এক দিনেই রাজ্যের পঞ্চায়েত ভোট। নবান্নের কথা মেনে ১৪ মে ভোটের দিন ঘোষণা করল রাজ্য নির্বাচন কমিশন।
বৃহস্পতিবার এই ঘোষণা হলেও গণনার দিন জানানো হয়নি। কমিশনের ব্যাখ্যা, আদালতের নির্দেশ মেনে তাঁরা পরপর পদক্ষেপ করছেন। সূত্রের খবর, আগামী ১৭ মে ভোটগণনা হতে পারে। পুনর্নির্বাচনের প্রয়োজন হলে তা হবে ১৬ মে।
নির্বাচনপর্ব আদালত পর্যন্ত গড়ানোর আগে নির্বাচন কমিশন তিন দফায় ১, ৩ ও ৫ মে ভোট গ্রহণের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করেছিল। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ভোটগ্রহণ এক দিনে এসে দাঁড়াল। শাসক দল গত কয়েকদিন ধরে এই দাবিই জানিয়ে আসছিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেছিলেন ১৭ মে রমজান মাস শুরু। তখন ভোট হলে বহু মানুষের অসুবিধা হতে পারে। এ দিনের ঘোষণার পরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমরা খুব খুশি। গণতন্ত্র অনুযায়ী অন্তত নির্বাচনটা হোক। আমরা চাই, শান্তিপূর্ণ ভাবে, সুন্দর ভাবে ভোটের কাজ সম্পন্ন হোক।’’
আদালত নির্ঘণ্ট ঘোষণার আগে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে ‘অর্থপূর্ণ’ আলোচনা করতে বলেছিল। কিন্তু দিন ঘোষণার আগে তা হয়নি বলে অভিযোগ জানিয়ে বিরোধী দলগুলির বক্তব্য, সরকার ও শাসক দলের ‘চাপে’ কমিশন নতিস্বীকার করল। নির্বাচন ‘রক্তাক্ত’ হওয়ার আশঙ্কাও জানিয়েছে তারা। বিজেপি ফের আদালতে যাওয়ার কথা ভাবছে।
সূত্রের খবর, বুধবার রাতেই এক দফায় ভোটগ্রহণের নির্ঘণ্ট প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু নিরাপত্তারক্ষীর সংখ্যা স্পষ্ট না হওয়াতেই আটকে ছিল ঘোষণা। বৃহস্পতিবারও নিরাপত্তারক্ষীর বিষয়ে নবান্নের সঙ্গে ‘মতপার্থক্য’ তৈরি হয় কমিশনার অমরেন্দ্রকুমার সিংহের। দু’পক্ষের মধ্যে বহু বার ফোনে কথাও হয়। যত নিরাপত্তারক্ষী আছে তাতে এক দিনে ভোট হলে শান্তি বজায় রাখা খুবই কঠিন হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন কমিশনার।
কিন্তু রাজ্যের তরফ থেকে কমিশনকে আশ্বস্ত করা হয়, যথেষ্ট নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করেই ভোট করা হবে। সেই সঙ্গেই বলে দেওয়া হয়, আইশৃঙ্খলা রাজ্যের এক্তিয়ারভুক্ত। নবান্ন থেকে কমিশনারকে ‘বোঝানো’ হয় আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি যেন তাদের উপরেই ছেড়ে দেওয়া হয়।
এর মধ্যেই পঞ্চায়েত দফতর ফ্যাক্স মারফত ১৪ মে ভোট করার বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে দেয় কমিশনকে। ফ্যাক্স দেখেই কমিশনার ফের ফোন করেন নবান্নে। কারণ পঞ্চায়েত আইন অনুযায়ী এই ধরনের বিজ্ঞপ্তি পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কমিশনকে চূড়ান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করতে হয়। কমিশনারকে নবান্নের তরফে জানানো হয়, বুথওয়াড়ি নিরাপত্তারক্ষী নয়, বরং ভোটকেন্দ্র চত্বরের হিসেবেই নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েনের উপরে জোর দিয়েছে রাজ্য সরকার। এর ফলে অতিস্পর্শকাতর, স্পর্শকাতর বুথে অনেক কম নিরাপত্তারক্ষীর প্রয়োজন পড়বে। তার পরেই নিজের অনড় অবস্থান থেকে সরে আসেন কমিশনার। ১৪ মে ভোটের দিন ঘোষণা করে কমিশন বিজ্ঞপ্তি জারি করে। কমিশনের যুগ্মসচিব শান্তনু মুখোপাধ্যায় পরে বলেন, ‘‘কমিশন আদালতের নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেই যা করার করছে।’’
নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বাইরের কোনও রাজ্যের লোক নিয়ে এসে এ রাজ্যে অশান্তি বরদাস্ত করব না। আমরা রাজ্যের সীমানা সুরক্ষিত রাখব। আমাদের পুলিশ বাহিনীকে আরও ভাল ভাবে কাজে লাগাব।’’
ভোটে নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে এ দিন কমিশনের সচিব নীলাঞ্জন শাণ্ডিল্য বলেন, ‘‘নিরাপত্তার ব্যাপারটি রাজ্য সরকার স্থির করবে। তারা যথেষ্ট নিরাপত্তা দেবে বলে জানিয়েছে। তবে এখনও সবটা চূড়ান্ত হয়নি।’’ গত ৩১ মার্চ তিন দফায় ভোটগ্রহণের কথা জানিয়েছিল কমিশন। কিন্তু এ বার কেন এক দফায়? জবাবে নীলাঞ্জনবাবুর বক্তব্য, ‘‘বিষয়টি রাজ্য সরকারের এক্তিয়ারভুক্ত। কমিশনের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতেই তা স্থির হয়েছে। রমজান মাস, বর্ষা সবই বিবেচনায় রাখা হয়েছে।’’
মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘কুৎসা, অপপ্রচার, চক্রান্ত নয়। নির্বাচন হোক গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে।’’ বিজেপির নির্বাচনী ইস্তাহারে ছাপা একটি ছবি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। অভিযোগ, ছবিটি পশ্চিমবঙ্গের নয়। দল সেই ছবি প্রত্যাহারের কথা জানিয়েছে। তবে মমতা এ দিন সেই প্রসঙ্গের ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, ‘‘রাজনৈতিক সৌজন্য, গণতান্ত্রিক বোধ বজায় রেখে লড়াই করুন। ভুল ছবি দিয়ে অপপ্রচার করবেন না।’’