রীতা জানার দেওয়াল লিখন। সবংয়ে। ছবি: দেবরাজ ঘোষ
প্রার্থী খুঁজতে নাস্তানাবুদ হতে হয়েছে। যেখানে প্রার্থী মিলেছে, সেখানে প্রচারের কর্মী মেলা ভার। কর্মী পাওয়া গেলে আবার দেওয়ালের ‘দখল’ মিলছে না।
পঞ্চায়েত ভোটের মুখে রাজ্য জুড়ে সিপিএমের এমন কোণঠাসা দশা। খোদ দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র মেনেছেন, ‘এমন পরিস্থিতি অভূতপূর্ব’। প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও অবশ্য বেশ নিশ্চিন্তে আছেন সবংয়ে দলের জেলা পরিষদ প্রার্থী রীতা জানা। পশ্চিম মেদিনীপুর জুড়ে সিপিএম প্রার্থীরা যেখানে দেওয়াল লিখতে রং-তুলি খুঁজছেন, তখন রীতা পাড়ায় পাড়ায় কর্মিসভা শুরু করে দিয়েছেন। প্রস্তুতি চলছে বাড়ি বাড়ি প্রচারের।
প্রচারে তো বেশ এগিয়ে গিয়েছেন? একগাল হেসে রীতার জবাব, ‘‘দেওয়াল লেখার ঝক্কি তো এ বার কম। তাই কর্মিসভা, বাড়ি বাড়ি প্রচারে মন দিতে পারছি।’’
বিষয়টা বুঝিয়ে দিলেন সবংয়ের সিপিএম কর্মীরাই। এক কর্মীর কথায়, “ক’মাস আগেই রীতাদির নামে দেওয়াল লিখেছি। লেখাগুলো এখনও স্পষ্ট। শুধু নির্বাচনের আগে ‘বিধানসভা উপ’ কথাটা মুছে পঞ্চায়েত লিখে দিলেই হল।”
গত ডিসেম্বরে ছিল সবং বিধানসভার উপ নির্বাচন। সেবারও সিপিএম প্রার্থী ছিলেন রীতা। সাংসদ মানস ভুঁইয়ার স্ত্রী তৃণমূল প্রার্থী গীতা ভুঁইয়ার কাছে ৬৪ হাজার ভোটে হার মানতে হয়েছিল রীতাকে। এ বার পঞ্চায়েত ভোটে জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেত্রী রীতাকেই ফের প্রার্থী করেছে সিপিএম। উপ নির্বাচনের সময় সবং জুড়ে রীতার সমর্থনে প্রচুর দেওয়াল লেখা হয়েছিল। এ বার তাই সেই ঝক্কি কমেছে।
পশ্চিম মেদিনীপুর যখন ‘লাল দুর্গ’, তখনও সবং ছিল কংগ্রেসের গড়। বরাবর এখান থেকে হাত চিহ্নে জিতে বিধানসভায় গিয়েছেন মানস ভুঁইয়া। ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটেও গোটা জেলায় যে একটি মাত্র পঞ্চায়েত সমিতি বিরোধীদের দখলে ছিল, সেটি ছিল সবং। মানসবাবু তখনও কংগ্রেসেই। তবে মানসবাবু সদলবলে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরে সবংয়ের সমীকরণ পাল্টে গিয়েছে। গোটা জেলার মতো এই ব্লকেও এখন তৃণমূলের দাপট। ইতিমধ্যে গ্রাম পঞ্চায়েতের তিনটি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গিয়েছেন ঘাসফুলের প্রার্থীরা।
ফলে, দেওয়াল লিখনে এগিয়ে থেকেও সিপিএম প্রার্থী ভোটে কতটা সুরাহা করতে পারবেন, সে প্রশ্ন থাকছে। রীতার বিরুদ্ধে তৃণমূল প্রার্থী হয়েছেন অমূল্য মাইতি। তিনি জেলা পরিষদের বিদায়ী বিদ্যুৎ ও ক্ষুদ্রশিল্প কর্মাধ্যক্ষ। লড়াইয়ে রয়েছে বিজেপি, কংগ্রেস, এসইউসি। সিপিএম প্রার্থীর দেওয়াল লেখায় এগিয়ে থাকাকে অবশ্য গুরুত্ব দিতে নারাজ অমূল্যবাবু। তাঁর কটাক্ষ, “মানুষের মন থেকে সিপিএমের নাম মুছে গিয়েছে। দেওয়ালে নাম থেকে আর কী হবে!’’
গত বার সবং থেকেই জেলা পরিষদ আসনে জিতেছিলেন রীতা। এ বারও হাল ছাড়তে নারাজ তিনি। রীতা বলছেন, “মানুষের মনে কার নাম রয়েছে, তা স্বচ্ছ ভাবে ভোট হলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে।”