নির্মাণের ত্রুটিতেই কি বিপদের ফাঁদ বারুইপুর ফুটব্রিজে?

রেল সূত্রের খবর, স্টেশনের ফুটব্রিজের তিনটি অংশ থাকে। সিঁড়ি, ল্যান্ডিং এবং লাইন পারাপারের জন্য ডেক-স্ল্যাব। প্ল্যাটফর্ম থেকে যাত্রীরা যাতে সিঁড়িতে টানা ওঠার পরিশ্রম থেকে রেহাই পান, তার জন্য কিছুটা সমতল অংশ তৈরি করা হয়।

Advertisement

ফিরোজ ইসলাম

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:৪৮
Share:

অবহেলা: বালিগঞ্জ স্টেশনে ফুটব্রিজের স্ল্যাবের নীচে দু’টির জায়গায় রয়েছে মাত্র একটি করে লোহার বিম।

বারুইপুর স্টেশনে ফুটব্রিজের স্ল্যাব খসে দুর্ঘটনার পিছনে ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীদের লাইন পারাপারের প্রবণতার পাশাপাশি ওই ব্রিজের ল্যান্ডিংয়ের নির্মাণগত ত্রুটিকেও দুষছেন রেলকর্তাদের একাংশ। শুধু বারুইপুর স্টেশন নয়, নির্মাণগত ওই সমস্যা ধরা পড়েছে আরও অনেক স্টেশনেই। যা থেকে এমন ধরনের দুর্ঘটনা আবারও ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা।

Advertisement

রেল সূত্রের খবর, স্টেশনের ফুটব্রিজের তিনটি অংশ থাকে। সিঁড়ি, ল্যান্ডিং এবং লাইন পারাপারের জন্য ডেক-স্ল্যাব। প্ল্যাটফর্ম থেকে যাত্রীরা যাতে সিঁড়িতে টানা ওঠার পরিশ্রম থেকে রেহাই পান, তার জন্য কিছুটা সমতল অংশ তৈরি করা হয়। একেই রেলের পরিভাষায় ল্যান্ডিং বলে। ফুটব্রিজের ভারবাহী চারকোনা স্তম্ভের উপরেই ল্যান্ডিং তৈরি করা হয়।

স্তম্ভের উপরে ইস্পাতের চৌকো ফ্রেমের মধ্যে আগে থেকে তৈরি করা কংক্রিটের স্ল্যাব (প্রি-কাস্ট স্ল্যাব) ফেলে সমতল অংশ বা ল্যান্ডিং তৈরি হয়। চারপাশে আধ ইঞ্চির মতো চওড়া ইস্পাতের ফ্রেমের খাঁজে একাধিক স্ল্যাব আটকে থাকে। বারুইপুর স্টেশনের ফুটব্রিজে কোনও কারণে ওই ইস্পাতের ফ্রেম সরে গিয়ে মাঝের ফাঁক বেড়ে গিয়েই বিপত্তি ঘটে থাকতে পারে বলে রেলকর্তাদের একাংশের অনুমান। পাশাপাশি, প্রি-কাস্ট স্ল্যাবের কিনারাও ক্ষয়ে গিয়ে থাকতে পারে। তবে স্ল্যাব ভাঙেনি বলেই খবর।

Advertisement

বারুইপুরের ফুটব্রিজে এই অংশ থেকেই খুলে পড়েছিল স্ল্যাব।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক পার্থপ্রতিম বিশ্বাসের মতে, নিরাপত্তার স্বার্থে ওই ইস্পাতের ফ্রেমের নীচের দিকে ঠেকনা (সাপোর্ট) হিসেবে আড়াআড়ি ভাবে একাধিক ইস্পাতের বিম ব্যবহার করলে বিপত্তি এড়ানো যেত। কোনও কারণে ফ্রেম সরে গেলেও স্ল্যাব খসে পড়ত না। এ ক্ষেত্রে ওই ঠেকনা না থাকায় দুর্ঘটনাটি ঘটে।

এ দিন শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার একাধিক স্টেশনের ফুটব্রিজে ওই সমস্যা চোখে পড়েছে। বারুইপুর স্টেশনের আরও দু’টি ফুটব্রিজ ছাড়াও মল্লিকপুর, সুভাষগ্রাম, নরেন্দ্রপুর এবং সোনারপুর স্টেশনের ফুটব্রিজেও স্ল্যাবের নীচে কোনও ঠেকনা দেখা যায়নি। রেলকর্তাদের একাংশের অবশ্য সাফাই, স্তম্ভের নীচ দিয়ে যাত্রীদের পারাপার করার কথাই নয়। ফলে ওই অংশে সব সময়ে আড়াআড়ি বা কোনাকুনি বিম ব্যবহার করা হয় না। রেললাইনের উপরে থাকা ডেক-স্ল্যাবে যা ব্যবহার করা কার্যত বাধ্যতামূলক।

সেখানে স্ল্যাবের নীচে একটি বিমও নেই।

মাঝেরহাট ব্রিজ ভেঙে পড়ার পরে নিরাপদ মনে না হওয়ায় যাদবপুর স্টেশনের ফুটব্রিজটি মেরামতির স্বার্থে রেল বন্ধ করে দিয়েছে। বালিগঞ্জ স্টেশনেও দক্ষিণ প্রান্তের একটি ব্রিজে একই সমস্যা দেখা গিয়েছে।

তবে রেলের তরফে জনবহুল স্টেশন সোনারপুর ও বালিগঞ্জে পরে যে তিনটি ফুটব্রিজ তৈরি করা হয়েছে, সেগুলি এখনও যথেষ্ট শক্তপোক্ত। ইস্পাতের পাতের উপরে টানা ঢালাই করে ওই ব্রিজগুলি তৈরি করা হয়েছে। ফলে স্ল্যাব খসে পড়ার আশঙ্কা নেই।

এ দিন বারুইপুর স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, রেলের তরফে ফুটব্রিজটি বন্ধ করে দেওয়া হলেও লোকজন আগের মতোই ঝুঁকি নিয়ে লাইন পারাপার করছেন। এই স্টেশনের দুর্ঘটনায় মৃত অসীমা প্রামাণিক এবং আহত ছবি নস্করও আইন ভেঙে লাইন পারাপার করছিলেন বলে অভিযোগ।

রেলের শিয়ালদহ ডিভিশন সূত্রের খবর, যাত্রীরা যাতে ফুটব্রিজ ব্যবহার করেন, তার জন্য কর্মী রেখে যাত্রীদের সচেতন করা হবে। ল্যান্ডিংয়ে কোনাকুনি বিম বসানোর বিষয়টিও বিবেচনায় উঠে এসেছে বলে খবর। তবে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পরে।

ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল ও স্নেহাশিস ভট্টাচার্য।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement