আমবাগানের পাশে ইটের রাস্তা ধরে এগোচ্ছে লম্বা মিছিলটা। হাতে-হাতে গেরুয়া পতাকায় দুলছে পদ্মফুল।
শান্তিপুরের ঘোড়ালিয়া গ্রামে এক নির্যাতিতার বাড়ি যাচ্ছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। মিছিল থেকে স্লোগান উঠছে— ‘ভারতমাতা কি জয়,’ ‘জয় শ্রীরাম!’
বেমক্কা মিছিলের মাঝ-বরাবর চড়া গলা লাফিয়ে উঠল যেন— লড়াই লড়াই লড়াই চাই... চেনা গতে ধরতাই ধরল আশপাশের বেশ কিছু গলা — লড়াই করে বাঁচতে চাই!
মিছিলের বাকিরা মুখ চাওয়া-চাওয়ি করছেন। এ যে ‘মাকু’ স্লোগান হে! মাকু, অর্থাৎ মার্ক্সবাদী! কিন্তু অতশত ভাবার আগেই ফের ঝাঁঝিয়ে ওঠে স্লোগান— সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে... মিছিলের কিছু মুখ বলে— লড়তে হবে একসাথে! ব্যাপারখানা কী? স্লোগানের গন্ধটা কেমন সন্দেহজনক!
মিছিলের বাঁ-ধার ধরে হাঁটা এক মেজো-নেতা মুচকি হাসেন, “সবই ব-এর নীচে ফুটকির মাহাত্ম্য! ছিল বাম, হল রাম। চারদিকেই তো হচ্ছে!”
নদিয়াতেই ইতিমধ্যে তৃণমূল স্তরে বিজেপি এবং সিপিএম-কে একত্রে মিছিল করতে দেখা গিয়েছে। দেখা গিয়েছে মিলিজুলি দেওয়াল লিখনও। সেই ‘ভাই-ভাই’ হাওয়াতেই কি সন্তর্পণে বামেদের পায়ের নীচ থেকে মাটি সরিয়ে নিচ্ছে বিজেপি? নাকি, সিপিএম কর্মীরাই আত্মরক্ষার তাগিদে ব-এর নিচে ‘ফুটকি’-বরণ করছেন?
শুধু নদিয়া নয়। মুর্শিদাবাদের জলঙ্গি এলাকার হুকোহারা গ্রামের আলাউদ্দিন শেখও সিপিএম ছেড়ে বিজেপির সংখ্যালঘু সেলের নেতা হয়েছেন। মিছিলে তাঁর মুখ থেকেও হামেশাই বেরিয়ে পড়ছে পুরনো অভ্যেস— ইনকিলাব.....মিছিল থেকে পোঁ ধরছে জিন্দাবাদ! আলাউদ্দিনের কথা, “আমরা মাঠে নেমে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়ছি। তাই লড়ার স্লোগানই দিচ্ছি!”
বিজেপির মুর্শিদাবাদ জেলা কমিটির সহ-সভাপতির নামে একটু রুশি টান যেন, শাখারভ সরকার। শাখারভ দাবি করছেন, “তৃণমূলের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে দলে-দলে সিপিএমের লোকজন আমাদের সঙ্গে আসছেন। তাঁদের সঙ্গেই চলে আসছে ওই সব স্বতঃস্ফূর্ত স্লোগান।”
এক কালে কৃষ্ণনগরের দাপুটে এসএফআই নেতা অরুপ দাস এখন বিজেপির শ্রমিক সংগঠনের দায়িত্বে। তাঁর কথায়, “স্লোগান তো কোনও দলের সিন্দুকে তুলে রাখার বস্তু নয়। মানুষ মিলেমিশে রাস্তায় নামলে স্লোগানও মিশে যায়।” এতে কি পাল্টাচ্ছে বিজেপির নিজের সংস্কৃতিও? প্রশ্ন শুনেই হইহই করে ওঠেন দলের নদিয়া (দক্ষিণ) সাংগঠনিক জেলার সভাপতি জগন্নাথ সরকার— “না না, কোনও সম্ভাবনা নেই। বরং বাংলার সংস্কৃতিতেই একটা পরিবর্তন আসতে চলেছে।”
সিপিএম নেতারাও ‘ভূমিক্ষয়’ মানতে রাজি নন। নদিয়ার সম্পাদক সুমিত দে-র ব্যাখ্যা, ‘‘আমাদের ছেড়ে কেউ ওদের সঙ্গে যায়নি। বরং বিজেপি এখন আমাদের স্লোগান ধার করছে। বামপন্থা যে ক্রমশ আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে, এটা তারই প্রমাণ।’’