ভাঙচুরের পরে বাড়ির সামনে সিপিএম নেতা অমিয় পাত্র। —নিজস্ব চিত্র
মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন, শনিবার সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অমিয় পাত্রের বাঁকুড়ার তালড্যাংরার বাড়িতে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠল দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। সিপিএম এই হামলার জন্য ‘তৃণমূল-আশ্রিত’দের দুষছে। যদিও তা মানতে নারাজ জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। রাতে অমিয়বাবু থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। জেলার পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা বলেন, ‘‘তদন্ত শুরু হয়েছে।’’
অমিয়বাবুর অভিযোগ, এ দিন বেলা পৌনে ১১টা নাগাদ জনা ষাট দুষ্কৃতী লাঠি-রড নিয়ে, ইট ছুড়তে ছুড়তে তাঁর বাড়িতে হামলা চালায়। দোতলা বাড়ির নীচের তলার কাচ দিয়ে ঘেরা বারান্দা ভাঙচুর করে তাদের কয়েকজন খিড়কির দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকে পড়ে। তারা রেফ্রিজারেটর ও জিমে ভাঙচুর চালায় এবং সুইচবোর্ড ভাঙচুর করে বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। মিনিট পনেরো পরে তারা চলে যায়।
দুপুরে সাংবাদিকদের কাছে অমিয়বাবু অভিযোগ করেন, হইচই শুনে তিনি ও তাঁর স্ত্রী সুমিতাদেবী ছাদে উঠে যান। হামলাকারীরা তাঁদের দিকে ইট ছোড়ে। হুমকি দেয়, তালড্যাংরায় জেলা পরিষদের যে আসনে (তালড্যাংরা-২২) সিপিএমের প্রার্থী রয়েছেন, তাঁকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করাতে হবে। না হলে অমিয়বাবুকে খুন করা হবে। ওই সিপিএম নেতার দাবি, ‘‘রাজ্য নির্বাচন কমিশনার অমরেন্দ্রকুমার সিংহকে ফোনে ঘটনাটি জানাই। কিছুক্ষণ পরে পুলিশ আসে। তার আগেই অবশ্য তৃণমূল-আশ্রিত ওই দুষ্কৃতীরা পালায়।’’ যদিও রাতে থানায় জমা দেওয়া অভিযোগপত্রে তিনি উল্লেখ করেছেন, টাঙ্গি নিয়ে তাঁর উপরে হামলা চালানো হয়। কোনও রকমে রক্ষা পান তিনি।
তালড্যাংরার ন’টি পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে শাসকদল। সেখানে জেলা পরিষদের দু’টি আসনের মধ্যে একটিতে প্রতিপক্ষ হিসেবে সিপিএম ও বিজেপি রয়েছে। অমিয়বাবুর দাবি, ‘‘ওই আসনে আমাদের প্রার্থীকে প্রত্যাহার করাতে তৃণমূল এলাকার সিপিএম নেতা ও কর্মীদের হুঁশিয়ারি দিচ্ছিল। তাতে কাজ না হওয়ায় ওরা আমার বাড়িতে হামলা চালাল। যদিও আমাদের প্রার্থী নাম তোলেননি।’’
বাম পরিষদীয় নেতা ও সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘বিরোধী, বিক্ষুব্ধ তৃণমূল ও সাধারণ মানুষ কারও রেহাই নেই। বিরোধীশূন্য পঞ্চায়েত তত্ত্বের রোজ অনুশীলন চলছে।’’ সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব এ দিন নির্বাচন কমিশনে এই ঘটনাটি উল্লেখ করে স্মারকলিপি দেন। ফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু এবং সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের অভিযোগ, ‘‘মনোনয়ন পর্বে সন্ত্রাস চালিয়েছে তৃণমূল। এখন প্রার্থী পদ প্রত্যাহারের জন্য হামলা চালাচ্ছে।’’
যদিও হামলার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বাঁকুড়া জেলা পরিষদের বিদায়ী সভাপতি তথা তৃণমূলের জেলা-নেতা অরূপ চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘ওই ঘটনায় আমাদের কেউ জড়িত নয়। স্থানীয় কোনও সমস্যার জেরে এমনটা হয়ে থাকতে পারে।’’