লগ্নি আনতে সোমবার যখন মিউনিখ পৌঁছলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সেই সময়ই কলকাতায় বসে শিল্পায়নে তাঁর ব্যর্থতার প্রতিবাদে আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য বিজেপি। দলের কোর কমিটির বৈঠকে এ দিন সিদ্ধান্ত হয়েছে, পুজোর পর থেকে শিল্পবিমুখতার অভিযোগে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তেড়েফুঁড়ে আন্দোলনে নামা হবে। পাশাপাশি, সিঙ্গুর-রায় নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর দল যতই উৎসবে মাতুন না কেন, আদতে রাজ্যের কৃষকরা যে বিপন্ন দশায় দিন কাটাচ্ছেন, তা-ও আনা হবে প্রচারে। ২০১৮-র পঞ্চায়েত এবং ২০১৯-এর লোকসভা ভোট পর্যন্ত কৃষি এবং শিল্প— এই দুই হাতিয়ারেই মমতাকে বিদ্ধ করতে চাইছে বিজেপি।
দলীয় নেতৃত্বের যুক্তি, বিজেপি শাসিত রাজ্য শুধু নয়, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, ওড়িশার মতো অ-বিজেপি রাজ্যগুলিও সময়ের দাবি মেনে উন্নয়মুখী হয়েছে। রাজ্যের ছাত্র-যুবদের কর্মসংস্থানের জন্য শিল্পায়ন ও পরিকাঠামো উন্নয়নের পথে হাঁটছে তারা। ওই সব রাজ্যের মানুষের মাথাপিছু গড় আয় বাড়ছে। তুলনায় অনেক পিছিয়ে বাংলা। উপরি শাসক দলের প্রশ্রয়ে তোলাবাজি ও সিন্ডিকেট চক্রের রমরমায় বিনিয়োগের অনুকূল পরিস্থিতিটাও নেই!
দিলীপ ঘোষদের আরও বক্তব্য, সিঙ্গুরের রায়ের প্রেক্ষিতে তৃণমূল সরকার নিজেদের কৃষক-বান্ধব ভাবমূর্তি প্রচারে ব্যস্ত হয়ে পড়লেও তা দিয়ে গোটা রাজ্যের কৃষির ম্লান ছবি আড়াল করা যাচ্ছে না। রাজ্যের সর্বত্রই কৃষকরা ফসলের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে অভাবী বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে কৃষকরা আত্মহত্যাও করছেন। সরকার কৃষক মান্ডি গড়ার গালভরা দাবি করলেও বেশির ভাগ জায়গাতেই সেগুলি অকেজো হয়ে রয়েছে। এখান থেকেই বিজেপি-র সিদ্ধান্ত, মমতার সরকার শিল্প এবং কৃষি— দুইয়েই ব্যর্থ।
কিছু দিন আগে রাজ্যে এসে বিজেপি সাংসদ মীনাক্ষী লেখি বলেছিলেন,‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগে নিজের রাজ্যটা ভাল করে চালাতে শিখুন।’’ নিজের অপারগতা ঢাকতেই মমতা কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ তুলছেন বলে বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতাদের দাবি। রাজ্য নেতারা জানাচ্ছেন, শিল্পায়ন এবং কৃষির উন্নতির দাবিতে তাঁদের লাগাতার আন্দোলনে এর পর কেন্দ্রীয় নেতারাও সামিল হবেন। পাশাপাশি, কেন্দ্রের বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়নের মমতা-সরকারের ব্যর্থতা এবং গাফিলতির কথাও বাংলায় এসে প্রচার করবেন সংশ্লিষ্ট দফতরের মন্ত্রীরা।
বিজেপি-র একাংশের ব্যাখ্যা, এ রাজ্যের আবহাওয়ায় যে ধর্মনিরপেক্ষতা রয়েছে, তাতে প্রথাগত হিন্দুত্বের রাস্তায় এখানে সাফল্য পাওয়া কঠিন। এখানকার জনমানসকে ছুঁতে হলে শিল্প এবং কৃষির মতো জীবন-জীবিকামুখী দাবিতে আন্দোলনে নামা দরকার। তবে মূল হিন্দুত্বের তত্ত্ব থেকেও তারা সরছে না। যে কারণে অনুপ্রবেশ নিয়েও আন্দোলন জারি রাখা হবে বলে দলীয় নেতৃত্ব জানিয়েছেন।
তৃণমূল অবশ্য শিল্প এবং কৃষি নিয়ে বিজেপি-র অভিযোগ মোটেই মানছে না। শাসক দলের এক নেতার বক্তব্য, ‘‘বিজেপি নেতিবাচক রাজনীতি করছে। বাম জমানার নেতিবাচকতার রেশ এখনও রাজ্যে রয়েছে ঠিকই, কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী সেখান থেকে বেরোতে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। লগ্নি টানতেই তিনি জার্মানি গিয়েছেন। তৃণমূলের সাফল্যে হতাশ হয়ে বিজেপি ভুল বকছে।’’