আটকানো হচ্ছে গাড়ি। দুর্গাপুরের ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে বৃহস্পতিবার সকালে তোলা নিজস্ব চিত্র।
বর্জ্য ফেলায় দূষণ ছড়াচ্ছে এলাকায়। এই অভিযোগে বর্জ্য বোঝাই পুরসভার গাড়ি আটকে দিলেন এলাকার মহিলারা।
দুর্গাপুর পুরসভার ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের একটি বেসরকারি ওষুধ কারখানার পিছনের ফাঁকা অংশে বৃহস্পতিবার বর্জ্য ফেলায় বাধা দেন স্থানীয় বাসিন্দারা, যাঁদের পুরোভাগে ছিলেন মহিলারাই। তাঁরা সাফ জানিয়ে দেন, আর নয়। ফলে, আটকে যায় পুরসভার প্রায় কুড়িটি বর্জ্য বোঝাই গাড়ি। শেষ পর্যন্ত পুরসভার লোকজন সেখানে যান। কোনও রকমে এ দিনের জন্য আবর্জনা ফেলার ‘অনুমতি’ জোগাড় করে গাড়িগুলি খালি করার ব্যবস্থা করেন তাঁরা। কিন্তু আজ, শুক্রবার থেকে সেখানে আর আবর্জনা ফেলা যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন স্থানীয় মহিলারা।
শঙ্করপুরে আধুনিক কঠিন বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র চালু হয় ২০১০ সালের অক্টোবরে। কেন্দ্রীয় জওহরলাল নেহরু ন্যাশনাল আরবান রিনিউয়াল মিশন (জেএনএনইউআরএম) ও একটি বেসরকারি সংস্থার যৌথ লগ্নিতে। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে সাময়িক ভাবে বন্ধ হয়ে যায় কেন্দ্রটি। বেসরকারি সংস্থার অভিযোগ ছিল, যেখানে দৈনিক তিনশো মেট্রিক টন আবর্জনা দরকার, সেখানে পুরসভা একশো মেট্রিক টনের বেশি পাঠাতে পারে না। পুরসভা তা বাড়ানোর চেষ্টা করবে, এমন আশ্বাস পাওয়ার পরে ফের সেটি চালু হয়। পরের দিকে ঠিকাকর্মীরা নিয়মিত বেতন না পাওয়ার অভিযোগ তোলেন। এ দিকে, লক্ষ-লক্ষ টাকা বিদ্যুতের বিল বাকি পড়তে থাকে। শেষে ২০১৩ সালের ২০ জুন ফের বন্ধ হয়ে যায় কেন্দ্রটি। ৬ জুলাই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় দুর্গাপুর প্রজেক্টস লিমিটেড (ডিপিএল)। তখন থেকে পাকাপাকি ভাবে বন্ধ কেন্দ্রটি। মাঝে ১৫ এপ্রিল সেটি খোলার উদ্যোগ হয়েছিল। কিন্তু ২৫ এপ্রিল আগুন লেগে যাওয়ায় সেই চেষ্টাও বিফল হয়। আপাতত সেই কেন্দ্র বন্ধই।
বর্জ্য ফেলার জায়গা না পেয়ে পুরসভা বেছে নেয় ভগৎ সিংহ স্টেডিয়ামের সম্প্রসারিত অংশকে। কিন্তু বাসিন্দাদের তরফে তার তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়। তার পর থেকে পুরসভা বর্জ্য ঢালার জন্য বেছে নেয় ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের একটি বেসরকারি ওষুধ কারখানা ও বর্ধমান-আসানসোল রেললাইনের মাঝের ফাঁকা অংশটি। বাসিন্দারা বারবার আপত্তি তুলেছেন। কিন্তু তা ধোপে টেকেনি। বৃহস্পতিবার সকালে বর্জ্য বোঝাই গাড়ি আসতে দেখে বেরিয়ে আসেন রাতুরিয়া হাউসিং কলোনির মহিলারা। গাড়িগুলি তাঁরা আটকাতে শুরু করেন। একে-একে দাঁড়িয়ে যায় প্রায় কুড়িটি গাড়ি। বেরিয়ে আসেন পুরুষেরাও। স্থানীয় বধূ শান্তা গোস্বামী, চৈতালি নায়েকরা বলেন, “বৃষ্টির জল আবর্জনায় পড়ে দুর্গন্ধে ভেসে যাচ্ছে চারপাশ। তা ছাড়া তামলা নালা উপচে গেলে আবর্জনা ভেসে ঢুকবে হাউসিং কলোনির ভিতরে। এ ভাবে যেখানে-সেখানে আবর্জনা ফেলার নিয়ম আছে না কি?”
পরিস্থিতি বেগতিক দেখে পুরসভার লোকজন ঘটনাস্থলে যান। এ দিনের মতো বর্জ্য ঢালার অনুরোধ করেন তাঁরা। কিন্তু মহিলারা অনড় ছিলেন। শেষ পর্যন্ত গাড়ি খালি না করা গেলে নতুন আবর্জনা কী ভাবে সরানো যাবে, সেই সমস্যার কথা বিচার করে এ দিনের মতো বর্জ্য ঢালার কথা মেনে নেন তাঁরা।
কিন্তু এর পরে কী হবে? নির্দিষ্ট কোনও সমাধানের কথা শোনাতে পারেনি প্রশাসনের কোনও তরফই। আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ইসিএলের কোনও পরিত্যক্ত খাদান পাওয়া যায় কি না, সে নিয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে।”