চর্চায় নেই পরিবেশ, মানছেন বঙ্গ নেতারা

পরিবেশ এবং দূষণের জ্বালায় এখন জেরবার দেশের রাজধানী শহর। দিল্লির সরকার, কেন্দ্রীয় সরকারের তৎপরতার পাশাপাশি সক্রিয় হয়েছে আদালত। কলকাতার অবস্থা এখনও দিল্লির মতো নয়।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৭ ০৪:১১
Share:

প্রতীকী ছবি।

ঘুঁটে পুড়লে গোবর কি হাসতে পারে! দিল্লির হাল দেখে তেমনই উপলব্ধি বাংলার রাজনীতিকদের।

Advertisement

পরিবেশ এবং দূষণের জ্বালায় এখন জেরবার দেশের রাজধানী শহর। দিল্লির সরকার, কেন্দ্রীয় সরকারের তৎপরতার পাশাপাশি সক্রিয় হয়েছে আদালত। কলকাতার অবস্থা এখনও দিল্লির মতো নয়। কিন্তু দ্রুত নগরায়নের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পরিবেশজনিত সমস্যা যে বাড়ছে, তা অস্বীকার করছেন না কেউ। অথচ মিটিং-মিছিল, আন্দোলন, বির্তকে সদা সরগরম বঙ্গ রাজনীতিতে কখনও গুরুত্ব নেই পরিবেশের!

সিপিএমের বিমান বসু, কংগ্রেসের অধীর চৌধুরী, বিজেপি-র রাহুল সিংহ বা তৃণমূলের ডেরেক ও’ব্রায়েনেরা মেনে নিচ্ছেন, পরিবেশের প্রশ্নে সর্বস্তরে উদাসনীতা রয়েছে এ রাজ্যে। এই নিষ্ক্রিয়তা অচিরে বড় সঙ্কট ডেকে আনতে পারে, তা-ও অস্বীকার করছেন না তাঁরা। তবে তাঁদের দাবি, দিল্লি থেকে শিক্ষা নিয়ে পরিবেশ রক্ষার উদ্যোগে সামিল হতে চান সকলেই।

Advertisement

ইউরোপে পরিবেশ নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে ‘গ্রিন পার্টি’র ধারণা জন্ম নিয়েছিল সেই সাতের দশকে। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, কানাডা, আমেরিকা হোক বা গ্রেট ব্রিটেন— পরিবেশের সঙ্গে অহিংসা ও সামাজিক সুরক্ষার দাবিকে জুড়ে নিয়ে নানা আঙ্গিকে কাজ করছে বিভিন্ন গ্রিন পার্টি। এ দেশেও গ্রিন পার্টির অস্তিত্ব ঘোষণা হয়েছে কিন্তু তার দৃশ্যমানতা এখনও দিল্লির বাতাসের মতো! এ রাজ্যের ক্ষেত্রে দেখতে গেলে চিত্রটা আরও করুণ। বছরের পর বছর পশ্চিমবঙ্গ সরকারে পরিবেশ দফতর রাখা হয়েছে নাম কা ওয়াস্তে! কোটা পূরণ করতে মন্ত্রী বসানো হয়েছে সেই দফতরে। অথচ অদূর ভবিষ্যতের সঙ্কটে নিরিখে দেখলে পরিবেশ দফতরের গুরুত্ব ঢের বেশি।

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীরবাবু বলছেন, ‘‘ল্যান্সেট কমিশনের রিপোর্ট দেখাচ্ছে, দূষণের নিরিখে পশ্চিমবঙ্গ উপরের দিকেই রয়েছে। পরিবেশের সঙ্গে নিকাশির হালও কলকাতায় ভাল নয়। এখনই উদ্যোগী না হলে কলকাতার দিল্লি হতে কতক্ষণ?’’ প্রসঙ্গত, ল্যান্সেট কমিশন জানাচ্ছে, ভারতের মতো দেশে প্রতি চারটি মৃত্যুর মধ্যে একটি হয় পরিবেশ ও দূষণজনিত কারণে।

সিপিএমের প্রবীণ পলিটব্যুরো সদস্য বিমানবাবুর স্বীকারোক্তি, ‘‘পরিবেশ নিয়ে এখনও না ভাবলে সর্বনাশ হবে। আমরা দেরিতে শুরু করেছি। কিন্তু গত পার্টি কংগ্রেসে পরিবেশের উপরে আমরা প্রস্তাব নিয়েছি, আলোচনা করেছি।’’ তিনি জানাচ্ছেন, এ বারও পার্টি কংগ্রেসের দলিলে পরিবেশ জায়গা পাবে। বিজেপি-র কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুলবাবুর মত, ‘‘পরিবেশ নিয়ে এখানে আমরা সকলে উদাসীন, এটা ঠিক। পরিবেশ এবং ভবিষ্যতের জলসঙ্কট নিয়ে এখন থেকে কাজ শুরু করা উচিত। সরকার, রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন— সকলের উদ্যোগ চাই।’’

তৃণমূলের জাতীয় মুখপাত্র ডেরেকের মন্তব্য, ‘‘আমাদের সংসদ হোক বা সংবাদমাধ্যম, ই বলতে ইলেকশন বোঝা হয়। এনভায়রনমেন্ট নয়! এখানে স্বাস্থ্য এবং শিক্ষার মতো বিষয়ে আশু সমস্যার দিকে নজর বেশি থাকে। উন্নয়নশীল থেকে যত আমরা উন্নত দেশ হওয়ার চেষ্টা করব, পরিবেশ নিয়ে ভাবনাও বা়ড়বে।’’

পরিবেশ নিয়ে সার্বিক উদাসীনতার জন্যই এখানে ডেঙ্গির মতো রোগের প্রকোপ বাড়ে। তখন আবার সরকার তথ্য ধামাচাপা দিতে নামে! পরিবেশ নিয়ে রাস্তায় না দেখা গেলেও দিল্লি-কাণ্ডের পরে অবশ্য বিরোধীদের দাবি, মোড়ে মোড়ে সরকারি বিজ্ঞাপনের বদলে উন্নত শহরের মতো এখানেও পরিবেশ, দূষণ, প্লাস্টিক ব্যবহার সংক্রান্ত তথ্য জানানো হোক। পুজো কমিটি নিয়ে যদি এত বৈঠক হতে পারে, নেতাজি ইন্ডোরে অন্তত এক বার বসা হোক সব দল ও বেসরকারি সংস্থাকে নিয়ে। চর্চা হোক পরিবেশ নিয়ে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement