করোনা পরবর্তী সময়ে ভিড় এড়াতে নিরিবিলি পরিবেশের খোঁজে পর্যটকদের মধ্যে ‘অফ বিট’ জায়গায় যাওয়ার প্রবণতা বাড়ে। —ফাইল চিত্র।
মুন্দো কথার অর্থ ‘ভগবানের আশীর্বাদপ্রদত্ত গ্রাম’। কালিম্পংয়ের লেপচাদের এই গ্রাম পরিচিত বেন্দা নামে। এই গ্রাম এখন হাতছানি দিয়ে ডাকছে পর্যটকদের। বেন্দা যেমন লেপচাদের গ্রাম, উত্তরবঙ্গের ঘালেটার তেমন নেপালিদের গ্রাম। পর্যটনস্থল হিসাবে এই গ্রামও এখন ভ্রমণ-পিপাসুদের খুবই প্রিয়।
পর্যটন মানচিত্রে উঠে আসছে এমন অনেক নতুন ‘তারকা’ পর্যটনস্থল। ভিড় এড়াতে সেই সব পর্যটন স্থলেই এখন ভিড় জমাচ্ছেন পর্যটকেরা।
করোনা পরবর্তী সময়ে ভিড় এড়াতে নিরিবিলি পরিবেশের খোঁজে পর্যটকদের মধ্যে ‘অফ বিট’ জায়গায় যাওয়ার প্রবণতা বাড়ে। আর এমন অফ বিট জায়গার খোঁজ করতে গিয়েই বহু পর্যটকের সামনে খুলে যায় পাবং, পানবু বা পাথরার মতো গ্রামের দরজা। পাবং, পানবু কালিম্পংয়ে। পশ্চিম মেদিনীপুরের গ্রাম পাথরা।
পর্যটন ব্যবসায়ীদের সংগঠন ট্রাভেল এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গল (টাব)-এর সদস্য অমিতাভ সরকার বলেন, ‘‘গত বছর টাব পর্যটন দিবসের অনুষ্ঠান কলকাতার বদলে করেছিল পাথরায়। এই গ্রামে কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, মন্দির রয়েছে। সেগুলো দেখতে বিদেশিরাও আসেন।’’ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব টুর অপারেটর্স-এর রাজ্য সভাপতি দেবজিৎ দত্ত জানান, করোনার পর থেকে গোটা বাংলায় এমন ৭০-৮০টি জায়গা প্রচারের আলোয় উঠে এসেছে। যার বেশির ভাগই উত্তরবঙ্গে।
কিন্তু শুধুই কি নিরিবিলি পরিবেশে কয়েকটা দিন কাটানোর টানেই পর্যটকেরা এই সব জায়গায় ঘুরতে যাচ্ছেন? পর্যটন বিশেষজ্ঞদের মতে, সেটা একটা কারণ তো বটেই। এ ছাড়া এই সব জায়গায় পর্যটকদের পকেটে চাপ কম পড়ে। নিয়মিত পর্যটক আসতে থাকায় সেই সব জায়গায় গড়ে উঠছে উন্নতমানের হোম স্টে। বর্তমানে ইন্টারনেটের কল্যাণে এমন সব জায়গার নানা তথ্য চলে আসছে পর্যটকদের হাতের মুঠোয়।
শিলিগুড়ির বৃষ্টি দে গত জুলাইয়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে বেন্দা ঘুরে এসেছেন। বৃষ্টির কথায়, ‘‘ঘুরতে যাওয়ার জন্য একটু কম পরিচিত জায়গার খোঁজ করছিলাম। সমাজমাধ্যমে গ্রামটি নিয়ে পোস্ট, ভিডিয়ো, রেটিং দেখি।’’ পানবু থেকে দলবল নিয়ে ফিরে এসে সুমন পাল, শান্তনু মৌলিকেরা জানাচ্ছেন, অসাধারণ প্রাকৃতিক শোভা। দু’দিন হাত-পা ছড়িয়ে বিশ্রাম নেওয়ার আদর্শ জায়গা।
বেন্দা, পাবংয়ের মতো জায়গায় এখন বহু পর্যটকের পা পড়ায় সেখানে সড়ক, বিজলি, হোটেল, হোম স্টে-সহ নানা পরিকাঠামোও গড়ে উঠছে। পাশাপাশি ‘দায়িত্বশীল পর্যটন’-এর বিষয়টিও মনে করিয়ে দিচ্ছেন তাঁরা।
‘দায়িত্বশীল পর্যটন’ কী? দেবজিতের ব্যাখ্যা, পর্যটনের মাধ্যমে কোনও পর্যটনস্থলের লক্ষণীয় আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব। কিন্তু মাথায় রাখতে হবে এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কোনও ভাবেই পর্যটক এবং পর্যটন শিল্পের দ্বারা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি-ঐতিহ্যের যেন ক্ষতি না হয়। সেই জায়গার পরিবেশ এবং বন্যজীবনকে রক্ষা করতে হবে। তাঁর কথায়, ‘‘পর্যটকদের চাপের কারণে ওই সব জায়গায় এখন হোটেল প্রয়োজন। কিন্তু তা করতে গিয়ে গাছপালা কেটে ফেলা চলবে না। করোনার পরে বিশ্বজুড়ে দায়িত্বশীল পর্যটনের গুরুত্ব বাড়ছে। এটাই পর্যটনের ভবিষ্যৎ।’’