ছবি: সব্যসাচী ইসলাম।
বহিরাগতকে প্রার্থী করায় শুরুতে খানিকটা ক্ষুণ্ণ হয়েছিলেন দলের স্থানীয় কর্মী-সমর্থকেরা। সে সব কাটিয়ে উঠে পরে অবশ্য প্রচারে প্রার্থীর সঙ্গে নেমে পড়েছেন ফরওয়ার্ড ব্লক তথা বাম কর্মীরা।
নাম ঘোষণার পরপর প্রচার শুরু করেছিলেন প্রার্থী, সঙ্গে কর্মীরাও। কিন্তু তার পরে ভাটা। তৃণমূল প্রার্থীও ভুগতে শুরু করেন দোনামনায়।
এ বার অবশ্য প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়বে তারা, গলসি বিধানসভা উপ-নির্বাচনের জন্য প্রার্থীরা মনোনয়ন তোলা-জমার কাজে সোমবার দুর্গাপুরে এসে এমনটাই জানালেন সব দলের নেতা-কর্মীরাই। দুর্গাপুর মহকুমাশাসকের অফিসে মনোনয়ন দাখিল করেন তৃণমূলের গৌর মণ্ডল, ফরওয়ার্ড ব্লকের নন্দলাল পণ্ডিত এবং কংগ্রেসের স্বপন মালি। মনোনয়ন তুললেন বিজেপি প্রার্থী সুন্দরলাল পাসোয়ান।
কাঁকসা ব্লকের কাঁকসা, ত্রিলোকচন্দ্রপুর, বিদবিহার ও বনকাটিএই চারটি পঞ্চায়েত এবং গলসির ১১টি পঞ্চায়েত এলাকা নিয়ে গলসি বিধানসভা। ২০১১ সালে ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী সুনীল মণ্ডল প্রায় ১১ হাজার ভোটে হারান তৃণমূল প্রার্থীকে। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারিতে সুনীলবাবু যোগ দেন তৃণমূলে। তিনি এ বার বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী। উপ-নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন কাঁকসা হাইস্কুলে সুনীলবাবুর সহকর্মী তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠনের কার্যকরি সদস্য গৌরচন্দ্র মণ্ডল। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত গৌরবাবুর হয়ে দলের সবাইকে সর্বাত্মক প্রচারে নামতে দেখা যায়নি। প্রথম দিকে কিছুটা প্রচার হলেও মাঝপথে তা একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। দলের একাংশ পরিচিত কোনও নেতাকে প্রার্থী হিসেবে চেয়েছিলেন। গৌরবাবুকে প্রার্থী করায় কিছুটা ক্ষুব্ধ হন ওই কর্মীরা। কাঁকসার বাসিন্দা গৌরবাবু এক সময়ে প্রার্থী না হওয়ার কথাও ভাবতে শুরু করেন। যদিও এ সব কথা ঠিক নয় দাবি করে দলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি অপূর্ব মুখোপাধ্যায় বলেন, “উনি শারীরিক কারণে এক সময়ে দোটানায় ছিলেন। আমরা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে বলি। এখন আর কোনও সমস্যা নেই।” এ দিন প্রার্থীর মনোনয়ন দাখিলের পরে কাঁকসা ব্লক যুব সভাপতি পল্লব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “রেকর্ড ব্যবধানে জিতবেন আমাদের প্রার্থী।”
ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী নন্দলাল পণ্ডিত আবার ‘বহিরাগত’ বলে দলের একাংশের ক্ষোভ ছিল। তাঁর বাড়ি বর্ধমানের শক্তিগড়ের কাছে সোহারি গ্রামে। দলে তিনি প্রবীণ মুখ, জেলা কমিটির সদস্য। যুব লিগ ও অগ্রগামী কিষানসভার সঙ্গেও যুক্ত। দীর্ঘদিন বর্ধমান ২ পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষও ছিলেন। দলীয় কাজকর্মে তিনি বহু বার গলসি এসেছেন। কিন্তু স্থানীয় নেতা-কর্মীদের একাংশ দাবি করেছিলেন, স্থানীয় কেউ প্রার্থী হলেই সুবিধা হত। সব সময়ে হাতের কাছে পাওয়া যেত। তবে প্রাথমিক সমস্যা কাটিয়ে প্রচারে তৎপর হয় দলের নেতা-কর্মীরা। কাঁকসার চারটি পঞ্চায়েত এলাকায় ফরওয়ার্ড ব্লকের সংগঠন তেমন জোরালো নয়। শরিক সিপিএমের তরফে অবশ্য ইতিমধ্যে সেখানে বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভার প্রার্থী সাইদুল হকের পাশাপাশি নন্দলালবাবুর হয়েও দেওয়াল লিখন সেরে ফেলা হয়েছে। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য বীরেশ্বর মণ্ডলের দাবি, প্রচারে তৃণমূলের থেকে তাঁদের প্রার্থীই এগিয়ে। সুস্থ নির্বাচন হলে তাঁদের প্রার্থীই জিতবেন। মনোনয়ন দাখিল শেষে নন্দলালবাবু বলেন, “সবাই আমার পাশে আছেন। তাই জয় নিয়ে চিন্তিত নই।”
কংগ্রেস প্রার্থী স্বপন মালি বর্ধমানের মিঠাপুকুর ষষ্ঠীতলার বাসিন্দা। জেলা যুব কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। স্বপনবাবু যে প্রার্থী হয়েছেন, প্রচারের অভাবে গলসি ও কাঁকসার অনেকে জানতেই পারেননি। এ দিন মনোনয়ন দাখিলের সময়ে তাঁর প্রার্থীপদের প্রস্তাবক ছিলেন দলের বিধানসভা নির্বাচন প্রচার কমিটির চেয়ারম্যান তথা কাঁকসার কংগ্রেস নেতা স্বপন ভট্টাচার্য। তিনি জানান, লোকসভার প্রার্থীপদ ঘোষণার অপেক্ষায় ছিল দল। তা হয়ে গিয়েছে। এ বার যৌথ ভাবে প্রচার শুরু হবে। তিনি বলেন, “ইতিমধ্যে গলসির কিছু অংশে দেওয়াল লিখন সারা হয়েছে। মানকর ও পানাগড়ে মিছিল হয়েছে। ১০ এপ্রিল বুদবুদে দুই প্রার্থীকে নিয়ে মিছিল হবে।” বিজেপি প্রার্থী সুন্দরলাল পাসোয়ান দলের লোকসভার প্রার্র্থী দেবশ্রী চৌধুরীর সঙ্গে গলসি ও পানাগড়ের কিছু এলাকায় যৌথ ভাবে পদযাত্রা সেরেছেন ইতিমধ্যেই। তবে তাঁর হয়ে দেওয়াল লিখন নজরে আসেনি সে ভাবে। তিনি অবশ্য বলেন, “পাড়ায়-পাড়ায় ঘুরছি। অনেকেই আমাকে চেনেন। আশা করি, অসুবিধা হবে না।”
হাতে আর সপ্তাহ তিনেক। তাল ঠুকতে শুরু করেছেন সকলেই।