আট নম্বর লটের ঘাটে নামছেন সাগরযাত্রীরা। শিকেয় কোভিড বিধি। শুক্রবার। ছবি: সমরেশ মণ্ডল।
ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ১১০ জন চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী করোনা আক্রান্ত। রোগীদের পরিষেবা দিতে হিমসিম খাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। কাকদ্বীপ মহকুমার বিভিন্ন হাসপাতালে অন্তত জনা দশেক চিকিৎসক, নার্স কোভিড আক্রান্ত হয়ে ছুটিতে। পরিষেবার সমস্যা সেখানেও। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৭০৪ জন। অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার। এর মধ্যে কাকদ্বীপ মহকুমায় গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ২৩ জন আক্রান্ত বলে স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতেই ডায়মন্ড হারবার স্বাস্থ্য জেলার অন্তর্গত গঙ্গাসাগরে মেলার প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে। শুক্রবার তীর্থযাত্রীদের বিভিন্ন পরিষেবা প্রদানের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়েছে। যার উদ্বোধন করেন সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা। কর্মসূচির উদ্বোধনের কথা ছিল জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের মন্ত্রী পুলক রায়ের। কিন্তু তিনি অসুস্থ বলে জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর।
প্রশাসনের দাবি, সমস্ত কোভিড বিধি মেনেই মেলার আয়োজন হয়েছে। তবে বাস্তব চিত্র অন্য কথাই বলছে। পুলিশ-প্রশাসনের যেখানে সরাসরি নজরদারি, সেখানে লোকজনের মুখে মাস্ক আছে, দূরত্ববিধি মানার ব্যাপারেও সতর্কতা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু বিশাল মেলা প্রাঙ্গণের জায়গায় জায়গায় চলছে জটলা। নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও সমুদ্রে নেমে স্নান সারছেন অনেকে।
এ দিনও কচুবেড়িয়া ঘাটে দেখা গেল, পুণ্যার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। শারীরিক দূরত্বের বালাই নেই। কাকদ্বীপের লট ৮ ঘাটে জমা হয়েছিলেন বহু মানুষ। ভেসেলের টিকিট কাউন্টারে গায়ে গা লাগিয়ে যাত্রীরা দাঁড়িয়ে। ভেসেলে ওঠার সময়েও দূরত্ববিধি শিকেয় উঠেছে। প্রশাসনিক আধিকারিকেরা ঘণ্টাখানেক থেকে বিধি মানার কথা বলেন। মাস্ক ও স্যানিটাইজ়ার বিলি হয়। কিন্তু তাঁরা যাওয়ার পরে যে কে সেই। মেলা প্রাঙ্গণেও একই চিত্র।
মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ১০ জানুয়ারি। প্রশাসনের একটি সূত্রের দাবি, এ বার প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষ আসতে পারেন। মন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা বলেন, ‘‘প্রস্তুতিপর্ব চূড়ান্ত পর্যায়ে। গঙ্গাসাগরে একশো শতাংশ টিকাকরণ হয়ে গিয়েছে। আদালত যে রায় দিয়েছে, সেই অনুযায়ী মেলা হবে।’’
জেলা প্রশাসনের তরফে কোভিড বিধি মানার জন্য কপিলমুনির মন্দিরের সামনে প্রচার হচ্ছে। মাস্ক ছাড়া মেলায় যাতে কেউ ঢুকতে না পারেন, সে দিকে বিশেষ নজর রয়েছে বলে দাবি। লট ৮, কচুবেড়িয়া ঘাট, মেলার বিভিন্ন প্রান্তে বসানো হয়েছে স্যানিটাইজ়ার টানেল। মন্দির প্রাঙ্গণ ও মেলায় প্রবেশ পথে রাখা হয়েছে থার্মাল চেকিংয়ের ব্যবস্থা। ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভেসেল, বাস, অটো স্যানিটাইজ় করা হচ্ছে। কিন্তু বিপুল ভিড়কে কোভিড বিধি মানতে বাধ্য করা যে সহজ কাজ নয়, তা মানছেন প্রশাসনের কর্তাদের একাংশও।