শাস্তি চাই, কান্না ছেলেদের

বড় ছেলে মাসুদ রানা সেনাকর্মী, মেজো ছেলে সোহেল অসম রাইফেলে কর্মরত। তাঁরা বলছেন, “আমরা দেশের সুরক্ষায় বাইরে থাকি, কিন্তু আমাদের পরিবারের সুরক্ষা কোথায়?”

Advertisement

নমিতেশ ঘোষ

কোচবিহার শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০১৯ ০৩:০৬
Share:

শোকার্ত: উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মৃত মজিরুদ্দিনের পরিজনেরা। নিজস্ব চিত্র

তখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল। মজিরুদ্দিন সরকারের (৫০) মৃতদেহ শায়িত তাঁর বাড়ির দাওয়ায়। তাঁর তিন ছেলে ডুকরে ডুকরে কাঁদছে।

Advertisement

বড় ছেলে মাসুদ রানা সেনাকর্মী, মেজো ছেলে সোহেল অসম রাইফেলে কর্মরত। তাঁরা বলছেন, “আমরা দেশের সুরক্ষায় বাইরে থাকি, কিন্তু আমাদের পরিবারের সুরক্ষা কোথায়?” সোহেল বলেন, “বিজেপি’র জন্যেই বাবার মৃত্যু হল।” ছোট ছেলে রুবেল ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। সে বলছিল, “যারা এমনটা করল তাদের কঠিন শাস্তি চাই।” শুক্রবার কোচবিহারের পুন্ডিবাড়ি থানার উত্তর কালারুইয়ের কুঠিতে শোকের ছায়া নেমে আসে।

এ দিন সকালে ওই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গোটা গ্রাম থমথমে। যেখানে গন্ডগোল হয়েছিল, তার আশেপাশে মানুষের জটলা। জায়গায় জায়গায় জড়ো হয়ে রয়েছেন তৃণমূল কর্মীরা। সেখান থেকেই গলিপথে মজিরুদ্দিনের বাড়ি। বাড়ির সামনে প্রতিবেশীরা ভিড় করেছেন। বাড়ির ভেতর থেকে ভেসে আসছে কান্নার আওয়াজ। প্রতিবেশীরা জানান, বৃহস্পতিবার রাত থেকেই জেগে আছে গোটা গ্রাম। সেই থেকে কেঁদেই চলেছে মজিরুদ্দিনের স্ত্রী আফরোজা বিবি। জ্ঞান হারিয়েছেন কয়েকবার। কান্নার মধ্যেই আফরোজা বলছিলেন, সকালে চা খেয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন তাঁর স্বামী। দুপুরে বাড়ি ফিরে ভাত খাওয়ার কথা ছিল। ফোনে দু’বার স্ত্রীর সঙ্গে কথাও হয়েছিল। কিন্তু ওইদিন আর বাড়ি ফেরা হয়নি তাঁর। এদিন মজিরুদ্দিনের দেহ ফিরতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তাঁর কথায়, “কী ভাবে থাকব আমি? কেন এমন হল। আমি বিচার চাই।”

Advertisement

মজিরুদ্দিন ওই এলাকায় তৃণমূলের খুব পরিচিত মুখ বলেই পরিচিত ছিলেন। প্রতিবেশীদের তাঁর সখ্যও ছিল। তিন ছেলেদের মধ্যে বড় দুইজনের বিয়ে হয়েছে। দু’জন নাতিও রয়েছে তাঁর। সব নিয়ে সংসার তাঁর।

তাঁর ভাই আব্দুল কাদের বলেন, “দুই ছেলে চাকরি সূত্রে বাইরে থাকেন। তাই সংসারে তিনিই প্রধান ভরসা ছিলেন। বড় ছেলে মাসুদ পঞ্জাবে কর্মরত, আর ছোটজন সোহেল অরুণাচল প্রদেশ। বাবার মৃত্যুসংবাদ পেয়ে বিমানে চেপে এ দিনই বাগডোগরা হয়ে বাড়ি ফেরেন তাঁরা। বৃহস্পতিবার সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন মজিরুদ্দিন। তৃণমূল কর্মীরা জানান, বিজেপির সংকল্প যাত্রা ঘিরে এলাকায় একটু উত্তেজনা ছিল আগে থেকেই মজিরুদ্দিন নিজের কাজ সেরে স্যুটিং ক্যাম্পেই ছিলেন। দুপুরের পর বিজেপি সংকল্প যাত্রার মিছিল নিয়ে সেখানে ঢুকে পার্টি অফিস ভাঙচুর করে। সেই সময়ই বাধা দেয় মজিরুদ্দিন। তাঁর উপরে হামলা হয়। নার্সিংহোমে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

বিজেপি অবশ্য বারে বারেই দাবি করেছে, ওই মৃত্যুর জন্য বিজেপি দায়ী নয়। তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ আনা হচ্ছে। বিজেপি’র কোচবিহার জেলার সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় চক্রবর্তী বলেন, “তৃণমূলের ও তাঁর পরিবারের কথার মধ্যে অনেক ফারাক। ভুল বুঝিয়ে বা ভয় দেখিয়ে ওঁদের দিয়ে এমনটা বলানো হচ্ছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement