শাসকের সংসারে যা কাঁটা, বিরোধীদের হাতে তাই অস্ত্র! আর সেই কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার অঙ্কই এখন কষছেন ডেবরার সিপিএম নেতারা।
ক’দিন আগে পশ্চিম মেদিনীপুরে দলীয় কর্মসূচিতে এসে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র স্পষ্ট বলে গিয়েছিলেন, এ বারের পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূল ও বিজেপিকে হারাতে যেখানে বামেদের প্রার্থী নেই, সেখানে যে কোনও দলকে সমর্থন করা হবে। সেই সমীকরণেই পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরা ব্লকে তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ নির্দলদের মঞ্চকে সরাসরি সমর্থন করছে বামেরা।
সিপিএমের ডেবরা নির্বাচনী কমিটির আহ্বায়ক তথা দলের জেলা কমিটির সদস্য প্রাণকৃষ্ণ মণ্ডল মানছেন, “ভবানীপুরে ইতিমধ্যেই সবক’টি আসনে নির্দলদের নিয়ে যৌথ মঞ্চ তৈরি করেছি। সেই মঞ্চে তৃণমূলের প্রাক্তন ব্লক সহ-সভাপতি জগন্নাথ মূলাও রয়েছেন। আমরা ওখানে নির্দলদের সমর্থনেই প্রচার চালাব।” তৃণমূলের দলীয় প্রার্থীদের হারাতে মরিয়া জগন্নাথবাবু বলছেন, “সেই ১৯৯৮ সাল থেকে তৃণমূল করি। কিন্তু এ বার দেখলাম যাঁরা দুর্নীতি ও নানা দুষ্কর্মে জড়িয়ে, তাঁরাই দলের টিকিট পেলেন। এর প্রতিবাদে ভবানীপুরে ১৭টি আসনে আমি নৌকা চিহ্নে প্রার্থী দিয়েছি।”
সিপিএমের সমর্থনে কি জোট হয়েছে? জগন্নাথবাবুর জবাব, “সন্ত্রাস ও দুর্নীতি বিরোধী জনগণের জোট হচ্ছে। ১৭টি আসনে সিপিএম আমাদের পূর্ণ সমর্থন করছে।” তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ নির্দলদের থেকে ফায়দা তুলতে মরিয়া বিজেপিও। দলের ঘাটাল সাংগঠনিক জেলা সম্পাদক কালীপদ সেনগুপ্ত বলেন, “ডেবরায় তৃণমূলের গোঁজ প্রার্থী ও গোষ্ঠী কোন্দলকে প্রচারে তুলে ধরব। বহু নির্দলকে আমরা সমর্থনও করব।”
একসময়ে সিপিএমের শক্ত ঘাঁটি ছিল ডেবরা। ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনেও ১৪টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ৫টি দখল করেছিল সিপিএম। এ বার ২১৪টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনের ১৫৬টিতে নিজেদের প্রতীকে প্রার্থী দিয়েছে সিপিএম। আর অন্য বামপন্থী দল ও নির্দল মিলিয়ে আরও ২৮ জন প্রার্থীকে সিপিএম সমর্থন করছে। তবে এ বারের ভোট পর্বে আলোচনার কেন্দ্রে ছিল ডেবরা ব্লকে তৃণমূলের বাড়তি মনোনয়ন। ব্লকের ২১৪টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে প্রায় ২০০জন ও ৪২টি পঞ্চায়েত সমিতি আসনে তৃণমূলের ৮৮জন অতিরিক্ত প্রার্থী হয়ে মনোনয়ন দাখিল করেন। অতিরিক্ত প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহারে চেষ্টার কসুর করেননি নেতৃত্ব। তবে সুরাহা হয়নি। দলীয় সূত্রে খবর, গ্রাম পঞ্চায়েতে ৫৫জন ও পঞ্চায়েত সমিতিতে ১১জন গোঁজ প্রার্থী আছেন।
সে কথা মেনে তৃণমূলের ব্লকের কোর কমিটির সদস্য রতন দে বলেন, “গ্রাম পঞ্চায়েতের আসনে ৫৫জন ও পঞ্চায়েত সমিতির আসনে ১১জন আমাদের দলের বিক্ষুব্ধ নির্দল থেকে গিয়েছে। এর সুফল পাওয়ার চেষ্টা করবে বিরোধীরা। তবে আমরা লিফলেট বিলি করে মানুষকে সত্যিটা জানাব।”