পুত্রহারা: নিহত রিয়াজুল মোল্লার মা মারুফার শাড়িতে লেগে রক্তের দাগ। — নিজস্ব চিত্র।
রক্তের দাগ শুকিয়ে এসেছে। তবু সেই শাড়িখানাই এখনও গায়ে জড়িয়ে ঘুরছেন মা। তাঁর চোখের সামনেই গুলি লেগে মারা গিয়েছে ন’বছরের ছেলে রিয়াজুল। যাঁকে রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তা থেকে তুলে এনেছিলেন তিনি।
বাসন্তীর চড়াবিদ্যা পঞ্চায়েতের ৩ নম্বর হেতালখালি প্রাথমিক স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ত মারুফার ছেলে রিয়াজুল মোল্লা। বোমা-গুলির শব্দ পেয়ে মারুফা বৃহস্পতিবার দুপুরে ছেলেকে আনতে ছোটেন স্কুলে। মারুফা বলেন, ‘‘স্কুলের পাশেই বোমা পড়ছিল। গুলি চলছিল। ছেলেকে ক্লাস থেকে বের করি। ভেবেছিলাম এক ছুটে গ্রামে ঢুকে যাব।’’ মারুফা জানান, ছেলে হঠাৎ হাত ছাড়িয়ে দৌড় দেয়। তারপর পড়ে যায়। মা দেখেন, বুক থেকে রক্ত বেরোচ্ছে। রিয়াজুলকে কোলে তুলে দৌ়ড়ন। এক আত্মীয় ছেলেকে নিয়ে ছোটেন হাসপাতালে। তত ক্ষণে দেহে প্রাণ নেই।
শুক্রবার বেলা পর্যন্ত ছেলের রক্তে ভেজা সেই শাড়িই গায়ে জড়িয়ে মা। কাঁদতে কাঁদতে দেখালেন রক্তের দাগ। দুই ছেলেমেয়ের মধ্যে ন’বছরের রিয়াজুলই বড়। ছোট মেয়ে বছর চারেকের। সন্তান শোকের মধ্যে মারুফা পাশে পাচ্ছেন না স্বামী রফিকুলকেও। তিনিও বৃহস্পতিবার দূর থেকে ছেলেকে গুলি খেতে দেখেছিলেন। রফিকুলের কথায়, ‘‘ছেলের ওই অবস্থা দেখেও আমি এগোতে পারিনি। তখন বোমা-গুলি চলছে। পুলিশ ঢুকছে গ্রামে। পড়শিরা আমাকে ধরে রাখে। বলে এগিয়ে গেলে আমিও মরব।’’
আরও পড়ুন: জিএসটি আদায় কম, ভাঁড়ার খালি, বিপন্ন উন্নয়ন
পুলিশি ধরপাকড়ের ভয়ে না তো হাসপাতালে গিয়েছেন রফিকুল, না ফিরতে পেরেছেন বাড়িতে। বললেন, ‘‘মরা ছেলেটাকে চোখের দেখাও দেখতে পাচ্ছি না।’’
রিয়াজুলের দেহ গিয়েছে ময়নাতদন্তে। অন্য দিকে, গুলিতে নিহত যুব তৃণমূল কর্মী হাসান লস্করের দেহ নিয়ে বৃহস্পতিবার রাতভর বিক্ষোভ চলে চড়াবিদ্যায়। শুক্রবার সকালেও দেহ নিয়ে ঘণ্টা দেড়েক অবরোধ হয় মিলনবাজারে। যুব তৃণমূল নেতৃত্বের মধ্যস্থতায় পরিস্থিতি শান্ত হয়। প্রশাসনের অবশ্য দাবি, হাসানের বিরুদ্ধে পুলিশের খাতার নানা অভিযোগ আছে।
বৃহস্পতিবার বাসন্তীর গ্রামে তৃণমূলের দু’পক্ষের লড়াইয়ে ইতিমধ্যেই ৭ জন গ্রেফতার হয়েছে বলে জানান এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সঞ্জয় সিংহ। জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, থানায় লিখিত অভিযোগ না হলেও কিছু নাম শোনা যাচ্ছে। তাদের খোঁজ চলছে। শতাধিক গুলির খোল উদ্ধার হয়েছে। গ্রামবাসীদের একাংশের অভিযোগ, তৃণমূল পরিচালিত চড়াবিদ্যা পঞ্চায়েত প্রধানের ছেলে তপু মাহাতো নামে এক যুবকের নেতৃত্বে হামলা চলেছে।