স্বপন দেবনাথ। —ফাইল চিত্র।
দলের কর্মীদের বুথ দখল ও ছাপ্পা ভোট দিতে উৎসাহ দিচ্ছেন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ, এমনই অভিযোগ তুলল বামফ্রন্ট। বৃহস্পতিবার জেলাশাসক সৌমিত্র মোহনের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে জেলা বামফ্রন্টের নেতারা অভিযোগ করেন, স্বপনবাবু দলের কর্মীদের বলেছেন, আসল ভোট হবে বিকেল তিনটে থেকে পাঁচটা। এ থেকেই প্রমাণিত হচ্ছে ভোটের দিন জেলার সর্বত্র বুথ দখল করে ভোট দেওয়া হবে।
তাঁদের আরও অভিযোগ, তৃণমূল ইতিমধ্যেই সন্ত্রাসের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। বাম প্রার্থীদের ভোটের প্রচারেও বাধা দেওয়া হচ্ছে। তবে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্বপন দেবনাথ। তাঁর দাবি, “ওরা সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ করেছে। পারলে অভিযোগ প্রমাণ করুক। আমি ওদের চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি। যদি ওরা এই অভিযোগ প্রমাণ না করতে পারে তাহলে কিন্তু আমিই নির্বাচন কমিশনে ওদের বিরুদ্ধে উত্তেজনা ছড়ানোর অভিযোগ আনব।”
জেলাশাসকের কাছে পেশ করা ওই স্মারকলিপিতে সই করেছেন সিপিএমের দুই, এবং ফরওয়ার্ড ব্লক, আরএসপি ও সিপিআইয়ের একজন করে নেতা। সাক্ষকরীদের অন্যতম সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক মণ্ডল শুক্রবার বলেন, “স্বপনবাবু জেলার যেখানেই কর্মিসভা করছেন, সেখানেই নানা ধরনের উস্কানিমূলক কথাবর্তা বলছেন। তিনি বলছেন, ‘পঞ্চায়েতে, পুরসভায় যেমন করে ভোট করিয়েছিলেন আপনারা, তেমন করেই ভোট হবে।’ দলের কর্মীদের তিনি বলছেন, ‘আপনারা দুশ্চিন্তা করবেন না, ভয় পাবেন না। আমরা আমাদের মত করে ভোট করাব। নির্বাচন কমিশনকে ভয় পাবেন না।’ ফলে সর্বত্রই আমরা নির্বাচনের দিন রিগিংয়ের আশঙ্কা করছি।” পুলিশ প্রশাসনের কাছে বারবার অভিযোগ জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি বলে তাঁর দাবি।
বামেদের আরও অভিযোগ, জেলার গ্রামীণ এলাকা থেকে শিল্পাঞ্চল, পুলিশের মদতে সর্বত্র সন্ত্রাস চালাচ্ছে তৃণমূল। শিল্পাঞ্চলে ঠিক কী ঘটছে, তার উদাহরণ দিয়ে স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, গত রবিবার আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের রানিগঞ্জ এলাকায় বামফ্রন্টের মিছিল বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। বামেদের দাবি, রানিগঞ্জ থেকে কালিপাহাড়ি পর্যন্ত সিপিএম প্রার্থীর সমর্থনে বের হওয়া মিছিলে দামড়ার কাছে তৃণমূলের সশস্ত্র সমাজবিরোধীরা পথ আটকায়। মারমুখী তৃণমূল সমর্থকদের বিরুদ্ধে পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলেও অভিযোগ। উল্টে সিপিএমের মিছিলটিকেই অন্য রাস্তায় ঘুরিয়ে দেয়। বামেদের দাবি, এ ঘটনা থেকেই প্রমাণিত যে শাসকদল পুলিশকে ব্যবহার করে গণতন্ত্রের কন্ঠরোধ করছে। সমাজবিরোধীদের তৃণমূলের পতাকার তলায় জড়ো করা হচ্ছে।
জেলাশাসক তথা জেলা নির্বাচন আধিকারিক সৌমিত্র মোহন বলেন, “সবে ওই অভিযোগগুলি পেয়েছি। ঘটনাগুলি খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে জেলা প্রশাসনের নির্বাচন বিধি রক্ষা দফতরকে। ওই রিপোর্ট পাওয়ার পরেই ঠিক হবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
রাজ্যের আরেক মন্ত্রী মলয় ঘটক বলেন, “সিপিএম আসলে নিজেরাই অশান্তি ছড়াচ্ছে। সেটা যাতে বড় আকার না নেয়, দামড়ায় তাই করতে গিয়েছিল পুলিশ। সেটাকেই ওরা আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে।”