দফতর কোনও প্রকার হস্তক্ষেপ করবে না। আমি নিশ্চিত, আক্রান্ত মানুষ সুবিচার পাবেন।’’

রায়কে স্বাগত জানিয়েও সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘হাইকোর্ট যেমন সিট গঠনের নির্দেশ দিয়েছে, তার পাশাপাশি সিবিআইয়ের তদন্তও আদালতের নজরদারিতে হওয়া উচিত।’’ প্রদেশ কংগ্রেস নেতা শুভঙ্কর সরকারের বক্তব্য, ‘‘রাজ্য সরকার গোড়াতেই বিষয়টাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখলে সিবিআই পর্যন্ত যাওয়ার দরকারই হত না! সারদা-নারদের সিবিআই তদন্তের মতো পরিণতি যাতে না হয়, তা দেখা উচিত।’’

তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ অবশ্য বলেছেন, ‘‘রায় নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না। তবে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের যে রিপোর্টের ভিত্তিতে এই রায়, তা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট। এই নিয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement