পুড়ে যাওয়া বাড়ির সামনে কান্না। উদিত সিংহের তোলা ছবি।
দলনেত্রীর স্পষ্ট নিষেধ রয়েছে, রাজ্যে কোথাও আপাতত বিজয় মিছিল বের করা যাবে না। তবু সেই বিজয় মিছিল থেকেই মত্ত অবস্থায় এক তরুণীকে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা, বাধা পেয়ে সিপিএমের লোকেদের অন্তত তিরিশটি বাড়িতে আগুন লাগানোর অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে।
বর্ধমানের হাটগোবিন্দপুরের কাছে মালকিতা গ্রামে ওই ঘটনায় সোমবার রাত পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি। রবিবার রাতে বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে বলে সিপিএমের তরফে অভিযোগ দায়ের করা হলেও তরুণীর শ্লীলতাহানি বা তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ জানানো হয়নি। তৃণমূলও উল্টে মারধরের অভিযোগ দায়ের করেছে। এ দিন বিশাল বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে যান এসডিপিও (বর্ধমান) অম্লানকুসুম ঘোষ ও বর্ধমান থানার আইসি আব্দুল গফ্ফর। আইসি বলেন, “নির্দিষ্ট করে শ্লীলতাহানির অভিযোগ পাইনি। দু’পক্ষের দায়ের করা মামলা অনুযায়ী তদন্ত হচ্ছে।”
এ দিন বিকেলে স্কুলপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, সার-সার বাড়ি পুড়ে খাক। দমকলকর্মীরা আগুন নেভাতে ব্যস্ত। ছেলেবুড়ো ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে কান্নাকাটি করছেন। পোড়া গোলা থেকে খুঁটে-খুঁটে ধান খুঁজছেন অনেকে। স্থানীয় সিপিএম সমর্থক রঞ্জিত বাগের অভিযোগ, “মিছিলের লোকেরা মত্ত অবস্থায় ছিল। কয়েক জন আমাদের পড়শি একটি মেয়েকে মুখে কাপড় চাপা দিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পাড়ার লোকেরা রুখে দাঁড়ান। খেপে উঠে ওরা বাড়ি-বাড়ি আগুন লাগাতে শুরু করে।”
গ্রামের সুচাঁদ পাত্রের অভিযোগ, “সন্ধ্যা নামার পরে ওই বিজয় মিছিল বেরিয়েছিল। আচমকা প্রায় দেড়শো জন একের পর এক বাড়িতে আগুন দিতে থাকে। সারা রাত ছেলেমেয়ে নিয়ে মাঠে পড়ে ছিলাম।” এলাকার গোপাল মাঝি, জয়দেব মালিক, লালন দাসেরা জানান, “কয়েক ঘন্টা ধরে তাণ্ডব চালানো হয়। বাড়ি পোড়ানো ছাড়াও টাকা-পয়সা, দামি জিনিসপত্র লুঠ হয়েছে।”
জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা অবশ্য দাবি করেন, দুই তৃণমূল সমর্থককে সিপিএম সমর্থকেরা মারধর করে। তার ফলেই আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটে। স্থানীয় তৃণমূল সমর্থকেরাও তিনটি বাড়ি ও দু’টি খড়ের পালুইয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। সিপিএমের বর্ধমান জেলা সম্পাদক অমল হালদারের অভিযোগ, “গোটা পাড়া পুড়িয়ে দেওয়া হলেও পুলিশ সময় মতো ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ।”
পুলিশের কাছে তরুণীকে হেনস্থার অভিযোগ জানানো হল না কেন? সিপিএমের বর্ধমান সদর জোনাল সম্পাদক মেহবুব আলমের দাবি, “মেয়েটির নাম দিয়ে অভিযোগ করলে সে আরও বিপদে পড়বে, এই আশঙ্কাতেই আমরা নির্দিষ্ট অভিযোগ করিনি।” তৃণমূলের বর্ধমান জেলা সভাপতি (গ্রামীণ) স্বপন দেবনাথ অবশ্য দাবি করেন, “যাঁদের বাড়ি পুড়েছে, তাঁরা হালে আমাদের সমর্থক হয়েছিলেন। সেই রাগে সিপিএমই বাড়িতে আগুন ধরিয়েছে।”
কিন্তু নেত্রীর নিষেধ না মেনে বিজয় মিছিল হল কেন? তৃণমূলের বর্ধমান জেলা নেতা উত্তম সেনগুপ্তের দাবি, “ছোটখাটো এই সব মিছিল স্থানীয় মানুষই বের করছেন। স্বতঃস্ফূর্ত আবেগ। আমরা তাঁদের ঠেকাব কী করে? তবে শ্লীলতাহানি করা হয়েছে এমন খবর জানি না।”