শাসককে বিঁধতে বিরোধীর অস্ত্র দেশদ্রোহী তকমা

সারদা-কাণ্ডে দুর্নীতির অভিযোগে জড়িয়ে পড়েছে তারা। সেই সারদার সূত্রেই প্রকাশ্যে এসেছিল জামাত-যোগের অভিযোগও। এ বার বর্ধমানে বিস্ফোরণের ঘটনায় ‘দেশদ্রোহী’র তকমা আরও বেশি করে চেপে বসল শাসক দলের গায়ে! বিজেপি, সিপিএম এবং কংগ্রেস সব বিরোধীরাই একযোগে দেশদ্রোহিতায় মদত দেওয়ার অভিযোগে সরব হয়েছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:১৫
Share:

সারদা-কাণ্ডে দুর্নীতির অভিযোগে জড়িয়ে পড়েছে তারা। সেই সারদার সূত্রেই প্রকাশ্যে এসেছিল জামাত-যোগের অভিযোগও। এ বার বর্ধমানে বিস্ফোরণের ঘটনায় ‘দেশদ্রোহী’র তকমা আরও বেশি করে চেপে বসল শাসক দলের গায়ে! বিজেপি, সিপিএম এবং কংগ্রেস সব বিরোধীরাই একযোগে দেশদ্রোহিতায় মদত দেওয়ার অভিযোগে সরব হয়েছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।

Advertisement

বর্ধমানের ঘটনার তদন্তে যত তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, সন্ত্রাসবাদী ও মৌলবাদী শক্তির সঙ্গে তৃণমূলের যোগসাজশের অভিযোগ তত সামনে আসছে। এক দিকে যখন শাসক দলের ভূমিকার দিকে আঙুল উঠছে, পাশাপাশি তাদের পরিচালিত রাজ্য সরকার শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতে তদন্তের দায়িত্ব তুলে দিতে অস্বীকার করে গিয়েছে। শাসক দল ও রাজ্য সরকারের এই অবস্থানের জন্যই তাদের আরও বেশি করে কাঠগড়ায় তুলেছে বিরোধীরা। তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে পাল্টা কটাক্ষ করেছেন, বিরোধীদের কাছে তাঁদের দেশপ্রেম শিখতে হবে না!

মৌলবাদ-সন্ত্রাসবাদের বাড়বাড়ন্ত এবং তৃণমূলের যোগসাজশের বিরুদ্ধে বর্ধমানে প্রথম মিছিল করে সিপিএম। তার পাল্টা মিছিল করে বুধবার তৃণমূল দাবি করেছিল, এনআইএ তদন্তের প্রয়োজন নেই! সেই বর্ধমানেই স্টেশন থেকে কার্জন গেট পর্যন্ত বৃহস্পতিবার মিছিল করেছে বিজেপি। মিছিল ছিল কলকাতাতেও। দাবি ছিল খাগড়াগড়ের ঘটনায় এনআইএ তদন্ত (তখনও কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার ভার নেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষিত হয়নি)। বর্ধমানে মিছিল শেষে বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ বলেন বলেন, “এ সব ঘটনার মধ্যে দিয়ে মনে হচ্ছে, সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে তৃণমূলের একটি যোগসাজশ তৈরি হয়েছে। তৃণমূল যদি এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত না-ই থাকে, তবে তাদের কার্যালয়ের উপরে বোমা ফাটার সঙ্গে সঙ্গে নীচ থেকে দলের বোর্ড খুলে ফেলল কেন?” রাহুলবাবুর অভিযোগ, “অনিয়ন্ত্রিত মাদ্রাসায় জঙ্গি কার্যকলাপ নিয়ে বিগত কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যকে সতর্ক করেছিল। তার পরেই দেখা গেল রাজ্য ১০ হাজার মাদ্রাসাকে অনুমোদন দেওয়ার কথা বলল! সারদা-কাণ্ডের সঙ্গে যেমন তৃণমূলের যোগ আছে, বর্ধমান-কাণ্ডে তেমনই তাদের যোগ আছে।”

Advertisement

বস্তুত, দিনভর সব বিরোধী দলই এনআইএ-কে দিয়ে তদন্ত করানোর দাবি তুলে গিয়েছে। আনিসুর রহমানের নেতৃত্বে ১৭ জন বাম বিধায়কের দল খাগড়াগড়ে গিয়ে এলাকাবাসীদের সঙ্গে কথা বলে শাসক দলের দিকেই আঙুল তুলেছে। পুলিশকে দিয়ে প্রমাণ নষ্টের অভিযোগ করেছে। আনিসুর বলেছেন, “এলাকায় এই রকম কার্যকলাপ চলছে আর শাসক দল তা জানে না, এটা হতে পারে না! আমরা এই সব বিষয়গুলি বিধানসভায় তুলব, রাজ্যপালকেও জানাব।” একই ভাবে কংগ্রেসের পরিষদীয় দলনেতা মহম্মদ সোহরাবও জানিয়েছেন, তাঁদের বিধায়ক-দল নিয়ে গিয়ে ১৫ অক্টোবর বর্ধমানে মিছিল হবে।

বিরোধী নেতারা অবশ্য শাসকের অভিযোগ নস্যাৎ করে দেশ-বিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগেই তাদের বিঁধেছেন। বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু যেমন বলেছেন, “তৃণমূলের জন্মই হয়েছে ভারতের এবং পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থ-বিরোধী কাজ করতে! মৌলবাদী, নাশকতার শক্তি এ রাজ্যের শাসক দল ও তাদের নেতা-কর্মীদের পৃষ্ঠপোষকতায় নিরাপদে অপরাধমূলক কাজ চালিয়ে যাচ্ছে!” তাঁর আরও অভিযোগ, “এই মৌলবাদী কার্যকলাপের ব্যাপারে তৃণমূলের মদত আছে বলেই পুলিশ-প্রশাসন সক্রিয় ব্যবস্থা নেননি। উল্টে নমুনা সংরক্ষণের পরিবর্তে তড়িঘড়ি সব প্রমাণ নষ্ট করা হয়েছে।” এনআইএ তদন্তের দাবি তুলেই বিমানবাবুর আরও বক্তব্য ছিল, “বিজেপির মতোই তৃণমূলও রাজ্যে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের লাইন নিয়ে চলছে এবং সাম্প্রদায়িক অস্থিরতার বাতাবরণ তৈরি করছে।”

একই ভাবে কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়া বলেছেন, “প্রতিবেশী বাংলাদেশ যেখানে বলেছে তাদের মাটিকে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের জন্য ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না, সেখানে ভারতের একটি অঙ্গরাজ্যের মাটিতে এই ধরনের ঘটনা অভিপ্রেত নয়। যে ভাবে বর্ধমানের বিস্ফোরণস্থলে পাওয়া অনেক নথিপত্র পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে, সুস্থ মস্তিষ্কের কোনও মানুষ কি মেনে নিতে পারবেন?”

তৃণমূলের মহাসচিব পার্থবাবু বিরোধীদের পাল্টা আক্রমণ করে বলেছেন, “দেশপ্রেমের বাক্য আমরা বিজেপি বা সিপিএমের কাছ থেকে শিখতে চাই না! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বাংলার সরকার দেশের অগ্রগতি, প্রগতি, সমাজতন্ত্রকে নিয়েই উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলেছে। প্রতি পদক্ষেপে বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেসের মতো সাইনবোর্ড-ওয়ালারা যা খুশি বলছেন! প্রশাসনকে দুর্বল করার চেষ্টা করছেন। বাংলার মানুষ এ সব ভাল ভাবে নেবেন না।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement