আক্রান্ত এনআইএ আধিকারিককে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চেয়ে নোটিস পাঠানো হয়েছে। — ফাইল চিত্র।
তিন দিন অতিক্রান্ত। পূর্ব মেদিনীপুরের ভূপতিনগরে এনআইএ আধিকারিকদের উপরে হামলার ঘটনায় এখনও ধরা পড়ল না কেউ। তবে ঘটনার তদন্তে তৎপর হয়েছে ভূপতিনগর থানার পুলিশ।
পুলিশ সূত্রের খবর, আক্রান্ত এনআইএ আধিকারিককে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চেয়ে নোটিস পাঠানো হয়েছে। আগামী ১১ এপ্রিলের মধ্যে ভূপতিনগর থানায় হাজির হতে বলা হয়েছে তাঁকে। জখম ওই আধিকারিকের মেডিক্যাল রিপোর্টও চেয়ে পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি, কয়েক জন গ্রামবাসীকেও নোটিস দিয়ে ডেকেছে পুলিশ। এনআইএ আধিকারিকদের যে গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে বলে অভিযোগ, সেটিকেও ভূপতিনগর থানার হাতে তুলে দিতে বলা হয়েছে। গাড়িটি ফরেন্সিক পরীক্ষায় পাঠানো হবে।
কিন্তু, অভিযুক্তদের গ্রেফতার না করে কেন আগে অভিযোগকারীকে ডেকে পাঠানো হচ্ছে, উঠছে সেই প্রশ্ন।
বিজেপির স্থানীয় বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ মাইতির দাবি, ‘‘সন্দেশখালির মতো ভূপতিনগরেও তৃণমূলের দুষ্কৃতীদের ছত্রছায়ায় রেখেছে পুলিশ। ওদের ধরলে তো লোকসভা নির্বাচনে ছাপ্পা ভোট দেওয়ার লোক থাকবে না তৃণমূলের।’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও বলেন, ‘‘যাদের ধরতে গিয়েছিল আর এনআইএ-র উপরে হামলা করেছে যারা, তারা তৃণমূলের নেতা, বোমার কারবারি। তাদের ধরবে কেন?’’ তৃণমূলের কুণাল ঘোষ এক্স হ্যান্ডলে পাল্টা লিখেছেন, ‘‘আমাদের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দৃঢ় আন্দোলনে এনআইএ আধিকারিককে সরিয়েছে। তবে আমরা চাই পুরো ঘটনার প্রকৃত তদন্ত।’’
দু’বছরের পুরনো ভূপতিনগর বিস্ফোরণ-কাণ্ডের তদন্তে গিয়ে গত শনিবার আক্রান্ত হন এনআইএ আধিকারিকেরা। এনআইএ আধিকারিক এবং সিআরপি জওয়ানদের বিরুদ্ধে পাল্টা শ্লীলতাহানি, ভাঙচুরের লিখিত অভিযোগ করেন এনআইএ-র হাতে ধৃত তৃণমূল নেতা মনোব্রত জানার স্ত্রী মণি জানা। কাঁথির এসডিপিও দিবাকর দাস বলছেন, ‘‘দু’টি মামলারই তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্তের অগ্রগতিও ঘটেছে।’’ তা হলে হামলার ঘটনায় কেউ গ্রেফতার হল না কেন? এসডিপিও-র দাবি, ‘‘অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।’’
মামলা-পাল্টা মামলা নিয়েই কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে এনআইএ। মঙ্গলবার তাদের আইনজীবী বিচারপতি জয় সেনগুপ্তের এজলাসে বিষয়টি উত্থাপন করেন এবং এ ব্যাপারে মামলা দায়েরের অনুমতি চান। বিচারপতি সেনগুপ্ত সেই অনুমতি দিয়েছেন। আজ, বুধবার মামলাটির শুনানি হতে পারে বলে আদালত সূত্রের দাবি।
জানুয়ারি গোড়ায় সন্দেশখালিতে শেখ শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশি করতে গিয়ে আক্রান্ত হন ইডির আধিকারিক ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা। সেখানেও ইডির অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা দায়ের করেছিল পুলিশ, তেমনই ইডির অফিসারদের বিরুদ্ধেও শ্লীলতাহানি, জোর করে বাড়িতে ঢোকার মতো ধারায় মামলা হয়েছিল। আইনজীবীদের একাংশ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, সন্দেশখালি-কাণ্ডে ইডির বিরুদ্ধে মামলা রুজুর ক্ষেত্রে পুলিশের তৎপরতা এবং ভূমিকা হাই কোর্ট সমালোচিত হয়েছিল।
এনআইএ সূত্রে খবর, ভূপতিনগর বোমা বিস্ফোরণে তৃণমূল নেতা বলাইচরণ মাইতি ও মনোব্রত জানাকে গ্রেফতারের পাশাপাশি চারটি মোবাইল বাজেয়াপ্ত হয়েছিল। তার তথ্য যাচাই করে ওই দু’জনের সঙ্গে পূর্ব মেদিনীপুরের বাইরেও বিভিন্ন লোকজনের সক্রিয় যোগাযোগের প্রমাণ মিলেছে।
তদন্তকারীদের দাবি, ওই কারখানায় উচ্চ ক্ষমতার দেশি বোমা তৈরি করে চাহিদা অনুযায়ী নির্দিষ্ট ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া হত। ধৃতদের জেরায় স্থানীয় কয়েক জন রাজনৈতিক নেতার সক্রিয়তাও জানা গিয়েছে। আজ, বুধবার ধৃতদের এনআইএ বিশেষ আদালতে তোলা হবে।