প্রতিদ্বন্দ্বী ওড়িশা, বাংলার রসগোল্লা ফের অগ্নিপরীক্ষায়

বাংলার পরে ওড়িশাও তাদের ‘রসগোলা’র জন্য জিয়োগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন বা জিআই-স্বীকৃতি পেয়েছে সম্প্রতি।

Advertisement

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৯ ০৪:১৩
Share:

প্রতীকী ছবি।

জিআই-তকমা পেয়েও শান্তি নেই! নিজের বিশুদ্ধতা বা অনন্যতার মান যাচাইয়ে বাংলার রসগোল্লাকেও অগ্নিপরীক্ষায় বসতে হচ্ছে বারবার।

Advertisement

বাংলার পরে ওড়িশাও তাদের ‘রসগোলা’র জন্য জিয়োগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন বা জিআই-স্বীকৃতি পেয়েছে সম্প্রতি। সেই সঙ্গে ‘বাংলার রসগোল্লা’র জন্য জিআইয়ের দাবি পেশের সময় কিছু ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। আগামী ৬ সেপ্টেম্বর চেন্নাইয়ে জিআই নথিভুক্তি দফতরে সেই অভিযোগের শুনানি আছে। তাতে জবাবদিহির জন্যই চলছে ‘বাংলার রসগোল্লা’র অগ্নিপরীক্ষার আয়োজন।

কলকাতা, হাওড়া, পূর্ব মেদিনীপুরের ২৫-৩০ জন রসগোল্লা প্রস্তুতকারক সোমবার রসগোল্লার নমুনা জমা দেন খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দফতরে। এই সব রসগোল্লা-বিষয়ক ‘মাইক্রোবায়োলজিক্যাল রিপোর্ট’ জিআই দফতরে পাঠানো হবে। ওড়িশা তাদের ‘রসগোলা’র জন্য পেশ করা দাবিতে জানিয়েছিল, দুধে ‘স্টার্চ’ বা ময়দা, অ্যারারুটের মতো বস্তু মেশানো হয়। বাংলা প্রমাণ করতে চায়, বাংলাই খাঁটি দুধের রসগোল্লার আঁতুড়ঘর।

Advertisement

ওড়িশার তিনটি সংস্থার কর্তা রমেশচন্দ্র সাহু, সন্তোষকুমার সাহু ও সুশান্ত মিলে ‘বাংলার রসগোল্লা’র বিভিন্ন দাবি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এর জবাবদিহি করতেই নড়েচড়ে বসেছেন সরকারি আমলারা। সন্তোষবাবু এ দিন পুরী থেকে বলেন, ‘‘বাংলার রসগোল্লার জিআই-আর্জিতে বলা হয়েছিল, বাংলাই প্রথম ছিন্ন হওয়া দুধ বা ছানাকে দেবতার ভোগে নিবেদন করে। এটা আমরা মানি না। ওড়িশার জগন্নাথধামের রসগোল্লা-নিবেদনের পরম্পরাকে গ্রাহ্য করা হয়নি। রসগোল্লার আবিষ্কার বাংলায়, এটা বলা ঠিক নয়!’’ অন্য দিকে, বাংলার সাংস্কৃতিক ইতিহাসবিদদের অনেকেরই সন্দেহ, ওড়িশায় পুরীর মন্দিরে আগে যা নিবেদিত হত, সেই রসগোলক দুধ-ছানার নয়! ছানা-চিনির গোল্লা হিসেবে বাংলাই রসগোল্লার আদি জন্মভূমি বলে দাবি করা হয়। উদ্যানচর্চা ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ নিগমের কমিশনার জয়ন্তকুমার আইকত বলেন, ‘‘আমরা বাংলার রসগোল্লার বৈশিষ্ট্য তথ্যপ্রমাণ-সহ শুনানিতে পাঠাচ্ছি।’’ স্পঞ্জ রসগোল্লার স্রষ্টা নবীন দাশের উত্তরপুরুষ কেসি দাশের পরে এ দিন সেন মহাশয়, চিত্তরঞ্জন প্রমুখ ডাকসাইটে রসগোল্লা স্রষ্টারাও জিআই-লোগোর জন্য আবেদন পাঠিয়েছেন। সেন মহাশয়ের সন্দীপ সেন বলেন, ‘‘বাংলার রসগোল্লা কী, জিআই-কর্তৃপক্ষকে সেটা বোঝানোর জন্য রাজ্য সরকারের সঙ্গে সব রকম সহযোগিতা করছি আমরা।’’

সরকারি সূত্রের খবর, বাংলা ও ওড়িশা, রসগোল্লার দু’টি ঘরানাকেই জিআই-স্বীকৃতির পরে বিতর্ক দূর করতে চান জিআই-কর্তৃপক্ষ। জিআই সংক্রান্ত অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার চিন্নারাজা জি নায়ডু চেন্নাই থেকে বলেন, ‘‘রসগোল্লা নিয়ে বাংলার দাবিতে কিছু সংশোধনের আর্জি এসেছে। তা খতিয়ে দেখছি।’’ এ দিনই জগন্নাথদেবের আশীর্বাদের জন্য ভুবনেশ্বরের লিঙ্গরাজ মন্দির থেকে পুরীর শ্রী মন্দিরে পদযাত্রা করেছেন উৎকলীয় রসগোল্লা-প্রেমীরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement