প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানের পুরস্কার বিতরণে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগে তেতে উঠেছে কালনা শহর। আঁচ মিলেছে শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বেরও।
২৬ জানুয়ারি কালনার শহরের অঘোরনাথ পার্ক স্টেডিয়ামে ওই অনুষ্ঠানের পরে পুরস্কার প্রাপকদের তালিকায় পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে রাস্তা অবরোধ করেছিল এলাকার চারটে ক্লাবের সদস্য ও একটি স্কুলের পড়ুয়ারা। সেই অবরোধের বিরোধিতা করে শহরে পাল্টা মিছিল বের হল শুক্রবার। দুই শিবিরেরই নেতৃত্বে রয়েছেন শহর তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা।
প্রতি বছর প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন কুচকাওয়াজ-সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে মহকুমা প্রশাসন। এলাকার সরকারি ও বেসরকারি স্কুল, ক্লাব, সামাজিক সংগঠনগুলি প্রতিযোগিতায় যোগ দেয়। অনুষ্ঠান শেষে সফলদের পুরস্কৃত করা হয়। এ বারও সেই অনুষ্ঠানে কুচকাওয়াজ ও প্রতিযোগিতা শান্তিপূর্ণ ভাবে মিটে গেলেও পুরস্কার প্রাপকদের নাম ঘোষণা হওয়ার পরেই অনুষ্ঠানের তাল কেটে যায়। শহরের চারটি ক্লাব এবং একটি সরকারি স্কুল পুরস্কার নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে। তাঁদের দাবি, একটি বেসরকারি সংস্থাকে পুরস্কার দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাব খাটানো হয়েছে। বিক্ষুব্ধ প্রতিযোগীরা বৈদ্যপুর মোড়ে পথ অবরোধ করে। মহকুমাশাসককে লিখিত অভিযোগ করে তাঁরা দাবি করেন, প্রতি বছর একটি বেসরকারি সংস্থা অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব খাটিয়ে পুরস্কার নিয়ে চলে যাচ্ছে। যদিও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে প্রশাসন জানায়, কালনা ১ ব্লকের বিডিও, কালনার সিআই, এনসিসির এক আধিকারিক-সহ পাঁচ জন সরকারি প্রতিনিধি বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তারপরেও বিক্ষুব্ধরা নিজেদের দাবি থেকে সরেনি।
অভিযোগকারীদের একাংশের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, বিক্ষোভের মুখ এলাকার চারটি ক্লাব ও একটি স্কুল হলেও এই ঘটনার পিছনে শহর তৃণমূলের একটি গোষ্ঠীর ইন্ধন রয়েছে। সে কারণেই বিষয়টি জানার পরে নড়েচড়ে বসেছে তৃণমূলের অন্য গোষ্ঠী। পুরস্কারের লোভে কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের সম্মানহানি করা হয়েছে অভিযোগে শুক্রবার শহরের পুরনো বাসস্ট্যান্ড থেকে মহকুমাশাসকের কার্যালয় পর্যন্ত মিছিল করেন তাঁরা। মিছিলে ছিলেন কালনা পুরসভার কাউন্সিলার দেবপ্রসাদ বাগ, কল্পনা বসু এবং গোকুল বাইন। যাঁরা পুরপ্রধান তথা স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডুর বিরোধী শিবিরের লোক বলে বলেই এলাকায় পরিচিত। মিছিল শেষে মহকুমাশাসকের কার্যালয়ে স্মারকলিপি দেন তাঁরা। সেখানে দাবি করা হয়, ২৬ জানুয়ারির অবাঞ্চিত ঘটনায় যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে শাস্তি দিতে হবে। ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দেবপ্রসাদবাবুর দাবি, “ওই দিন যাঁরা পরিকল্পিত ভাবে অশান্তি করেছে তাঁদের নামের তালিকা আমরা প্রশাসনের কাছে দিয়ে এসেছি।” যদিও প্রজাতন্ত্র দিবসের এত দিন পরে এই মিছিল কেন করা হল সেই নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
তবে ২৬ জানুয়ারির পথ অবরোধ কিংবা এ দিনের মিছিল —কোথাও তৃণমূলের কোনও পতাকা ছিল না। তবু দু’টি কর্মসূচিতেই তৃণমূল কর্মী ও কাউন্সিলরদের দেখা যাওয়ায় অস্বস্তি এড়াতে পারছেন না দলের নেতারা। কালনার তৃণমূল বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডুর দাবি, “কারও কথায় কেউ প্রশাসনের কাছে যেতে পারে। তবে ২৬ জানুয়ারির ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করা প্রয়োজন।” তাঁর সংযোজন, “প্রয়োজনে অনুষ্ঠানে দেওয়া পুরস্কার তুলে দেওয়ার কথা ভাবতে পারে প্রশাসন।” তবে কালনার মহকুমাশাসক সব্যসাচী ঘোষ জানান, শুক্রবার যে স্মারকলিপিটি জমা পড়েছে সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।