মেলায় ভিড়।—নিজস্ব চিত্র।
সোজা রথ থেকেই প্রতি সন্ধ্যায় একনাগাড়ে বৃষ্টি নেমেছিল। তারপর থেকে টানা মুখ ভার ছিল আকাশের। ফলে রাজীব গাঁধী স্মারক ময়দানে অনুষ্ঠিত দুর্গাপুরের রথের মেলায় ভিড়টা ঠিক চাক বাঁধছিল না। ইচ্ছে থাকলেও অনেকেও বাড়ির বাইরে বেরোতে পারেননি। অবশেষে ছবিটা বদলাল রবিবার। একে ছুটির দিন, তার উপর এ দিন আকাশও ছিল পরিষ্কার। তাই এ দিন কার্যত তিল ধারণের জায়গা ছিল না মেলা। মুখে হাসি ফুটেছে ব্যবসায়ীদেরও।
তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে এই রথযাত্রা উত্সবের আয়োজন করে আসছে ‘রথযাত্রা উত্সব ও সমাজ কল্যাণ সমিতি’ নামে এক সংস্থা। উদ্যোক্তারা জানান, রাজেন্দ্র প্রসাদ রোডে রয়েছে জগন্নাথের মন্দির। সেখান থেকে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রার মূর্তি ধাতব রথে চড়িয়ে নিয়ে আসা হয় রাজীব গাঁধী ময়দানে। রথের দিন থেকে উল্টোরথ পর্যন্ত সাতদিন ধরে চলে মেলা। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে ব্যবসায়ীরা পসরা সাজিয়ে বসেছেন মেলায়। নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী থেকে ইলেকট্রনিক্স, খাবারের দোকান, জামাকাপড়ের দোকান, বাঁশ- বেতের তৈরি হস্তশিল্পের জিনিস- মেলায় মিলছে সবকিছুই। সঙ্গে চিরাচরিত নাগরদোলা, সার্কাস, ম্যাজিকের অনুষ্ঠান তো রয়েছেই। দুর্গাপুর তো বটেই, বর্ধমান শহর, পানাগড়, অন্ডাল থেকেও বাসিন্দারা ভীড় জমাচ্ছেন এখানে।
এই মেলার অন্যতম আকর্ষণ হল বইমেলা। সাধারণ পসরার পাশাপাশি বিকোচ্ছে নতুন ও পুরনো বই। মিলছে দুষ্প্রাপ্য বই ফলে মেলায় বইপ্রেমীদের ভিড়ও চোখে পড়ার মত। প্রতি সন্ধ্যায় জমে উঠছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। মেলায় ঘুরতে আসা মানুষজন বইমেলা প্রাঙ্গণে কিছুক্ষণ অনুষ্ঠান প্রাঙ্গনে জিরিয়ে নিয়ে আবার নতুন উদ্যোমে মেলায় ঘুরতে শুরু করে দিচ্ছেন।
মেলায় আসা মানুষজন যাতে বিপাকে না পড়েন সেইজন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিয়েছেন উদ্যোক্তারা। মেলার মোড়ে মোড়ে রয়েছে বেসরকারি নিরাপত্তা রক্ষী। এছাড়া টহলদার পুলিশও রয়েছে। দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা কর্তৃপক্ষের তরফে মেডিক্যাল ক্যাম্পের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দুর্গাপুর ব্লাইন্ড রিলিফ সোসাইটি’র আয়োজন করেছে চক্ষুদান বিষয়ক সচেতনতা শিবির।
মেলায় ঘুরতে আসা মুচিপাড়া এলাকার স্বপন ঘোষাল বা নন-কোম্পানির অশোকা মুখোপাধ্যায় বলেন, “প্রতি বছর মেলায় আসি। এত ভিড়ের মাঝেও কোনও বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটে না। তাই বার বার আসতে ইচ্ছে করে।”