সিএনজি ভরার জন্য লম্বা লাইন পৌঁছে গেল ২ নম্বর জাতীয় সড়কে। সোমবার দুর্গাপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র।
প্রায় দেড় হাজার যানবাহনের জন্য ভরসা মাত্র দু’টি গ্যাস ভরার স্টেশন। তার মধ্যে একটি বিকল হয়ে গিয়েছে রবিবার। ফলে, সোমবার ভোর থেকে একমাত্র চালু স্টেশনটিতে অটো ও গাড়ির লম্বা লাইন পড়ল দুর্গাপুরে। বিপাকে পড়েন দুর্গাপুরের সিএনজি চালিত গাড়ির মালিক ও চালকেরা।
গত কয়েক বছরে শহরে সিএনজি চালিত যানবাহনের সংখ্যা বহু গুণ বেড়েছে। সিএনজি চালিত অটো চালু হয় ২০০৮ সালে। তখন অটোর সংখ্যা ছিল মাত্র ৮০টি। সিএনজি ভরার স্টেশন ছিল দু’টি। একটি সিটি সেন্টারে ও অন্যটি মেনগেট এলাকার একটি পেট্রোল পাম্পে। বর্তমানে অটোর সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। তার বাইরে রয়েছে সিএনজি চালিত শ’পাঁচেক অন্য গাড়ি। কিন্তু বাড়েনি ‘সিএনজি ফিলিং স্টেশন’-এর সংখ্যা। রবিবার মেনগেট এলাকার স্টেশনটি শর্ট সার্কিটের কারণে বন্ধ হয়ে যায়। ফলে, সোমবার থেকে একমাত্র ভরসা সিটি সেন্টারের স্টেশনটি।
এ দিন ভোর থেকে সিটি সেন্টারের পাম্পটির সামনে অটোর লম্বা লাইন পড়ে যায়। ক্রমশ তা গিয়ে পড়ে পাশের জাতীয় সড়কে। কে গ্যাস পাবেন, আর কে পাবেন না তা নিয়ে সংশয়ে ভুগতে থাকেন অটো চালকেরা। মাঝে-মাঝে নিজেদের মধ্যে বিতণ্ডাতেও জড়িয়ে পড়েন তাঁরা। অটোর লাইনের মাঝে পড়ে গ্যাস ভরার সুযোগ পেতে হিমসিম দশা হয় সিএনজি চালিক অন্য নানা গাড়ির মালিক ও চালকদের। সুধীর রাম নামে এক অটোচালক বলেন, “এমনিতেই প্রতি দিন লাইন দিয়ে গ্যাস নিতে হয়। এ দিন পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিয়েছে।” সিএনজি চালিত একটি গাড়ির মালিক শান্তনু সেনশর্মা বলেন, “অটোর লাইন সরিয়ে গাড়িতে গ্যাস ভরতে বেশ মেহনত করতে হয়। এ দিন তো গ্যাসই জুটল না।” সিটি সেন্টারের ওই পেট্রোল পাম্পের মালিক বিশ্বদীপ রায়চৌধুরী বলেন, “সিএনজি থেকে অতি সামান্য কমিশন পাই। সিএনজি নিতে আসা অটোর ভিড়ে আমার পেট্রোল, ডিজেলের গ্রাহক কমে যাচ্ছে। বড় লরি বা ট্রাকও জায়গার অভাবে অনেক সময়ে ঢুকতে পারছে না। আর এ দিন যা হল তা তো বলার নয়!”
আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত অটো চালকদের সংগঠন ‘দুর্গাপুর সিএনজি অপারেটর্স ইউনিয়ন’-এর সহ-সভাপতি শান্তনু সোম বলেন, “অবিলম্বে শহরে আরও কয়েকটি ফিলিং স্টেশন না গড়লে পরিস্থিতির সুরাহা হবে না। গ্যাস সরবরাহকারী সংস্থার কাছে আমরা এ ব্যাপারে একাধিক বার স্মারকলিপি দিয়েছি।” এলাকার প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ সাইদুল হক তৎকালীন কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী টি মইলির কাছে শহরে আরও তিনটি সিএনজি ভরার স্টেশন খোলার আর্জি জানিয়েছিলেন। এ দিন তিনি বলেন, “আমার আর্জি বাস্তবায়িত হলে মানুষকে এত দুর্ভোগ পোহাতে হত না। সেক্ষেত্রে একটি স্টেশন খারাপ হলেও সমস্যা এত বড় আকার নিত না।”
এ দিন বহু অটো সিএনজি ভরার লাইনে দাঁড়িয়ে থাকায় শহরে পরিবহণের সমস্যা তৈরি হয়। অনেক অটোই এক সঙ্গে না চলায় যাত্রীরা বিপাকে পড়েন। সপ্তাহের শুরুর দিনে অটোর জন্য দীর্ঘক্ষণ রাস্তার পাশে অপেক্ষা করতে বাধ্য হন মানুষজন। দুর্ভোগের কারণ জানার পরে অনেক যাত্রীরই দাবি, দুর্গাপুরের মতো শহরে সিএনজি ভরার স্টেশন রয়েছে মাত্র দু’টি, এটা মানা যায় না!
দুর্গাপুরে সিএনজি গ্যাস সরবরাহের দায়িত্বে যে সংস্থা রয়েছে, তারা বরাকর ও বার্নপুরে দামোদরের উপত্যকায় কুয়ো খুঁড়ে ‘কোল বেড মিথেন’ উত্তোলন করে তা সিএনজিতে রূপান্তর করে সরবরাহ করে থাকে। ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন-সহ অন্য রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলির সঙ্গে জাতীয় স্তরের চুক্তির মাধ্যমে তারা এ কাজ করে থাকে। রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থার পাম্পে পয়েন্ট খুলে সেখানে ট্যাঙ্কে করে সিএনজি সরবরাহ করে তারা। বিনিময়ে ওই তেল সংস্থা এবং পাম্পের মালিকের ঘরে ‘কমিশন’ জমা পড়ে। গ্যাস সরবরাহকারী সংস্থার এক আধিকারিক জানান, আপাতত দুর্গাপুরে নতুন একটি ফিলিং স্টেশন খোলার পরিকল্পনা হয়েছে। এ ছাড়া সরাসরি পাইপ লাইনের মাধ্যমে সিএনজি সরবরাহের কথাও ভাবা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে কখন গ্যাসের গাড়ি আছে তার অপেক্ষায় আর থাকতে হবে না। সব সময় সিএনজি পাওয়ার সুযোগ পাবেন গ্রাহকেরা।