গত বিধানসভা নির্বাচনের ফল তাঁর বিপক্ষে।
প্রতিদ্বন্দ্বীর পিতৃপরিচয়ও অস্বস্তির বড় কারণ।
কিন্তু মমতাজ সংঘমিতার সঙ্গে পুরনো পরিচয় আর দিল্লি-তুতো দেখা-সাক্ষাতের উষ্ণতাই টিকিয়ে রাখতে চাইছেন সাইদুল হক।
বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা আসনে সিপিএম প্রার্থী সাইদুল হকের বিরুদ্ধে এ বার তাঁরই দলের অন্যতম অগ্রণী নেতা, প্রয়াত মনসুর হবিবুল্লাহর মেয়ে মমতাজ। বর্ধমানে পা দিয়েই তিনি আব্বার কথা তুলেছেন। সাইদুলের তাই আশা, অন্তত ব্যক্তিগত কুৎসা কারও প্রচারের হাতিয়ার হবে না।
মমতাজ সংঘমিতা
সাইদুল হক
সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়ে চিকিৎসক সংঘমিতা এখন দিল্লির একটি হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত। বর্ধমান রাজ কলেজের ইংরেজির শিক্ষক সাইদুলও সাংসদ হিসেবে গত পাঁচ বছরে বারবার দিল্লি গিয়েছেন। তাঁর কথায়, “মমতাজদির সঙ্গে আমার সম্পর্ক বেশ ভাল। উনিও দিল্লি ছুটতেন। আমিও। দেখা হতো। কথা হতো। আশা করি, সেই দিনগুলোর কথা উনি মনে রাখবেন।”
কুরুক্ষেত্র শুরু হওয়ার আগেই কেন এত নরম সুর বাম প্রার্থীর?
হিসেব বলছে, ২০০৯ সালে সাইদুল এক লক্ষ আট হাজার ভোটের ব্যবধানে জিতেছিলেন। এই কেন্দ্রের অন্তর্গত সাতটি বিধানসভা আসনের মধ্যে এক মাত্র বর্ধমান দক্ষিণে পিছিয়ে ছিল তাঁর দল। কিন্তু মাত্র দু’বছর পরে বিধানসভা নির্বাচনে বর্ধমান দক্ষিণ, ভাতার, দুর্গাপুর পূর্ব ও পশ্চিমে হেরে যায় বামেরা। বাকি তিনটিতে তারা জিতেছিল। অর্থাৎ গোড়াতেই ৪-৩ ফলাফলে পিছিয়ে থেকে লড়াই শুরু করতে হচ্ছে সাইদুলকে।
এ বার কি তা হলে অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই? “আরে না না! তা হবে কেন? ২০০৯ সালে মানুষের মনে যে পরিবর্তনের আশা জাগতে শুরু করেছিল, তার টানেই তো ২০১১-য় তাঁরা আমাদের ছেড়ে গিয়েছিলেন। তিন বছরে পরিবর্তনের হাল দেখে তাঁরা হতাশ। সন্ত্রাস আর তোলাবাজি দেখে বিরক্ত। এখন তাঁরা পরিবর্তনের পরিবর্তন চাইছেন। মানুষ যদি নির্ভয়ে ভোট দিতে পারেন, তা হলে আমরাই জিতব” দাবি বিদায়ী সাংসদের।
কিন্তু মমতাজ তো আপনাদের প্রয়াত নেতার কথা বলেই ভোট চেয়ে বেড়াচ্ছেন? তবে কি বামপন্থী ভোট দল আর পরিবারের প্রার্থীর মধ্যে ভাগ হয়ে যাবে? সাইদুল মনে করিয়ে দেন, “মনসুর হবিবুল্লাহ আমাদের দলের ত্যাগী নেতা। তাঁর আর তাঁর দাদা সহিদুল্লাহ সাহেবের দানেই আমাদের জেলা কার্যালয় হয়েছে।” পৈতৃক বাড়ি সিপিএমের হাতে চলে যাওয়ায় মমতাজ যে আগেই মামলা ঠুকেছেন, সে প্রসঙ্গ অবশ্য তিনি তোলেননি।
তবে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীর স্বামী, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নুরে আলম চৌধুরী যে রাজ্যের মন্ত্রী তা মনে করিয়ে সাইদুলের কটাক্ষ, “মমতাজদি যদি মেয়ে হিসেবে ভোটের বাজারে মনসুর সাহেবের নাম করেন, তিনি যে তৃণমূলের মন্ত্রীর স্ত্রী, সেটাও বলছেন না কেন? জানবেন, ব্যক্তি নিয়ে ভোট হবে না, ভোট হবে নীতির ভিত্ত্রিতে।”
রাজনৈতিক মহলের মতে, গোটা বর্ধমান জেলা জুড়ে তৃণমূলের হাওয়া চললেও সাইদুলের এক মাত্র ভরসা হতে পারে তাঁর পরিচ্ছন্ন ইমেজ। সাংসদ তহবিলের টাকা তিনি ভালই খরচ করেছেন। তাঁর দাবি, “উন্নয়নের ব্যাপারে আমি দল দেখি না। দুর্গাপুর পুরসভা তৃণমূলের হাতে। তাতে কিন্তু ওদের পরপর কোটি টাকা করে দিতে পিছপা হইনি। বর্ধমান পুরসভাও আমার সাংসদ কোটার টাকায় বিশাল নর্দমা তৈরি করছে।”
আপাতত সকালে কলেজে পড়িয়ে রোজ প্রচারে বেরোচ্ছেন সাইদুল। যদি হেরে যান, সংঘমিতার সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকবে? সাইদুল বলেন, “ফল যা-ই হোক, ১৬ মে-র পরে দেখা হলে বলব, কেমন আছেন মমতাজ দিদি? আশা করি, উনিও বলবেন, তুমি ভাল আছো তো ভাই?”
শুনে হো-হো করে হাসেন মমতাজও “ও মা, তা-ই তো হবে! দল দলের জায়গায়। ব্যক্তিগত সম্পর্ক তার জন্য খারাপ হতে যাবে কেন?”
—নিজস্ব চিত্র।