হাইকোর্টের নির্দেশে সালানপুর ব্লকের বাসুদেবপুর-জেমারি গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রধানের পদ দখল করেছে তণমূল। সোমবার এই পদের দায়িত্বভার নিয়েছেন রিঙ্কু বাউরি। এর ফলে, এই পঞ্চায়েতের প্রধান পদ নিয়ে বছরখানেক ধরে চলা অচলাবস্থার অবসান হল।
গত পঞ্চায়েত ভোটে ১১ আসনের এই পঞ্চায়েতে সিপিএম এবং তৃণমূলদু’পক্ষই পাঁচটি করে আসন দখল করে। একটি আসন পায় কংগ্রেস। গত বছর ২৩ অগস্ট পঞ্চায়েতের প্রধান নির্বাচনের দিন ছিল। এখানকার প্রধানের পদটি তফসিলি জাতির মহিলা প্রার্থীর জন্য সংরক্ষিত। সেই দিন ব্লক প্রশাসনের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে প্রধান নির্বাচনের জন্য হাজির হন তৃণমূল এবং সিপিএমের সদস্যেরা। প্রধান পদের জন্য সিপিএমের কবিতা বাউরি ও তৃণমূলের রিঙ্কু বাউরি মনোনয়ন জমা দেন। প্রশাসনের প্রতিনিধি দুই প্রার্থীকেই তফসিলি জাতির শংসাপত্র জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন। সিপিএম প্রার্থী তা জমা দিতে পারলেও তৎক্ষণাত তা জমা করতে পারেননি তৃণমূল প্রার্থী। ওই শংসাপত্র বাড়িতে রেখে এসেছেন জানিয়ে সেটি আনার জন্য সময় চান তিনি। ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, তৃণমূল প্রার্থীকে সময় দেওয়ার পরেও তিনি নির্দিষ্ট সময়ে তা এনে হাজির করতে পারেননি।
সেই পরিস্থিতিতে ব্লক প্রশাসনের তরফে সিপিএম প্রার্থীকে প্রধান হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তার পরেই বিক্ষোভ শুরু করেন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা। তাঁরা দাবি করেন, এই প্রধান নির্বাচন বেআইনি। তা বাতিল করে ফের নির্বাচন করতে হবে। গভীর রাত পর্যন্ত বিক্ষোভ চলে। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে বিডিও প্রশান্ত মাইতি উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে বিক্ষোভ থামে।
গত বছর ৩ সেপ্টেম্বর ব্লক প্রশাসন ফের ওই পঞ্চায়েতে প্রধান নির্বাচনের দিন ঠিক করেন। কিন্তু এ বার বিক্ষোভ শুরু করে সিপিএম। তারা দাবি তোলে, এক বার প্রধান নির্বাচন হয়ে গেলে তা বাতিল করে আবার নির্বাচন করা যায় না। সিপিএমের পক্ষ থেকে বিডিও-র সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে হাইকোর্টে মামলা করা হয়। হাইকোর্ট থেকে কোনও নির্দেশ আসার আগেই প্রধান নির্বাচন হয়ে যায়। তাতে যোগ দেয়নি সিপিএম। ফলে, একতরফা প্রধান নির্বাচিত হন তৃণমূলের রিঙ্কু বাউরি। কিন্তু তিনি দায়িত্বভার নেওয়ার আগের দিন প্রধান নির্বাচন নিয়ে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ পৌঁছয়। এত দিন প্রধান বাছাই ঝুলে ছিল।
বাসুদেবপুর-জেমারি পঞ্চায়েতে প্রধান বাছাই না হওয়ার জেরে সমস্যায় পড়েছিল পঞ্চায়েত সমিতিও। সব পঞ্চায়েতের প্রধানকে ছাড়া পঞ্চায়েত সমিতির স্থায়ী কমিটি গড়া যায় না। একটি পঞ্চায়েতে প্রধান নির্বাচিত না হওয়ায় সালানপুর পঞ্চায়েত সমিতির স্থায়ী কমিটি গঠন হয়নি। ফলে, গোটা পঞ্চায়েত সমিতিরই উন্নয়নমূলক কাজ ব্যাহত হচ্ছিল বলে সমিতি সূত্রে খবর।
সোমবার সালানপুরের বিডিও প্রশান্তবাবু বলেন, “সিপিএমর তরফে যে আবেদন করা হয়েছিল, আদালত তা খারিজ করে দিয়েছে। তাই আমরা রিঙ্কু বাউরিকে দায়িত্বভার বুঝিয়ে দিয়েছি।” এলাকার তৃণমূল নেতা পাপ্পু উপাধ্যায় বলেন, “আদালতেই সত্য প্রমাণিত হয়েছে। আমরা খুশি।” সিপিএমের বারাবনি জোনাল সম্পাদক অসীম বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “আদালতের রায় আমরা মানব। আমরা বিরোধী আসনে বসতে প্রস্তুত।”