গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
প্রচার প্রায় শেষ। রবিবার বিরতি। সোমবারই ভোটে যাচ্ছে গ্রাম-বাংলা। গোটা গ্রাম-বাংলা অবশ্য নয়, ভোটে যাচ্ছে গ্রামাঞ্চলের ৬৬ শতাংশ। কারণ বাকি ৩৪ শতাংশে বিরোধীদের প্রার্থী নেই। তবে যে সাড়ে ৩৮ হাজার আসনে ভোট নেওয়া হবে সোমবার, সেই আসনগুলির প্রত্যেকটিতেই যে সব বিরোধী দলের প্রার্থী রয়েছে, তেমনও নয়। বিরোধীদের মধ্যে বিজেপি-ই সবচেয়ে বেশি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। বামেরা তাদের চেয়ে কিছুটা কম। কংগ্রেস রয়েছে ভোটমুখী আসনগুলির মাত্র ২০ শতাংশে।
যে ৬৬ শতাংশ আসনে ভোট হচ্ছে, সেগুলির প্রত্যেকটিতে প্রতিটি বিরোধী দলের প্রার্থী না থাকাকে আপাতদৃষ্টিতে মনে বিরোধীদের অক্ষমতা বলে মনে হতে পারে। কিন্তু বিরোধীদের সেই ‘অক্ষমতা’ই অনেক আসনে চাপে ফেলে দিয়েছে শাসককে।
যে সব আসনে বিজেপি, বাম, কংগ্রেস-সহ সব বিরোধী দলের প্রার্থী রয়েছে, সেগুলি নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত নয় তৃণমূল। ওই সব আসনের বেশিরভাগেই বিরোধী ভোট তিন ভাগে ভাঙবে। ফলে অ্যাডভান্টেজ শাসক।
কিন্তু যে সব আসনে তৃণমূলের বিরুদ্ধে শুধু বিজেপি বা শুধু বাম বা শুধু কংগ্রেসের প্রার্থী রয়েছেন, সেই সব আসন নিয়েই শাসক দলকে দুশ্চিন্তায় থাকতে হচ্ছে। বিরোধী ভোট ভাগ না হলে কী রকম দাঁড়াবে ছবিটা, নিশ্চিত হতে পারছে না শাসক দল।
বিরোধী দলগুলির মধ্যে কোনও ঘোষিত সমঝোতা কিন্তু পঞ্চায়েত নির্বাচনে হয়নি। কিন্তু নিচু তলায় অনেক জায়গাতেই সমঝোতা করে নিয়েছেন কর্মী-সমর্থকরা। কোথাও বিজেপি-কে জমি ছেড়ে দিয়েছে বাম-কংগ্রেস। কোথাও বামেদের নীরব সমর্থন জানিয়ে লড়াই থেকে সরে দাঁড়িয়েছে কংগ্রেস-বিজেপি। আর মালদহ, মুর্শিদাবাদ, উত্তর দিনাজপুরে কংগ্রেসের জন্য কিছুটা জমি ছেড়ে দিয়েছে বাকি দুই বিরোধী দল। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে নেতৃত্বও এই ধরনের অঘোষিত সমঝোতার পথে খুব একটা বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
এমন অনেক আসন রয়েছে, যেখানে একাধিক বিরোধী দল মনোনয়ন জমা দিয়েছে। কিন্তু ব্যালটে তৃণমূলের পাশাপাশি সিপিএম, বিজেপি, কংগ্রেস— তিন দলেরই প্রার্থীই থাকছেন। কিন্তু আসলে লড়াইয়ে থাকছেন বিরোধী পক্ষের যে কোনও একজন। বাকিরা লড়াই থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন, বাড়ি বাড়ি পৌঁছে গিয়ে সে কথা জানিয়েও আসছেন।
আরও পড়ুন:
ভাঙড়ে জমি কমিটির মিছিলে সশস্ত্র হামলা, হত-১, উত্তপ্ত বিস্তীর্ণ এলাকা
আরও পড়ুন: লাইভ: বাঁচানোর জন্যই সরানো হল আরাবুলকে: সুজন, মধ্যরাত পেরিয়েও চলছে অবস্থান
একাধিক বিরোধী দলের প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও একজনকে সামনে এগিয়ে দিয়ে বাকিদের পিছিয়ে আসার মতো সমঝোতা মূলত বুথ স্তরে অর্থাৎ গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরেই হয়েছে। কারণ পঞ্চায়েত সমিতি বা জেলা পরিষদের আসনগুলি অনেকটা বড় এলাকা নিয়ে। অতটা এলাকায় সমঝোতার জটিল অঙ্ক মুখে মুখে বুঝিয়ে দেওয়া খুব সহজ নয়। উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, নদিয়া থেকে বুথ স্তরে সমঝোতার অনেক খবর মিলেছে। নদিয়ার রানাঘাট দক্ষিণ কেন্দ্রের সিপিএম বিধায়ক রমা বিশ্বাস নিজেই বিরোধী ঐক্য গড়ে তোলার প্রক্রিয়ায় সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছেন বলে একাংশের দাবি। সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব অবশ্য সে খবর নস্যাৎ করেছেন।
এক দিকে দোর্দণ্ডপ্রতাপ শাসক। অন্য দিকে একত্র হতে সচেষ্ট বিরোধীরা। এই সমীকরণের উপরে দাঁড়িয়েই সোমবার ভোটে যাচ্ছে বাংলা। কিন্তু দুশ্চিন্তা সব শিবিরেই থাকছে।
বুথে বুথে বিরোধী ভোট এক হয়ে যাওয়া যদি আটকানো না যায়, তা হলে কী হতে পারে ফল, তা নিয়ে চিন্তায় থাকতেই হচ্ছে তৃণমূলকে। কারণ সাম্প্রতিক জনমত সমীক্ষা বলছে, তৃণমূলের ভোট কিন্তু গ্রামবাংলায় ৫০ শতাংশের উপরে নয়, তার চেয়ে অনেকটাই নীচে। তাই বিরোধী ভোট এক হলে পিছিয়ে পড়তেই হবে তৃণমূলকে।
কিন্তু তৃণমূলের চেয়েও অনেক বেশি দুশ্চিন্তায় থাকতে হচ্ছে বিরোধীদের। সে দুশ্চিন্তা সন্ত্রাসের আশঙ্কায়। মনোনয়ন পর্বে যে সন্ত্রাস দেখা গিয়েছে গোটা রাজ্য জুড়ে, তেমনটা যদি ভোটের দিনও হয়, তা হলে অসহায় হয়ে পিছু হঠা ছাড়া গতি থাকবে না। কারণ বুথে বুথে নিরাপত্তার ছবিটা কী রকম হবে, কেউ নিশ্চিত নন সে বিষয়ে।