নৈরাজ্যের রাজনীতিই এখন বন্‌ধের ‘সংস্কৃতি’

বামেদের দু’দিন ব্যাপী বন্‌ধ রাজনীতি ঘিরে দিকে দিকে হিংসার ছবি সেই পুরনো প্রশ্নই নতুন করে তুলে আনছে। বন্‌ধ সমর্থনকারীদের তাণ্ডবে রেহাই পেল না স্কুলের ছাত্রছাত্রীরাও। কোথাও ভাঙচুর চলল স্কুলবাসে, কোথাও আক্রান্ত হল স্কুলের পুল কার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:৪০
Share:

কর্মনাশা: কাজ বন্ধ বারাসতের এক ডাকঘরে। বুধবার। নিজস্ব চিত্র

রাজনৈতিক কর্মসূচি, নাকি নৈরাজ্য, অরাজকতা?

Advertisement

বামেদের দু’দিন ব্যাপী বন্‌ধ রাজনীতি ঘিরে দিকে দিকে হিংসার ছবি সেই পুরনো প্রশ্নই নতুন করে তুলে আনছে। বন্‌ধ সমর্থনকারীদের তাণ্ডবে রেহাই পেল না স্কুলের ছাত্রছাত্রীরাও। কোথাও ভাঙচুর চলল স্কুলবাসে, কোথাও আক্রান্ত হল স্কুলের পুল কার।

বঙ্গ রাজনীতিতে এ অবশ্য নতুন কোনও ঘটনা নয়। সুদূর অতীত থেকে ঘটমান বর্তমান— বন্‌ধ-হরতাল ঘিরে বার বার উত্তাল হয়েছে এ রাজ্য। ১ পয়সা ট্রাম ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে ট্রাম-বাস পোড়ানোর আন্দোলন তো এখন ইতিহাসের পাতায় জায়গা নিয়েছে।

Advertisement

দীর্ঘ দিন ধরে যে কোনও বন্‌ধেই কোনও না কোনও ভাবে হিংসার আমদানি রাজ্য রাজনীতিতে যেন ‘স্বাভাবিক’ ঘটনা। এতে সম্পত্তিহানি থেকে জীবনহানি কিছু বাদ যায় না। কলকাতার রাজপথে আশির দশকে কংগ্রেসের ডাকা বন্‌ধের দিন সরকারি বাসে আগুন-বোমা ছোড়ার ঘটনা তারই এক মর্মান্তিক সাক্ষী। পরবর্তীকালেও এমন হামলা বার বার ঘটেছে।

কেন রাজনৈতিক দলগুলি এ ধরনের হিংসার আশ্রয় নেয়? বিশেষজ্ঞদের মতে, কারণ মূলত দু’টি। এক, শাসক বা প্রশাসনকে চ্যালেঞ্জ জানানো। দুই, পেশি শক্তি প্রদর্শন করে জনগণের মধ্যে আতঙ্কের বাতাবরণ তৈরি করা। যাতে মানুষজন বেরতে ভয় পান।

যেটা আরও বেশি লক্ষণীয়, তা হল, কোনও ক্ষেত্রেই কোনও রাজনৈতিক দল এই ধরনের ঘটনার দায় নিতে চায় না, বরং তা এড়ানোর সব রকম চেষ্টা করে। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে প্রশাসনিক কারণে তাদের জনজীবন ‘স্বাভাবিক’ রাখার দায় থেকে যায়। আর বিরোধী পক্ষ যখন বন্‌ধ ডাকে, তখন যানবাহন দোকানপাটের উপর হামলা হলে অভিযোগের দায় স্বাভাবিক ভাবেই বিরোধীদের উপর বর্তায়।

এবারেও যেমন বামেদের ডাকা পর পর দু’দিনের বন্‌ধে জনজীবনে তেমন ছাপ পড়েনি। কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় হাঙ্গামা-হুজ্জুতি করে বন্‌ধ ‘সফল’ করার চেষ্টা দেখা গিয়েছে। রেল অবরোধ, জন পরিবহণের উপর আক্রমণ ইত্যাদি তারই প্রমাণ।

মঙ্গলবার বন্‌ধের প্রথম দিন বারাসতে স্কুলবাসে আক্রমণ চালানোর অভিযোগ উঠেছিল যে নেতার বিরুদ্ধে, ফরওয়ার্ড ব্লকের সেই সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমি কাছাকাছি থাকলেও, ঘটনাস্থলে ছিলাম না।’’ বুধবার সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, ‘‘হাওড়ায় বাস ভাঙচুরের ঘটনার সঙ্গে ধর্মঘটকারীদের কোনও সম্পর্ক নেই।’’ এ দিন রাজাবাজারে স্কুল ছাত্র বোঝাই পুল কারে আক্রমণ চালানোর ঘটনা নিয়েও ধরি মাছ না ছুঁই পানি অবস্থান নিয়েছে বামেরা। সূর্যবাবু বলেন, ‘‘কোনও ভাবেই উচিত কাজ হয়নি। কারা জড়িত খোঁজ নিচ্ছি। ওই এলাকায় যাঁরা স্থানীয় নেতা, তাঁরা সকলেই প্রায় সকলেই এখন পুলিশ হেফাজতে। ফলে বিস্তারিত জানতে পারিনি।’’ কোচবিহারেও বাস ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে।

প্রতিটি ঘটনারই সমালোচনা করে এ দিন রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। জনগণ ওদের সঙ্গে নেই, তাই হিংসার আশ্রয় নিতে হচ্ছে।’’ অথচ মাস কয়েক আগে এই দিলীপবাবুই তাঁদের ডাকা বাংলা বন্‌ধে বাস জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনায় দায়িত্ব এড়িয়ে গিয়েছিলেন। সূর্যবাবুর মতোই জানিয়েছিলেন, তাঁরা খোঁজ নেবেন।

এখন যে দল শাসন ক্ষমতায়, এক কালে তাঁরাও একই ভাবে বন্‌ধ-হরতালে শক্তির আস্ফালন করেছে। তবে ক্ষমতায় আসার পর এখন আর প্রকাশ্যে সেই পুরনো কাসুন্দি ঘাঁটতে রাজি নন নেতা-মন্ত্রীরা। বরং উত্তর এড়িয়ে তাঁদের ব্যাখ্যা, ‘‘আমরা যখন বিরোধী ছিলাম তখন বামেদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে বন্‌ধ ডাকা ছাড়া কোনও রাস্তা ছিল না।’’

রাজ্যের সাধারণ মানুষের বক্তব্য, শাসক এবং বিরোধীদের অবস্থান যতই বদলাক, নেতাদের ভূমিকা থেকেই বোঝা যায় ‘বাহুবলী’ রাজনীতির দাপট কেন বন্ধ হয় না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement