গ্বালিয়রে ‘ন্যাশনাল ট্রেনিং সেন্টার ফর ডগস’-এ প্রশিক্ষণের পর কলকাতার পথে। ছবি: রাজ্য বন দফতরের সৌজন্যে
‘অপারেশন নেপচুন স্ফিয়ারে’ মার্কিন নেভি সিল কম্যান্ডো বাহিনীর সঙ্গী হয়েছিল ওদেরই একজন। আফগানিস্তানের জালালাবাদ এয়ারস্ট্রিপ থেকে পাকিস্তানের অ্যাবটাবাদের উদ্দেশে উড়ে যাওয়া দু’টি স্টেলথ ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারের একটিতে সওয়ার হয়েছিল ‘কায়রো’! বেলজিয়ান ম্যালিনয় (ভিন্ন উচ্চারণে ম্যালিনওয়াঁ) প্রজাতির একটি কুকুর। এবার সুন্দরবনে চোরাশিকারিদের তৎপরতা রুখতে বন দফতরের সারমেয় বাহিনীতে যোগ দিতে আসছে কায়রোরই স্বজাতি সায়ানা।
রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল রবিকান্ত সিনহা শনিবার জানিয়েছেন, মধ্যপ্রদেশের গ্বালিয়রে বিএসএফ পরিচালিত ‘ন্যাশনাল ট্রেনিং সেন্টার ফর ডগস’-এ সফল প্রশিক্ষণপর্বের শেষে শনিবার কলকাতার উদ্দেশে রওনা দিয়েছে সায়ানা এবং অরল্যান্ডো নামে আরও একটি ম্যালিনয়। রবিবার গভীর রাতে তাদের সল্টলেকের বন্যপ্রাণী উদ্ধারকেন্দ্রে পৌঁছনোর কথা। সেখান থেকে সায়নাকে সুন্দরবনে এবং অরল্যান্ডোকে উত্তরবঙ্গের গরুমারা জাতীয় উদ্যানে পাঠানো হবে, রবিকান্ত বলেন, ‘‘এবারের ব্যাচে বিএসএফের ট্রেনিং সেন্টারে মাস ছয়েক ধরে প্রায় ৪০টি কুকুর প্রশিক্ষণ নিয়েছিল। সায়ানা তারে মধ্যে সেরা নির্বাচিত হয়েছে।’’
জার্মান শেফার্ড (অ্যালসেশিয়ান) এবং ল্যাব্রাডর নিয়ে কাজের অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও সাম্প্রতিক কালে ম্যালিনয় নিভর্রতা বেড়েছে রাজ্য বন দফতরের। এর কারণ কি? রবিকান্তের জবাব, ‘‘বুদ্ধিমত্তা এবং কমর্দক্ষতার নিরিখে বিশ্বে এই প্রজাতির কুকুরের জুড়ি নেই। এদের পরিশ্রম করার ক্ষমতাও যথেষ্টই। পাশাপাশি, উত্তরবঙ্গে অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি, এরা দ্রুত আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। তাই এবার সুন্দরবনেও এদের ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’ তিনি জানান, ওয়ার্কিং ব্রিডের কুকুর মূলত তিন রকমের, স্নিফার (গন্ধ শুঁকে বিস্ফোরক, মাদক ইত্যাদি খুঁজে বার করতে দক্ষ), ট্র্যাকার (পলাতক ব্যক্তি বা অন্য প্রাণীর পিছু ধাওয়া করে ধরায় পারদর্শী) এবং রট ওয়েলারের মতো চড়া মেজাজের অ্যাটাক ডগ। তাঁর কথায়, ‘জার্মান শেফার্ড, ল্যাব্রাডর এবং ম্যালিনয় প্রজাতির কুকুরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে তিন রকম কাজেই ব্যবহার করা যায়। আমাদের অ্যাটাক ডগ প্রয়োজন হয় না।’’
আরও পড়ুন: চিন সীমান্তে কড়া নজর, দরকারে বলপ্রয়োগের পূর্ণ স্বাধীনতা সেনাকে
বন দফতর সূত্রের খবর, ২০১৭ সালে প্রথম করিম নামে গ্বালিয়রে প্রশিক্ষত একটি ম্যালিনয় পশ্চিমবঙ্গ বন দফতরের কাজে যোগ দিয়েছিল। এর আগে রানি নামে একটি জার্মান শেফার্ড ছিল তাঁদের। করিমের পারফরম্যান্স দেখে পরবর্তীকালে আরও দু’টি ম্যালিনয় আনা হয়। এর মধ্যে করিম-সহ দু’টি বক্সা ব্যাঘ্রপ্রকল্প এলাকায় এবং একটি গরুমারায় রয়েছে। সায়ানা এবং অরল্যান্ডো যোগ দিলে ১০ সদস্যের সারমেয় বাহিনীতে ম্যালিনয়ের সংখ্যা দাঁড়াবে পাঁচ। শুধু চোরাশিকারি ধরা নয়, বন্যপ্রাণীর দেহাংশ ও বন্যপ্রাণ চোরাচালান রুখতেও সায়নাকে ব্যবহার করা হবে। পাশাপাশি, কাজে লাগানো হবে জঙ্গল থেকে বেরিয়ে গ্রাম-লাগোয়া বাদাবনে আশ্রয় নেওয়া বাঘ, হরিণ, বুনোশুয়োরদের সন্ধানেও।]
দেখুন ভিডিয়ো:
আরও পড়ুন: স্বজনপোষণ থেকে সুশান্তকে উপেক্ষা, অভিযোগের কী উত্তর দিলেন সলমন?
শুধু ২০১১ সালে লাদেন নিধন নয়, গত বছর সিরিয়ার ইদিলিবে আইএস নেতা আবু বকর আল বাগদাদিকে খুঁজে বার করার অভিযানেও মার্কিন ডেল্টা ফোর্সের সঙ্গী ছিল কোনান নামে একটি ম্যালিনয়। মার্কিন বাহিনীর ঘেরাটোপে পড়ে আত্মঘাতী বাগদাদি আত্মহত্যা করেন। আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধে লুকনো ল্যান্ডমাইন, বুবিট্র্যাপ খুঁজতে এই কুকুরই ভরসা ছিল ন্যাটো ফৌজের। ভারতে সেনা ও আধাসেনার পাশাপাশি বিভিন্ন রাজ্যের পুলিশ বাহিনীতেও দ্রুত গুরুত্ব বাড়ছে ম্যালিনয়দের। রাজ্যের এক বনকর্তা জানিয়েছেন, প্রাণশক্তিতে ভরপুর হলেও ম্যালিনয়দের খাওয়া-দাওয়া, বিশ্রাম এবং পরিচর্যার দিকটি সতর্ক ভাবে নজরে রাখতে হয়।