মঙ্গলকোটে ফের অশান্তি, গ্রেফতার সাত

সিপিএম-তৃণমূল গোলমাল চলছেই মঙ্গলকোটে। আগের রাতে সংঘর্ষ-বোমাবাজির অভিযোগের পরে মঙ্গলবারও গোলমাল বাধল দু’দলের লোকজনের মধ্যে। মারধর, আগুন লাগানো, অস্ত্র রাখার মতো নানা অভিযোগে মঙ্গলকোট থেকে পুলিশ সাত জনকে গ্রেফতার করেছে। বুধবার সন্ধ্যায় কাটোয়া থেকেও বেশ কিছু অস্ত্র-সহ দু’জনকে ধরে পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কাটোয়া শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৪ ০০:৪৮
Share:

উদ্ধার হওয়া অস্ত্র। —নিজস্ব চিত্র।

সিপিএম-তৃণমূল গোলমাল চলছেই মঙ্গলকোটে। আগের রাতে সংঘর্ষ-বোমাবাজির অভিযোগের পরে মঙ্গলবারও গোলমাল বাধল দু’দলের লোকজনের মধ্যে। মারধর, আগুন লাগানো, অস্ত্র রাখার মতো নানা অভিযোগে মঙ্গলকোট থেকে পুলিশ সাত জনকে গ্রেফতার করেছে। বুধবার সন্ধ্যায় কাটোয়া থেকেও বেশ কিছু অস্ত্র-সহ দু’জনকে ধরে পুলিশ।

Advertisement

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার বিকেলে মঙ্গলকোটের নিমতলা বাসস্টপের কাছে সিপিএম-তৃণমূল সংঘর্ষ হয়। ওই ঘটনাতে সিপিএমের দুই সমর্থক কাজি আব্দুল মজিদ ও হিরন শেখ ওরফে লালকে পুলিশ গ্রেফতার করে। সালন্দা গ্রামের বাসিন্দা, তৃণমূল সমর্থক শেখ নুরুল ইসলাম পুলিশে অভিযোগ করেন, বাড়ি থেকে জয়পুর বাসস্টপে যাওয়ার পথে নিমতলা বাসস্টপে তিনি দেখেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পতাকা ছিঁড়ছে সিপিএমের লোকেরা। তিনি বাধা দিতে গেলে গোলমাল বাধে। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। পরে কাজী আব্দুল মজিদ ও হিরন শেখ নামে দুই সিপিএম সমর্থককে পুলিশ গ্রেফতার করে।

সোমবার বিকেলে গোতিষ্ঠা গ্রামে বাসস্টপে তৃণমূল অফিসে আগুন লাগানোর অভিযোগে পুলিশ মীরপুরের দিলীপ রায় ওরফে বাবু এবং সুশীল মাঝি নামে দু’জনকে ধরেছে। তৃণমূল সমর্থক প্রদীপ সিংহরায় পুলিশে অভিযোগ করেন, সে দিন বিকেলে সিউর গ্রাম থেকে মিছিল করে আসার সময়ে গোতিষ্ঠা গ্রামের কয়েক জনকে ‘আগুন আগুন’ বলে চিৎকার করতে শোনেন। বাসস্টপে গিয়ে দেখেন, খলপা ও খড়ের ছাউনি দেওয়া অফিসটি জ্বলছে। তিনি সিপিএমের ভাগীরথী-অজয় জোনাল সদস্য সৈয়দ বদরুদ্দোজ্জা-সহ ৯ জনের নামে অভিযোগ করেন। সিপিএমের পাল্টা অভিযোগ, তাদের সমর্থক হিরাই চৌধুরী ও তাঁর ছেলে সফিকুলকে সে দিন বিকেলে তৃণমূলের কয়েক জন মারধর করে। লোকজন ছুটে এলে ওই দুষ্কৃতীরা পালায়। হিরাই হাসপাতালে ভর্তি। সফিকুল ১০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। পুলিশ সাহামত শেখ নামে এক জনকে ধরেছে। সিপিএম নেতা সৈয়দ বদরুদ্দোজ্জার দাবি, “আমাদের কর্মীদের মারধরের পরে নিজেদের অফিসে আগুন লাগিয়ে মিথ্যা অভিযোগ করছে তৃণমূল।”

Advertisement

বুধবার ভোরে মঙ্গলকোটের কল্যাণপুর মোড় থেকে দু’টি পাইপগান ও আট রাউন্ড কার্তুজ-সহ বেটন শেখ নামে এক জনকে ধরে পুলিশ। ঝিলেরা গ্রামের বাসিন্দা বেটন গত বছর ৩১ অগস্ট তৃণমূলের গোষ্ঠী-সংঘর্ষে যুক্ত ছিল বলে অভিযোগ। সন্ধ্যায় বর্ধমান-কাটোয়া রোডে জাজিগ্রাম থেকে হরিপুর যাওয়ার রাস্তায় বেশ কিছু অস্ত্র উদ্ধার হয়। বর্ধমান থেকে টম্যাটোর ব্যাগে অস্ত্রগুলি আনা হচ্ছিল বলে পুলিশ জানায়। গ্রেফতার করা হয় জয়নাল শেখ ও মিলন রায় নামে দু’জনকে।

মাস কয়েক আগে পঞ্চায়েত ভোটে এই মঙ্গলকোটে বেশ কিছু জায়গায় প্রার্থী দিতে পারেনি সিপিএম। অনেক বুথে এজেন্ট বসাতে পারেনি। গত বিধানসভা ভোটে মঙ্গলকোটে ১২৮ ভোটে জিতলেও তার পর থেকে তৃণমূলের সন্ত্রাসে তাদের কর্মীরা এলাকায় থাকতে পারছেন না বলে বারবার অভিযোগ তুলেছেন সিপিএম নেতারা। দলের শাখা সংগঠনের কার্যালয় বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। মঙ্গলকোট, বক্সিনগর-সহ বেশ কয়েকটি গ্রামে তৃণমূলের ‘সন্ত্রাসে’ তাঁদের কর্মী-সমর্থকেরা এলাকাছাড়া বলে নির্বাচন কমিশনের কাছেও অভিযোগ করেছেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমল হালদার। এই পরিস্থিতিতে এখন গোলমাল পাকানোর আঙুল উঠছে সিপিএমের দিকেই। দলের ভাগীরথী-অজয় জোনাল সম্পাদক দুর্যোধন সরের অবশ্য দাবি, “আমাদের কর্মী-সমর্থকেরা যাতে বাইরে বেরিয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি নিতে না পারে, সে জন্য তৃণমূল একের পর এক মিথ্যা অভিযোগ করছে। লোকাল থেকে জোনাল, সব স্তরের নেতাদের মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হচ্ছে।”

তবে সিপিএম নেতারা জানান, আগের চেয়ে পরিস্থিতি পাল্টেছে। তাই দলের কর্মীরা আর ঘরে বসে না থেকে দেওয়াল লিখন, প্রচার শুরু করেছে। পরিস্থিতি পাল্টানোর কারণ কী? সিপিএমের ভাগীরথী-অজয় জোনালের এক সদসের ব্যাখ্যা, “পশ্চিম মঙ্গলকোট লাগোয়া এলাকা কোনও না কোনও ‘দাদা’ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিল। তুলনায় পূর্ব মঙ্গলকোট শান্ত। বিধানসভা ভোটের সময়ে পশ্চিম মঙ্গলকোট নিয়ন্ত্রণ করত এক জন। সে বীরভূমে চলে যাওয়ার পরে পঞ্চায়েত ভোট নিয়ন্ত্রণ করে আর এক জন। সে এখন জেলে। এই অবস্থায় আমাদের কর্মীরা সাহস পেয়েছে। তাই গত লোকসভা ভোটের পরে মানুষ যে সব জায়গায় লাল পতাকা দেখেননি, এ বার সেখানে পতাকা লাগাচ্ছেন আমাদের কর্মীরা।” তৃণমূলের মঙ্গলকোট ব্লক সভাপতি অপূর্ব চৌধুরী অবশ্য এ সব দাবি মানতে নারাজ। তাঁর পাল্টা দাবি, “আমরা চাই না মঙ্গলকোটে আগের পরিস্থিতি ফিরুক। তাই আমাদের কর্মী-সমর্থকেরা বিরোধীদের শত প্ররোচনা সত্ত্বেও কিছু বলছেন না। রাতের অন্ধকারে আমাদের কর্মীদের একা পেয়ে মারধর করা হচ্ছে।”

জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “মঙ্গলকোট ফের রাজনৈতিক সংঘর্ষে অশান্ত হবে, এই আশঙ্কা আমাদেরও রয়েছে। তাই দাগী ধৃতদের আদালতে পাঠিয়ে পরিষ্কার জানানো হচ্ছে, ওই সব দুষ্কৃতীরা ভোটের আগে জামিন পেলে এলাকায় গোলমাল পাকাবে। আমরা গোলমাল ঠেকাতে প্রস্তুত।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement