দিন পনেরো আগেই কাটোয়া থেকে এসে কেতুগ্রামের কোমরপুর হাটতলায় ভাড়বাড়িতে ডেরা জমান জয়গুন্নেসা বিবি। সোমবার দুপুরে মাদক পাচার করার অভিযোগে তাকেই গ্রেফতার করল পুলিশ। মুর্শিদাবাদের লালগোলা থেকে হেরোইন দিতে এসে পুলিশের জালে ধরা পড়লেন নুরুল শেখও।
পুলিশ তাদের কাছ থেকে ৩০০ গ্রাম হেরোইন ও কয়েক হাজার টাকা উদ্ধার করেছে। কোমরপুরের ওই বাড়ির মালিককেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ। জেলা পুলিশ সুপার মিরাজ খালিদ বলেন, “আমরা এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছি।”আজ, মঙ্গলবার ধৃতদের কাটোয়া আদালতে তোলা হবে।
পুলিশ দিনভর জেরা করে জানতে পেরেছে, জয়গুন্নেসা বিবির স্বামী ফিরোজ শেখও হেরোইন পাচারে জড়িত ছিল। তবে কয়েক বছর আগে সে মারা যাওয়ার পরে স্বামীর ‘জায়গা’ নেন জয়গুন্নেসা। প্রথম দিকে এলাকার মধ্যে হেরোইন বিক্রি সীমাবদ্ধ থাকলেও হাত পাকার পরে অন্য এলাকাতেও পসার জমায় সে। এখন মুর্শিদাবাদের সালার-সহ বিভিন্ন জায়গায় হেরোইন পাচার করে জয়গুন্নেসা। পুলিশ জানিয়েছে, জয়গুন্নেসার বাড়ি কাটোয়ার কেশিয়ার মাঠপাড়ায়। ওই এলাকা এমনিতেই দুষ্কৃতীদের ‘মুক্তাঞ্চল’ হিসেবে পরিচিত। ওই দুষ্কৃতীদের একাংশের দাপটেই জয়গুন্নেসা বিবি তিন ছেলে নিয়ে কোমরপুর হাটতলায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেন। ওই আত্মীয় মাসে ৫০০ টাকা ভাড়ায় তাঁর বাড়ি থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে একটি বাড়ি দেখে দেন। সেখানেই একটি ঘরে থাকতেন জয়গুন্নেসা। পাশের একটি ঘরে আর একটি পরিবার ভাড়া থাকত। তবে ঘুণাক্ষরেও তাঁরা বুঝতে পারেননি পড়শি মহিলা একজন মাদক-পাচারকারী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পড়শিরা বলেন, “আমরা ওই মহিলার মুখ দেখতেই পাইনি। ভোরে বেরিয়ে যেতেন। আর রাত করে বাড়ি ফিরতেন।” পড়শি মহিলাদেরই একজন জানান, গভীর রাতে মোটরবাইকে অচেনা যুবকদের আনাগোনা ছিল ওই ভাড়া বাড়িতে। জয়গুন্নেসা বিবির এক আত্মীয় বলেন, “ও যদি এ রকম অন্যায় কাজ করে জানতাম, তাহলে কী আশ্রয় দিতাম। ওকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাওয়ার পরে ওর ছেলেদেরও খোঁজ পাচ্ছি না। কী রকম দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলাম বলুন তো!” বাড়ির মালিক কামাল শেখের বক্তব্য, “ওই মহিলাকে তো ভাড়া দিই নি। ভাড়া দিয়েছিলাম তাঁর আত্মীয়কে। তা সত্ত্বেও পুলিশ আটকে রেখেছে। ভাড়া দিয়ে ফেঁসে গেলাম।”
পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন সকালে মুর্শিদাবাদের লালগোলা থানার লাবতলা এলাকার নূরুল শেখ মোটরবাইক করে কেতুগ্রামে আসেন। কোমরপুর হাটতলায় ভাড়া বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে ফাঁকা জায়গায় নুরুলের কাছ থেকে হেরোইনের প্যাকেট নেওয়ার সময় কেতুগ্রামের আইসি বিজয় ঘোষ বমাল জয়গুন্নেসা বিবিকে ধরে ফেলেন। নুরুল পালাতে গেলে পুলিশ ধরে ফেলে। তবে নুরুলকে জেরা করে এখনও কিছু জানতে পারেনি পুলিশ। এসডিপিও (কাটোয়া) ধ্রুব দাস অবশ্য পৃথক ভাবে ধৃতদের জেরা করে হেরোইন-চক্রের হালহকিকত জানার চেষ্টা করছেন।