পরেশ পালের বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র
আইনমন্ত্রীর ধর্না উঠেছে। কিন্তু সেই জায়গায় সোমবার মোটরবাইক বাহিনী নিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়ে এলেন তৃণমূল বিধায়ক পরেশ পাল।
তবে দলের পতাকা নিয়ে নয়। বেলেঘাটার বিধায়ক পরেশবাবু এ দিন সল্টলেকে সিবিআই দফতরের সামনে হাজির হয়েছিলেন ‘ক্যালকাটা সিটিজেন্স ফোরাম’ নামে একটি নাগরিক সংগঠনের নেতা হিসেবে। অনেকেই বলছেন, আইনমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য দলীয় মহিলাদের নিয়ে গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার ওই কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার স্থানীয় দফতরের সামনে ধর্নায় বসে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন। এই নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা ঠুকে দেওয়ারও হুমকি দিয়েছেন কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান। এ বার সেই ধরনের বিতর্ক এড়াতেই দলের বদলে নাগরিক সংগঠনের ছাতা নিয়েছেন পরেশবাবু।
এ দিন বেলা ৩টে নাগাদ বেলেঘাটা থেকে ম্যাটাডর ভ্যান ও মোটরবাইকে চেপে শ’তিনেক লোক বিকাশ ভবনের সামনে জড়ো হন। সেখান থেকে হেঁটে সিজিও কমপ্লেক্সে সিবিআইয়ের দফতরের সামনে জড়ো হন বিক্ষোভকারীরা। মাইকে সিবিআই-কে ধিক্কার দিতে থাকেন তাঁরা। সিবিআই অধিকর্তা রঞ্জিত সিন্হার কুশপুতুলও পোড়ানো হয়। পরেশবাবু বলেন, “যিনি নিজেই অভিযুক্ত, তাঁকেই তদন্তকারী সংস্থার শীর্ষ পদে বসানো হয়েছে!” বিধায়কের অভিযোগ, রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট সিবিআই শুধু তৃণমূল নেতাদেরই সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারিতে ফাঁসাচ্ছে। বাম আমলে সারদা তৈরি হলেও তাদের নেতাদের কিছু বলা হচ্ছে না। কিন্তু রাজ্য সরকারের পুলিশ এক বছর ধরে তদন্ত চালানোর পরেও কোনও বাম নেতাকে জেরা করল না কেন? পরেশবাবুর পাল্টা প্রশ্ন, “এ ব্যাপারে আপনাদের কেন উত্তর দেব?”
দলের পতাকা না-নিলেও অবশ্য নতুন বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন পরেশবাবু। কী সেই বিতর্ক?
এ দিন সকালেই সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সের গেটে একটি নির্দেশিকা ঝুলিয়ে দিয়ে যায় বিধাননগর পুলিশ। ১৩ সেপ্টেম্বর তাতে বলা হয়, ময়ূখ ভবন থেকে পূর্ত ভবন এবং পূর্ত ভবন থেকে লালকুঠি আইল্যান্ড (সিজিও কমপ্লেক্স) পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। পরেশবাবুদের মোটরবাইক বাহিনী যে-রাস্তা দিয়ে এসেছে, সেই এলাকায় বিক্ষোভ-মিছিল নিষিদ্ধ। তা হলে শাসক দলের বিধায়ক প্রায় ৩০০ লোক নিয়ে মিছিল করলেন কী করে?
এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি বিধাননগর পুলিশের কর্তারা। আইন ভেঙে কেন মিছিল করলেন, তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে পরেশবাবু বলেছেন, “সিজিও কমপ্লেক্স এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে কি না, তা আমার জানা নেই।” তবে ভবিষ্যতে যে ফের এ ভাবে বিক্ষোভ হতে পারে, তার ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছে তৃণমূলেরই একাংশ। তৃণমূলের মহিলা সংগঠন অবশ্য শনিবার থেকেই সিবিআই দফতরের সামনে ধর্না বন্ধ করে দিয়েছিল। যদিও সিবিআই দফতরের সামনের ওই জায়গাটা ১৪৪ ধারার আওতায় পড়ছে না বলেই পুলিশের একাংশের অভিমত। এ দিন আইনমন্ত্রী চন্দ্রিমাদেবী বলেছেন, “দু’দিনের ধর্না কর্মসূচি ছিল আমাদের। সেটাই হয়েছে। তবে দল বললে ফের সিবিআই দফতরের সামনে ধর্নায় বসা হবে।”
এ দিন বিজেপি-র পক্ষ থেকে বিধাননগর কমিশনারেটে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। তাদের দাবি, সারদা কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত, রাজ্যসভার তৃণমূল সদস্য আহমেদ হাসান ইমরানকে পদত্যাগ করতে হবে।