প্রতীকী ছবি।
এক দিনে ভাটপাড়ার জোড়া খুনের একটির তদন্তে ফের উঠে এল সিন্ডিকেটের কাজিয়া। অন্যটিতে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় বচসা থেকেই রক্তপাত কি না, সেই রহস্যভেদ সোমবার পর্যন্ত হয়নি।
সিন্ডিকেট কার দখলে থাকবে, সেই টানাপড়েনের পাশাপাশি পুরসভার ঠিকাদারির বরাত নিয়ে বিবাদের জেরেই রীতিমতো ছক কষে শনিবার দুপুরে ভাটপাড়ার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বাঁকড়া মহলে মহম্মদ সালাউদ্দিন আনসারিকে (৩৫) খুন করা হয়েছে বলে ব্যারাকপুর কমিশনারেটের পুলিশ অফিসারেরা দাবি করছেন।
সালাউদ্দিন খুনে শাহবাজ নাজ়ির ওরফে পঙ্কজ এবং ওয়াসিম আলম ছাড়া এখনও কেউ ধরা পড়েনি। শনিবার রাতেই ভাটপাড়ার ২২ নম্বর ওয়ার্ডে শান্তিনিবাস পল্লিতে রোহিত দাসের (১৮) হত্যাকাণ্ডে এ দিন পর্যন্ত মূল অভিযুক্ত করণ যাদব-সহ তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে এক জন নাবালক হওয়ায় জুভেনাইল কোর্টের নির্দেশে তাকে পাঠানো হয়েছে সরকারি হোমে। বাকি দুই অভিযুক্তকে সাত দিনপুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
নেশাগ্রস্ত অবস্থায় নিছক কথা কাটাকাটির জেরে মেজাজ হারিয়ে রোহিতের বুকে গুলি চালিয়ে দেওয়া হয়েছিল, না, অন্য কোনও কারণ আছে, ধৃতদের লাগাতার জেরার পরেই সেটা স্পষ্ট হবে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। তাঁরা জানান, এখনও পর্যন্ত ভুল করে ট্রিগারে হাত পড়ে যাওয়ায় গুলি ছিটকে রোহিতের গায়ে লাগার কথাই বলছে করণ।
গত ছ’মাসে ‘আর্মস অ্যাক্ট’বা অস্ত্র আইনে প্রায় দু’শোমামলা হয়েছে এই কমিশনারেটে।তার মধ্যে শুধু ভাটপাড়াতেই ২৫টি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, ২৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। অস্ত্র আইনে মামলা হয়েছে ৪০ জনের বিরুদ্ধে। সালাউদ্দিন খুনে ধৃত শাহবাজকেও গত ৩০ মার্চ ভাটপাড়া থেকেপুলিশ গ্রেফতার করেছিল অবৈধ অস্ত্র রাখা এবং হামলাবাজির অভিযোগে। কিছু দিন পরেই জামিনে ছাড়া পেয়ে যায় সে।
কমিশনারেটের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘কেন দুষ্কৃতী বাড়বে না? গ্রেফতার করে আদালতে পাঠালে ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে দশ-পনেরো দিনের মধ্যেই। খুব বেশি হলে মাস দু’-তিন জেল খাটছে এনডিপিএস বা আর্মস অ্যাক্টে। বেরিয়ে আসার পরে আরও বেশি সাহসী আর বেপরোয়া হয়ে উঠছে দুষ্কৃতীরা। খুনের ধরনটাতাই মুম্বই বা দক্ষিণের সিনেমাকেও হার মানাচ্ছে।’’
পুলিশ আধিকারিকদের একাংশের ক্ষোভ, ভিন্ রাজ্যথেকে এই ধরনের দুষ্কৃতীদেরহাত ঘুরেই গ্লক পিস্তল,ওয়ানশটারের মতো আগ্নেয়াস্ত্র এই শিল্পাঞ্চলে ঢোকে। এখানে ১৫০০/১৮০০ টাকায় ওয়ানশটার পাওয়া খুব একটা কঠিন না। জনসংখ্যার নিরিখে এই অঞ্চলে পুলিশকর্মীর সংখ্যা নিতান্তই কম।
আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পুলিশ তো আজকাল নিরপেক্ষ তদন্ত করতেই পারে না। বেশির ভাগ থানাচলছে সিভিক ভলান্টিয়ারদিয়ে। এলাকার নেতারাই এখনশেষ কথা বলছেন। যাঁরা তাঁদের তাঁবেদারি করছেন না, তাঁদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার ঘটনা গত এক দশকে এত বেশি সামনে এসেছে যে, জজ সাহেবরা আর সরকারি কৌঁসুলি বা থানার তদন্তকারী অফিসারের কথা বিশ্বাস করতে পারছেন না।’’