‘ব্যালট দিন, ছাপ্পা মারব’, হুমকি দিয়ে ধাক্কা প্রিসাইডিং অফিসারকে

ঘড়ির কাঁটা তখন ১০টা ছুঁইছুঁই। অভিযোগ, মুখে গামছা বাঁধা কয়েকজন যুবক ভোটারদের ঠেলে সটান ঢুকে পড়ল সবংয়ের বলপাই গ্রাম পঞ্চায়েতের বলপাই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৮ ০০:৪৮
Share:

সবং গ্রামীণ হাসপাতালে প্রিসাইডিং অফিসার উজ্জ্বলকুমার দে। নিজস্ব চিত্র

‘ব্যালট দিন, ছাপ্পা মারব’

Advertisement

ঘড়ির কাঁটা তখন ১০টা ছুঁইছুঁই। অভিযোগ, মুখে গামছা বাঁধা কয়েকজন যুবক ভোটারদের ঠেলে সটান ঢুকে পড়ল সবংয়ের বলপাই গ্রাম পঞ্চায়েতের বলপাই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথে। ছাপ্পা দিতে প্রিসাইডিং অফিসার উজ্বলকুমার দে-র কাছে ব্যালট পেপার চায় তারা। ব্যালট দিতে অস্বীকার করলে তারা উজ্জ্বলবাবুর মাথায় পিস্তল ঠেকায়। তারপরে ধাক্কা। ভয়ে জ্ঞান হারান তিনি। ব্যালট পেপার লুঠ করে পালায় তারা। পরে উজ্জ্বলবাবুকে কোনওমতে উদ্ধার করে সবং গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

উজ্জ্বলবাবুর অভিযোগ, “প্রায় ১৫০টি ভোট পড়ে গিয়েছিল। ৪-৫ জন মুখে গামছা বাঁধা যুবক এসে আমার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে ছাপ্পা চালানোর কথা বলে। আমি নিমরাজি হতেই ধাক্কা দেয়। তার পরে পড়ে গিয়ে সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলি।’’ তাঁর দাবি, ‘‘ওঁরা কোন দলের লোক বলতে পারব না। তবে এমন ভোট দেখিনি!” এলাকার তৃণমূলের জেলা পরিষদ প্রার্থী অমূল্য মাইতির অভিযোগ, “বলপাইতে খোদ মানস ভুঁইয়ার মদতে প্রিসাইডিং অফিসারকে পিস্তল দেখিয়ে মারধর করে ব্যালট পেপার লুঠ হয়ে যায়। আমি মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছি।” এ বিষয়ে মানসবাবু বলেন, ‘‘অঞ্চল, ব্লক সামলানোর দায়িত্ব তো অমূল্য মাইতিদের। ওঁরা তো আদি তৃণমূল। আমরা তো তৎকাল। উনি মাঝে মদ্যেই এমন আবোল তাবোল বকেন।’’

Advertisement

শুধু বলপাই নয়, সবং, চন্দ্রকোনার আরও বেশ কয়েকটি বুথেও ব্যালট লুঠের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ, সবংয়ের নারায়ণবাড় গ্রাম পঞ্চায়েতের ভঞ্জপুর শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে ব্যাপক হারে ছাপ্পা ভোট দেওয়া চলছিল। প্রতিরোধ করতে নির্দল প্রার্থীর সমর্থকেরা ব্যালট বাক্স লুঠ করে কপালেশ্বরী নদীর খালে ফেলে দেয় বলে অভিযোগ। বন্ধ হয়ে যায় ভোটগ্রহণ। ভোট দিতে এসেও ফিরে যান আরতি করণ, সুধীরচন্দ্র করণেরা। তাঁদের কথায়, “আমরা চোখে দেখিনি তবে শুনেছি, তৃণমূলের লোকেরা ছাপ্পা দিচ্ছিল। তাই নির্দল প্রার্থীর লোকেরা এসে ব্যালট সমেত বাক্স খালের জলে ফেলে দিয়েছে। তাই ভোট দিতে পারিনি।”

ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের দক্ষিণ বাঁশবনিতে তৃণমূল-সিপিএম সংঘর্ষের মাঝে ব্যালট বাক্স লুঠ হয়ে যায় বলে অভিযোগ। অমূল্যবাবুর অভিযোগক, “দক্ষিণ বাঁশবনিতে সিপিএম গোলমাল করে ব্যালট লুঠ করে চম্পট দেয়। ভোট বন্ধ হয়ে গিয়েছে।” ওই বুথের সিপিএম প্রার্থী রীতা মণ্ডল জানা বলেন, “তৃণমূল ভোট দিতে যাওয়া আমাদের কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা করে ব্যালট ছিনতাই করে নিয়ে যায়।”

নারায়ণগড় ব্লকের হেমচন্দ্র গ্রাম পঞ্চায়েতের তারিয়াপুঞ্জি বুথে কয়েকজন যুবক মুখে কালো কাপড় বেঁধে বন্ধুক দেখিয়ে ব্যালট লুঠ করে পালানোর চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। তবে প্রতিরোধের মাঝে পড়ে ভোট কেন্দ্রের মাঝে থাকা তারা পুকুরে ব্যালট বাক্স ফেলে দেয় বলে অভিযোগ।

ভোট শুরুর ঘণ্টা দু’য়েকের মধ্যে ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে গড়বেতা-৩ ব্লকের নেড়েকোপা পূর্ব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথে। অভিযোগ, সকাল ৯টা নাগাদ ৮-১০ জন লোক লাঠি, টাঙ্গি নিয়ে হুড়মুড়িয়ে বুথে ঢুকে পড়ে। নিরাপত্তারক্ষীরা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও পারেনি। অভিযোগ, গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের জন্য নির্ধারিত ৩টি পৃথক ব্যালট বাক্সের মধ্যে পঞ্চায়েত সমিতির বাক্সটি নিয়ে পালায় তারা। ওই বুথের প্রিসাইডিং অফিসার সৌরভ গায়েনের অভিযোগ, ‘‘তখন একশোরও বেশি ভোট পড়ে গিয়েছে, হঠাৎ একদল লোক এসে সব কিছু ভাঙচুর, তছনছ করে ব্যালট বাক্স নিয়ে পালায়।’’গোয়ালতোড়ের গাছউপড়া বুথে এ দিন ব্যালট বাক্স ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে। তৃণমূলের জেলা পরিষদ প্রার্থী চন্দন সাহার অভিযোগ, ‘‘বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা বুথে ঢুকে ব্যালট বাক্স ভাঙচুর করে বুথের ভিতর সবকিছু লন্ডভন্ড করে দেয়। তারপর থেকে ভোটগ্রহণ বন্ধ হয়ে যায় এই বুথে।’’ আটক করা হয় বিজেপির ৩ কর্মীকে। অভিযোগ অস্বীকার করেছে বিজেপি। পিংলার মাধবচকেও বুথ থেকে ব্যালট বাক্স লুঠ করে জলে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে কয়েকজন যুবকের বিরুদ্ধে। সবংয়ের মোহাড় বাটিটাকি ও মোহনপুরের সাউটিয়াতেও ব্যালট লুঠের অভিযোগ উঠেছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement