বিক্ষোভ সত্ত্বেও এনআরসি-র রূপায়ণে বদ্ধপরিকার বিজেপি। ছবি: পিটিআই।
দেশে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) হবে কি না, তা নিয়ে নতুন সংশয় তৈরি হয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কথা থেকে। কিন্তু তাঁদের বঙ্গ ব্রিগেড বলছে, এনআরসি হবেই এবং নাগরিকত্বের তালিকা থেকে বাদ পড়বে পশ্চিমবঙ্গের ৭০ লক্ষ থেকে এক কোটি ভোটারের নাম। সেই সূত্র ধরেই তৃণমূল নেতৃত্বও মানুষকে সতর্ক করছেন— কেন্দ্র এনআরসি-র নাম বদলে একই জিনিস নিয়ে আসার চেষ্টা করছে। তবে সেই সঙ্গেই তৃণমূলের আশ্বাস, তারা কাউকে দেশ থেকে বার করতে দেবে না।
লোকসভা ভোটের আগে থেকে সদ্য সমাপ্ত সংসদ অধিবেশন পর্যন্ত— বহু বার সংসদের ভিতরে এবং বাইরে শাহ হুঙ্কার দিয়েছেন, গোটা দেশেই এনআরসি হবে এবং ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের আগেই তার কাজ শেষ হবে। অথচ, দেশ জুড়ে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) বিরোধী একটানা বিক্ষোভের মাঝখানে মোদী দাবি করেন, এনআরসি নিয়ে কোনও আলোচনাই হয়নি। তার পরে তাঁর ওই মন্তব্যকে সমর্থন করেন শাহ। ফলে এনআরসি হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয় মানুষের মধ্যে। কিন্তু রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ শনিবারেও বলেছেন, ‘‘এনআরসি দেশে হবেই। এটা আমাদের মতাদর্শগত অবস্থান। সুতরাং, সেটা আমরা রোজ বদলে ফেলতে পারব না। তবে কবে এবং কী ভাবে হবে, তা বলতে পারব না।’’ পাশাপাশি, রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু এ দিনই মন্তব্য করেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবৈধ ভোটারদের ভোটেই মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গে ৭০ লক্ষ থেকে এক কোটি যে অবৈধ ভোটার আছে, যে বাংলাদেশি মুসলিম অনুপ্রবেশকারী আছে, তাদের নাম আমাদের সরকার বাদ দেবে। তারা নাগরিক না হয়েও ভোট দিয়েছে। তাদের নাম বাদ দেওয়া হবে।’’ পরে ওই মন্তব্যের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়ে সায়ন্তন বলেন, ‘‘৭০ লক্ষ থেকে এক কোটি বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীর নাম নাগরিকত্ব থেকে বাদ পড়বে। পরে স্বাভাবিক ভাবেই ভোটার তালিকা থেকেও তাদের নাম বাদ যাবে।’’ তা হলে কি এনআরসি হচ্ছেই? সায়ন্তনের জবাব, ‘‘এনআরসি হবে, না ইংরাজিতে অন্য কোনও নাম দেওয়া হবে, জানি না। বাংলা ভাষায় বলি, নাগরিকত্ব থেকে ওরা বাদ পড়বে।’’
আরও পড়ুন: ইরফান হাবিবের নামে গুন্ডামির অভিযোগ রাজ্যপালের!
দিলীপবাবু ও সায়ন্তনের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা তো মানুষকে বলছি, এনআরসি-র নাম বদলে অন্য নামে নিয়ে আসার চেষ্টা হচ্ছে। সুতরাং, সতর্ক থাকতে হবে। আর দেশে যদি এতই অবৈধ ভোটার থাকেন, তা হলে তাঁদের ভোটে নির্বাচিত কেন্দ্রীয় সরকার, প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সবই অবৈধ। অন্যের দিকে আঙুল তোলার আগে বিজেপি নেতারা সেটা স্বীকার করে নিন।’’ একই সঙ্গে পার্থবাবুর আশ্বাস, ‘‘সায়ন্তন বসুরা আকাশ-কুসুম কল্পনা করতেই পারেন। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো বিপন্ন মানুষের পাশে থাকা জননেত্রী কখনওই কাউকে রাজ্য বা দেশ থেকে বার করে দিতে দেবেন না।’’