বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে পুলিশের পাহারা (বাঁ দিকে)। দুপুরে গেটের বাইরে জটলা। —নিজস্ব চিত্র।
যাদবপুরে ছাত্রদের উপরে পুলিশি তাণ্ডবের প্রতিবাদে মানববন্ধনে যোগ দেওয়া বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিকদের হুমকি দেওয়া ও নিগ্রহের অভিযোগ উঠল তৃণমূল প্রভাবিত কর্মচারী ইউনিয়ন শিক্ষাবন্ধু সমিতির বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজবাটি ক্যাম্পাসে মানববন্ধন কর্মসূচী হয়। তখন গেটের বাইরে থেকে হুমকি দিলেও পরে ক্যাম্পাসে ঢুকে বিভিন্ন বিভাগে আধিকারিকদের ঘরে গিয়ে হুমকি দেওয়া ও নিগ্রহের চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ। রাত ৮টা নাগাদ শিক্ষাবন্ধু সমিতির চার নেতার বিরুদ্ধে বর্ধমান থানায় অভিযোগ দায়ের করেন বামপন্থী কর্মচারী ইউনিয়নের সম্পাদক বুদ্ধদেব চক্রবর্তী। পুলিশ অবশ্য রাত পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করেনি।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দুপুর দেড়টা নাগাদ অরাজনৈতিক ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিক, অধ্যাপক, অশিক্ষক কর্মী ও পড়ুয়ারা দশ মিনিটের ওই কর্মসূচি করেন। দেড়শো জনের ওই সভায় বামপন্থী কর্মীরাও হাজির ছিলেন। অভিযোগ, মানববন্ধন শুরু হতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তর ফটকের সামনে তৃণমূল প্রভাবিত কর্মচারী ইউনিয়ন শিক্ষাবন্ধু সমিতির নেতা সীতারাম মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে জনা কুড়ি ব্যক্তি জটলা করেন। সেখান থেকেই মানববন্ধনের বিরুদ্ধে হুমকি দিতে শুরু করেন তাঁরা। ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধনে যোগ দিতে ঢুকছিলেন এক পড়ুয়া ও আরেক কর্মী। অভিযোগ, তাঁদেরও ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়। বর্ধমান থানার আইসি আব্দুল গফ্ফরের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী এসে জটলকারীদের সরিয়েও দেয়। পরে কর্মসূচি শেষ হতে পুলিশের ভিড়ও হালকা হয়। অভিযোগ, সীতারাম মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে জনা কুড়ি কর্মী ও বহিরাগত ক্যাম্পাসে ঢুকে বিভিন্ন বিভাগে আধিকারিকদের ঘরে গিয়ে মানববন্ধনে যোগ দেওয়ায় দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। তাঁদের নিগ্রহের চেষ্টা করা হয় বলেও অভিযোগ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার দেবমাল্য ঘোষের অভিযোগ, “আমরা অরাজনৈতিক ভাবে মানববন্ধন আয়োজন করেছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকেই ছিলেন। কর্মসূচি শেষে শিক্ষাবন্ধু সমিতির নেতা সীতারাম মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে কয়েকজন আমাদের হুমকি দেন। নিগ্রহের চেষ্টাও করা হয়। আর এক আধিকারিক নাজমুদ্দিন বিশ্বাসকেও হেনস্থা করা হয়েছে।” দেবমাল্যবাবুর দাবি, “বিকেলের দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল। ভয়ে আমরা হুমকির প্রতিবাদ করতে পারিনি।” সাধনা মণ্ডল নামে এক আধিকারিককেও নিগ্রহ ও গালিগালাজ করা হয়েছে বলেও তাঁর দাবি। মানববন্ধন কর্মসূচি যিনি ডেকেছিলেন সেই শুভপ্রসাদ নন্দী মজুমদার (বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিক ও শহরের বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী) বলেন, “যাদবপুর-কাণ্ডের প্রতিবাদে রাজ্য জুড়েই প্রতিবাদ চলছে। আমরাও শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত। মানববন্ধনে অন্যায়ের কী আছে? তৃণমূলপন্থী কর্মচারি ইউনিয়নের নেতাদের হুমকি দেওয়ার ঘটনা গণতান্ত্রিক পরিবেশকে নষ্ট করছে।” ওয়েবকুটার বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখার তরফেও জানানো হয়েছে, এ দিন মানববন্ধনে যোগ দিতে ইচ্ছুক ছাত্রদের বহিরাগত তৃণমূল কর্মীরা বাধা দেন। অধ্যাপকদেরও কটুক্তি করা হয়। সভা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে ঢুকে তৃণমূল সমর্থিত কর্মচারী ইউনিয়নের লোকজন হুমকি দেয় বলেও তাদের অভিযোগ।
যদিও অভিযুক্ত সীতারামবাবুর দাবি, “মানববন্ধনের নামে এক শ্রেণির কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চাইছেন। অরাজনৈতিক বলে কর্মসূচি ডেকে বামপন্থীরা পঠন-পাঠনের পরিবেশ নষ্ট করছে। আমরা কোনও নিগ্রহ হুমকি দিইনি। তবে কয়েকজনকে সতর্ক করেছি, যাতে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট না হয়।” পরে বর্ধমান থানার আইসি বলেন, “নিগৃহীতদের তরফে অভিযোগ পেয়েছি। তাতে চারজনের নাম রয়েছে। তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।”
বর্ধমানের এসডিপিও অম্লানকুসুম ঘোষের আশ্বাস, “বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে নজর রাখছি। ক্যাম্পাসে কোনও অপ্রীতিকর এড়াতে প্রচুর পুলিশ মোয়াতেন করা হয়েছে।”