(বাঁ দিক থেকে) হিরণ চট্টোপাধ্যায়, রেখা পাত্র এবং নিশীথ প্রামাণিক। —ফাইল চিত্র।
ঘাটাল, কোচবিহার, বসিরহাট, ডায়মন্ড হারবার এবং আরামবাগ— রাজ্যের পাঁচটি লোকসভা কেন্দ্রের নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা হয়েছে কলকাতা হাই কোর্টে। ইলেকশন পিটিশন দাখিল করেছেন ওই পাঁচ কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী। কেন্দ্রগুলিতে ভোটে কারচুপির অভিযোগ তুলে নির্বাচন বাতিলের আবেদন জানানো হয়েছে। এই পাঁচটি মামলা কলকাতা হাই কোর্টের পাঁচ জন পৃথক বিচারপতির বেঞ্চে পাঠানো হল। বুধবার মামলাগুলির বেঞ্চ নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম।
ভোটগ্রহণের দিন থেকেই এই পাঁচ কেন্দ্রে কারচুপির অভিযোগ তুলেছিল বিজেপি। প্রার্থীরা প্রথম থেকেই জানিয়েছিলেন, তাঁরা নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে যাবেন। কারণ যে ভাবে নির্বাচন হয়েছে, তা তাঁরা মানেন না। সেই অনুযায়ী ঘাটালের বিজেপি প্রার্থী হিরণ চট্টোপাধ্যায়, ডায়মন্ড হারবারের বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ দাস, আরামবাগের বিজেপি প্রার্থী অরূপকান্তি দিগর, বসিরহাটের বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্র এবং কোচবিহারের বিজেপি প্রার্থী নিশীথ প্রামাণিক হাই কোর্টে ইলেকশন পিটিশন দাখিল করেন।
বুধবার প্রধান বিচারপতি জানান, ডায়মন্ড হারবারের ইলেকশন পিটিশনের মামলা শুনবেন বিচারপতি অজয়কুমার মুখোপাধ্যায়। কোচবিহারের মামলাটি শুনবেন বিচারপতি সুগত মজুমদার। ঘাটালের মামলাটি পাঠানো হয়েছে বিচারপতি বিভাস পট্টনায়কের বেঞ্চে। বিচারপতি কৃষ্ণ রাও শুনবেন বসিরহাটের মামলা। এ ছাড়া, আরামবাগের মামলাটি পাঠানো হয়েছে বিচারপতি বিভাসরঞ্জন দে’র বেঞ্চে।
বসিরহাটে তৃণমূল প্রার্থী হাজি নুরুল ইসলামের কাছে বিজেপির রেখা তিন লক্ষের বেশি ভোটে পরাজিত হয়েছেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, হাজি নুরুলের হলফনামায় ত্রুটি ছিল। হলফনামায় ‘নো ডিউজ় সার্টিফিকেট’ ছিল না। তাই তাঁর নির্বাচন বাতিলের দাবি তোলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও বলেছিলেন, ‘‘যে আইনে দেবাশিস ধরের (বীরভূমের বিজেপি প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন জমা দেওয়া প্রাক্তন পুলিশকর্তা) মনোনয়ন বাতিল হয়েছে, সেই একই আইনে হাজি নুরুলের মনোনয়নও বাতিল হওয়ার কথা।’’
কোচবিহারে তৃণমূলের জগদীশচন্দ্র বসুনিয়ার কাছে নিশীথ হেরেছিলেন প্রায় ৪০ হাজার ভোটে। ইলেকশন পিটিশন দায়ের করে নিশীথ জানান, কোচবিহারের ভোটে কারচুপি হয়েছে। গণনাকেন্দ্রে শতাধিক ইভিএম বদল করা হয়েছে। এমনকি, কোচবিহারের ৮ শতাংশ বুথে দেদার ছাপ্পা ভোট হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন নিশীথ। তিনি আরও বলেছিলেন, সংখ্যালঘু এলাকাগুলিতে এক এক জন ভোটার একাধিক বার ভোট দিয়েছেন। ভোটের ‘সঠিক’ ফল জানতে যত দূর যাওয়া দরকার, তত দূর যাবেন তিনি।
আরামবাগে মাত্র ছ’হাজার ভোটে তৃণমূল প্রার্থী মিতালি বাগ জিতে গিয়েছেন। বিজেপি প্রার্থী জানান, যে ভাবে ভোট হয়েছে, তা তিনি মানছেন না। একই দাবি ওঠে ঘাটালেও। সেখানে এক লক্ষ ৮০ হাজার ভোটে জিতেছেন তৃণমূলের দেব। তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে হিরণ ভোটের দিন থেকেই কারচুপির অভিযোগ তুলেছিলেন। নির্বাচন বাতিলের দাবি জানিয়েছেন তিনিও।
ডায়মন্ড হারবার থেকে তৃণমূলের টিকিটে লড়েছেন স্বয়ং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সাত লক্ষের বেশি ভোটে জিতেছেন তিনি। সেখানেও ভোটে কারচুপির অভিযোগ তুলেছে বিজেপি। প্রার্থী অভিজিৎ হাই কোর্টে ভোট বাতিল চেয়ে ইলেকশন পিটিশন দায়ের করেছেন।
উল্লেখ্য, নির্বাচনের ফল ঘোষণার ৪৫ দিনের মধ্যে ইলেকশন পিটিশন দাখিল করতে হয়। সেই সময়সীমা পেরিয়ে গিয়েছে। এর পর আর কোনও প্রার্থী নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মামলা করতে পারবেন না আদালতে। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী আগেই জানিয়েছিলেন, বসিরহাট, ডায়মন্ড হারবার, ঘাটাল-সহ রাজ্যের বেশ কয়েকটি লোকসভা কেন্দ্র নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হতে চলেছে বিজেপি। ভোটপ্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ তুলে তিনি জানিয়েছিলেন, এই চার লোকসভা আসনের প্রার্থী কলকাতা হাই কোর্টে ইলেকশন পিটিশন করতে চলেছেন। সেই অনুযায়ী বিভিন্ন সময়ে পাঁচ প্রার্থী হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন। তাঁদের মামলা কোন বেঞ্চে উঠবে, তা স্থির হল। তবে এখনও শুনানির দিন স্থির হয়নি।